২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জন করা বিশ্বের শীর্ষ তিন দেশের একটি হচ্ছে বাংলাদেশ।
পৃথিবীজুড়ে যখন করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতি নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে উন্নত রাষ্ট্রগুলো, তখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ইতিবাচক।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। বৃদ্ধি পেয়েছে মাথাপিছু আয়।
দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এই প্রাথমিক তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২০ সালে মাত্র ২২টি দেশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক। তাদের মধ্যে এগিয়ে থাকা অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএ প্রতিবেদন অনুসারে – বিশ্বজুড়ে বৈরী আবহাওয়া ও নানা সংকটের কারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি শস্য চাল, গম ও ভুট্টার উৎপাদন কমছে। কিন্তু তার উল্টো চিত্র বাংলাদেশে।
বলা হচ্ছে যে বাংলাদেশে এই তিন খাদ্যশস্যের উৎপাদন রেকর্ড পরিমাণ বাড়বে।
ইউএসডিএর অন্য এক প্রতিবেদনে বলা হয় বিশ্বজুড়ে চালের উৎপাদন দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ কমেছে। এমনকি সবচেয়ে বড় চাল উৎপাদনকারী দেশ চীনেও উৎপাদন কমেছে। কিন্তু চালের উৎপাদন উল্টো বেড়েছে বাংলাদেশ, ৩ শতাংশ, যা দেশে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের তুলনায় প্রায় তিন গুণ।
বিশ্বে ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির সর্বোচ্চ হারের রেকর্ড বাংলাদেশের। আর মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ।
আগে বাংলাদেশে ৫৬ প্রজাতির ফল চাষ হতো। এখন ৭২ প্রজাতির ফলের চাষ হচ্ছে। এছাড়া কাঁঠাল উৎপাদনে বিশ্বের দ্বিতীয়, আমে সপ্তম ও পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে আছে বাংলাদেশ।
গত ১০ বছরে দেশে আমের উৎপাদন দ্বিগুণ, পেয়ারা দ্বিগুণের বেশি, পেঁপে আড়াই গুণ এবং লিচু উৎপাদন ৫০ শতাংশ বেড়েছে। চার-পাঁচ বছরের মধ্যে নতুন ফল ড্রাগন ও অ্যাভোকাডো এবং দেশি ফল বাতাবিলেবু, তরমুজ, খরমুজ, লটকন, আমড়া ও আমলকীর মতো পুষ্টিকর ফলের উৎপাদনও ব্যাপক হারে বাড়ছে।
আয়তনে বিশ্বে ৯৪তম বাংলাদেশে ফল উৎপাদনে এই সফলতা তাক লাগিয়ে দিয়েছে বিশ্বকে।
বাংলাদেশে রীতিমতো সবজি বিপ্লব ঘটে গেছে গত এক যুগে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্যমতে, সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়।
এক সময় দেশের মধ্য ও উত্তরাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোরেই কেবল সবজির চাষ হতো। এখন দেশের প্রায় সব এলাকায় সারা বছরই সবজির চাষ হচ্ছে। মোট ৬০ ধরণের ও ২০০টি জাতের সবজি উৎপাদিত হচ্ছে বাংলাদেশে।
এ ছাড়া মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় এবং ইলিশ উৎপাদনে প্রথম! আলু উৎপাদনে সপ্তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও দুর্যোগসহিষ্ণু শস্যের জাত উদ্ভাবনেও শীর্ষে বাংলাদেশের নাম।
খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্যকে বিশ্বের জন্য অনুকরণীয় উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তফা কামাল মুজেরী বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণা পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশ এখন খাদ্য উৎপাদনে বিশ্বের জন্যে উদাহরণ।
‘অভিবাসনের সাপেক্ষে কোভিড-১৯ সংকট’ শীর্ষক বিশ্বব্যাংক ও নোম্যাডের এক প্রতিবেদনে
বলা হয়, বৈশ্বিক অর্থনীতি যেখানে চলতি বছর সংকুচিত হবে, সেখানে প্রবাসী আয়ও স্বাভাবিকভাবেই কমবে। তবে বৈশ্বিক মহামারি সত্ত্বেও বাংলাদেশে প্রবাসী আয় বাড়বে ৮ শতাংশ।
এদিকে আউটসোর্সিংয়ে বিশ্বের শীর্ষের তালিকায় নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউট ও ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার মতো দেশগুলোকে ছাড়িয়ে বিশ্বে এখন দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ।
ধারণা করা হচ্ছে যে আগামীতে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন- জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ৫ শতাংশ অবদান রাখবে আউটসোর্সিং।