1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৫৩ পূর্বাহ্ন

আগ্রহ

  • সময় শনিবার, ৬ মার্চ, ২০২১
  • ১১৯৯ বার দেখা হয়েছে

আগ্রহের বাস আমাদের মনে। আর মন যেমন ধরা-ছোঁয়া যায় না। তাই আগ্রহও দেখা যায় না, ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না। তারপরও প্রায় সবাই আমরা শুনেছি যে, ‌‘তোমার তো এই ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখছি না’? হতে পারে সেটা পড়ার ক্ষেত্রে, কোথাও যাওয়ার ক্ষেত্রে বা কোনো কাজ করার ক্ষেত্রে। আসলে আগ্রহকে দেখা যায় না তবে অনুভব করা যায় কাজের মধ্য দিয়ে।

এই বিষয়টি নিয়ে প্রোগামের প্রথম পর্বে আলোকপাত করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুরশীদা খানম। তিনি তার আলোচনায় বলেন, আমাদের কাজ, আমাদের কথা, আমাদেরর আচরণ, আমাদেরর ছুটোছুটির মধ্য দিয়েই বোঝা যায় আমাদের আগ্রহ কোথায় আছে, আর আগ্রহ কোথায় নেই। কারো যদি কোনো বিষয়ের প্রতি আগ্রহ থাকে তবে কী হয়? আসলে তখন একজন মানুষ নিজ উদ্যোগেই কাজ করেন। তিনি বোঝেন যে কোন মুহূর্তে তার কী করা প্রয়োজন। তার ভেতরে নিজ থেকেই একটা দায়িত্ববোধ তৈরি হয়। আমরা যদি একজন মায়ের কথা চিন্তা করি তবে দেখব তার শিশু সন্তান কথা বলতে পারে না কিন্তু তিনি তার সন্তানের সব প্রয়োজন বোঝেন এবং সারাক্ষণই বোঝার চেষ্টা করে থাকেন।

আর আগ্রহ না থাকলে কী হয়? শত কাজ ফেলে খুব আগ্রহ নিয়ে টিভিতে সিরিয়াল দেখছেন। ওদিকে চুলায় যে ভাত পুড়ে পোড়া গন্ধ বের হচ্ছে তার কোনো খেয়ালই নেই। অথবা আপনার মা আপনাকে ডাকছে কিন্তু আপনি মায়ের ডাকে সাড়া না দিয়ে কোনো রহস্য উপন্যাস পড়ছেন। কেন? কারণ মায়ের ডাকের ব্যাপারে আপনার কোনো আগ্রহ নাই। আবার এমনও হয় যে সামনে পরীক্ষা, বই নিয়ে বসেছেন। এ সময় সারা পৃথিবীতে কী ঘটছে সব আপনি টের পাচ্ছেন, এমনকি খুব দূর রাস্তায় একটা গাড়ি শাঁ করে চলে গেল আপনি অনুভব করছেন, এ সময় ক্ষুধাবোধ বেড়ে যাবে, মনে হবে বন্ধুদের ফোন বা এসএমএস না করলেই নয়। কেন এমন হচ্ছে? কারণ এই পড়ার প্রতি আপনি মনোযোগ দিতেই পারছেন না। আর এ সবই আগ্রহ না থাকার সাপেক্ষে ঘটে থাকে। এই আলোচনা থেকে আমরা আগ্রহটাকে একটা সূত্রের মতো চিন্তা করতে পারি। সেই সূত্রটা হচ্ছে- আগ্রহ মানুষের মাঝে মনোযোগ সৃষ্টি করে আর মনোযোগ সাফল্য ডেকে আনে। অর্থাৎ আগ্রহ মনোযোগ সাফল্য এই তিনটি একটি অপরটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

আগ্রহ যে মনোযোগ সৃষ্টি করে সেরকম একটি ঘটনা- এক বিজ্ঞানীর স্ত্রী বাজারে যাচ্ছেন। যাওয়ার আগে তিনি তার স্বামীর হাতে একটি ডিম ও একটি ঘড়ি দিয়ে গেলেন এবং বললেন ঠিক পাঁচ মিনিট সময় ধরে ডিমটা সেদ্ধ করে খেয়ে নেবে। স্ত্রী বাজার শেষে ঘরে ফিরে দেখলেন স্বামী ডিম ধরে আছেন আর ঘড়ি সেদ্ধ হচ্ছে। কেন এমনটি হলো? কারণ বিজ্ঞানী তার চিন্তায় এতটাই নিমগ্ন ছিলেন যে খেয়ালই করেন নি ঘড়ি সেদ্ধ হচ্ছে না ডিম সেদ্ধ হচ্ছে! তার নিজের কাজের, গবেষণার প্রতি এই আগ্রহ এবং মনোযোগ তাকে বিজ্ঞানী নিউটন বানিয়েছে।

বিখ্যাত চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসো বলতেন, আমি আমার স্টুডিওতে ঢোকার আগে আমার শরীরটাকে বাইরে রেখে শুধু মনটাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকি, যেভাবে মুসলমানরা জুতো বাইরে রেখে মসজিদে প্রবেশ করে। তার কাজের প্রতি গভীর মনোনিবেশের কারণে তিনি শরীরের অস্তিত্বই ভুলে যেতেন। আর এজন্যেই তারা এত মহান সৃষ্টি করতে পেরেছেন। প্রতিটি কাজের আসল ফলাফল কিন্তু মনোযোগ থেকেই বেড়িয়ে আসে। পড়াশোনা, অফিসের কাজ, ভালো বক্তা হওয়া, বিখ্যাত মানুষ হওয়া, আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হওয়া সবকিছুতেই মনোযোগ দরকার। আর এই মনোযোগ আসে আগ্রহ থেকে। আলোচনার দ্বিতীয় পর্বে মডারেটর শাফিয়া নাজরীন প্রোগ্রামে অংশগ্রণকারীদের আগ্রহের অবস্থাটা কীরকম তা পরীক্ষার জন্যে ছোট্ট একটি কুইজ ধরেন। এই পর্বে অংশগ্রহণকারীরা তার প্রিয় একজন মানুষকে আত্মনিমগ্ন হয়ে অবলোকন করেন। এরপর অংশগ্রহণকারীরা নিজের কাছে নিজের আগ্রহকে পরিষ্কার করার জন্যে তাদের কী কী পছন্দ এরকম ১১টি জিনিস কাগজে লেখেন। সেখানে যেমন ছিল নিজের প্রিয় রং, তেমনি প্রিয় খাবার, প্রিয় দিন-মাস-ক্ষণ ইত্যাদি।

আসলে বয়স অনুযায়ী মানুষের আগ্রহের ধরন পরিবর্তন হয়। নিজের আগ্রহটা কোনদিকে যাচ্ছে সেটা আমাদের বুঝতে হবে। এটা কি ইতিবাচক দিকে যাচ্ছে? এটা কি সৃজনশীল দিকে যাচ্ছে? এটা কি গঠনমূলক দিকে যাচ্ছে? নাকি এটা নেতিবাচক আগ্রহে রূপান্তরিত হচ্ছে? এটি আমাদের বুঝতে হবে। আর আগ্রহের এই ধরন বোঝার জন্যে এই অংশে একটি ফ্রেঞ্চ ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয়। যেখানে একজন লোক একটি রেস্তোরাঁয় বসে চা খান। যখন তাকে বিলের স্লিপ দেয়া হয় তিনি পকেটে হাত দিয়ে দেখেন যে তিনি মানি ব্যাগ আনেন নি। তার কাছে টাকা নেই জানা স্বত্বেও তিনি রেস্তোরাঁয় বসেই থাকেন এবং একের পর এক কাপ করে চা অর্ডার দিতে থাকেন। সেদিন সকাল থেকে পরের দিন সকাল হয়ে যায় আর তার বিলের লিস্ট লম্বা হতেই থাকে। শেষ পর্যন্ত এক ভিখারি যাকে তিনি একদিন অর্থ সাহায্য করতে চান নি। সেই ভিখারি এসে টাকা দিলে লোকটি বিল পরিশোধ করেন। এই ভিডিও চিত্র দেখিয়ে অংশগ্রহণকারীদের খুঁজে বের করতে বলা হয়েছিল আসলে এই মুভির নায়কের মানে চা-পানকারীর আগ্রহটা কোনদিকে ছিল। সেটা কি ইতিবাচক না নেতিবাচক? ছোট্ট সেই মুভিটি দেখে অংশগ্রহণকারীরা মঞ্চে এসে তাদের উপলব্ধি সবার সাথে শেয়ার করেন। তাদের মধ্যে থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সাদিয়া আফরিন রেনেসাঁ বলেন লোকটি তার ভুল স্বীকার না করে ছলচাতুরির মাধ্যমে নিজের দোষটাকে লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করছিলেন।

শাশ্বত চক্রবর্তী বলেন, লোকটির আত্মসম্মানবোধ এতই প্রবল ছিল যে তিনি মানিব্যাগ আনতে ভুলে গেছেন। একথা ওয়েটারকে বললে অপদস্ত হবেন এটাই তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না। কৃত্রিম আত্মসম্মানবোধের কারণে তিনি অপরাধ করছিলেন কিন্তু নিজের ভুলটা স্বীকার করতে চাচ্ছিলেন না। শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে এই মুভির লোকটির আগ্রহ ছিল নেতিবাচক দিকে। ভুলের পুনরাবৃত্তি করার দিকে। যা তার ভোগান্তি ও দুশ্চিন্তার কারণ হয়েছিল। আসলে আমাদেরও নিজেদের আগ্রহটা কোনদিকে আছে? ভুল করার দিকে নাকি ভালো করার দিকে সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। একজন মানুষ যা খুঁজবেন, যেটার প্রতি তিনি আগ্রহ দেখাবেন সেটাই তার দিকে আসবে। আর সেজন্যে আগ্রহের ধরনটা বুঝতে হবে। যেমন মহাত্মা গান্ধীর আগ্রহ ছিল পথ চলতে ফিরতে তিনি কতজনকে সেবা দিতে পারেন। সেবা দেয়ার সুযোগটা যেন তিনি নিজে গ্রহণ করতে পারেন। একবার গান্ধীজী তার কিছু সহযোগী নিয়ে ট্রেনে উঠছিলেন। ট্রেনে উঠতে গিয়ে গান্ধীজীর এক পায়ের স্যান্ডেল স্টেশনে পড়ে গেল। এদিকে ট্রেনের গতিও বেড়ে গেছে। নিচে নেমে স্যান্ডেল সংগ্রহের উপায় নেই। এ অবস্থায় গান্ধীজী তাঁর আরেক পায়ের স্যান্ডেল খুলে জানালা দিয়ে ছুঁড়ে মারলেন স্টেশনে। তার সঙ্গীরা অবাক হয়ে এরকম আচরণের কারণ জিজ্ঞাসা করাতে তিনি বললেন, এক পায়ের স্যান্ডেল আমারও কোনো কাজে আসবে না আর অপরটি যিনি পাবেন তারও কোনো কাজে আসবে না। তারচেয়ে এখন যদি কোনো গরীব মানুষ দু’পাটি স্যান্ডেল জোড়া খুঁজে পায় তাহলে সে তো ব্যবহার করতে পারবে। এটা তিনি কেন করতে পেরেছেন? কারণ তার ভেতরে সেবা করার আগ্রহ ছিল। তিনি চিন্তা করেছেন কী করলে অন্যের একটু হলেও উপকার হতে পারে। ফলে সেবা করার সুযোগ তার কাছে চলে এসেছে। যেমন সেই কিশোরী এগনেস আগ্রহের ফলেই শত বাধা পেরিয়ে ছুটে এসেছিলেন ভারতে। যার ফলে ইতিহাসে আজ তিনি মাদার তেরেসা নামে সম্মানিত হয়েছেন। মায়ের সম্মানে নিজেকে নিয়ে যেতে পেরেছেন। মাদার তেরেসার ভেতরে আগ্রহ ছিল দরিদ্র অসহায় মানুষদের সেবা করার। আর এই আগ্রহটা তার ভেতর থেকে এসেছিল। আসলে জোর করে কখনো আগ্রহ সৃষ্টি করা যায় না। আগ্রহ সৃষ্টি হতে হয় ভেতর থেকে। এ পর্যায়ে আরেকটি ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয় যেখানে একটি বানর একটি রাস্তার কল খুলে পানি পান করে এবং পানি পান করে সে নিজেই কলটি আবার বন্ধ করে রাখে। এই ভিডিওটির মূল বিষয় ছিল কীভাবে আমরা সচেতন হতে পারি আমাদের প্রতিটি কাজের ব্যাপারে এবং কীভাবে আমরা অপচয় রোধের ব্যাপারে আগ্রহী হতে পারি। আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারলে আমরা অপচয় রোধ করে জীবনের অনেক কিছু সঞ্চয় করতে পারব। আসলে আগ্রহ বা অনাগ্রহ এ দুই-ই সৃষ্টি হওয়ার মূল বিষয়টি হচ্ছে আমি দায়িত্ব নিতে চাই কি চাই না। কাজটি কেন করতে হবে এটা যদি পরিষ্কার থাকে তবে আগ্রহ সৃষ্টি হবে। কাজের ব্যাপারে প্রথম সুযোগে দায়িত্ব নিতে হবে নিজেকে। এই দায়িত্ববোধ যখন ভেতরে সৃষ্টি হবে তখন বোঝা যাবে ভালো কাজে, কল্যাণকর কাজে, মঙ্গলকর কাজে আগ্রহ চলতে শুরু করেছে। ভালো কাজ করার জন্যে নিজেকে শুধু জিজ্ঞেস করা এই যে কাজটা করার সিদ্ধান্ত আমি নিচ্ছি এটা আমার জন্যে এবং আর সবার জন্যে কল্যাণকর হচ্ছে কিনা? যদি নিজের ভেতর থেকে উত্তর আসে যে হ্যাঁ তুমি এটা করতে পারো তাহলেই সেই কাজটার প্রতি দেখা যাবে মনোযোগ আসছে। ওই মনোযোগ কাজটাকে সুন্দর করছে, কাজটাতে আপনি সফলতা পাচ্ছেন। জীবনে সফল হওয়ার সূত্র খুবই সহজ। কিন্তু ব্যর্থ হওয়াটা কঠিন। ভালো রেজাল্ট করা সহজ। পাশ করা সহজ বরং ফেল করাটা কঠিন। আসলে আমরা কঠিন কাজটাই মনে করি সহজ আর সহজ কাজটাই মনে করি কঠিন। আসলে ভালো কাজে আমরা যত বেশি আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারব এবং আগ্রহের আগে যত বেশি দায়িত্ববোধ বাড়াতে পারব তত বেশি আমাদের আগ্রহ বাড়বে মনোযোগ বাড়বে এবং সাফল্য সৃষ্টি হবে। এরপর সমাপনী মেডিটেশন হয়। সেখানে সবাই প্রার্থনা করেন যেন স্রষ্টা আমাদের সকলের ভেতরে দায়িত্ববোধের অনুভূতি, সচেতনতা সৃষ্টি করে দেন। মেডিটেশন শেষে ২০ নভেম্বর পরবর্তী শিক্ষার্থী মাসিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রোগ্রাম সমাপ্ত হয়। আগামী প্রোগ্রাম শুরু হবে বিকেল ৪টায়, বিষয় হচ্ছে-শুদ্ধ সহবত, গতিময় জীবন।

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com