শিক্ষার্থী কার্যক্রমে বলা হয়ে থাকে বাংলাভাষায় এমন কিছু শব্দ আছে তার ভুল ব্যবহারে বা অতিমাত্রায় ব্যবহারে পচে গেছে। তার মধ্যে ছিলো প্রেম, বন্ধুত্ব, মডেল এবং আজকের আলোচ্য বিষয় স্মার্ট ব্যক্তিত্ব। সাধারণভাবে ব্যক্তিত্ব-শব্দটি যতটা না আমরা ব্যবহার করি তারচেয়ে ‘পারসোনালিটি’ শব্দটি বেশি ব্যবহার করি। কোয়ান্টামে আসার আগে স্মার্টনেস সম্পর্কে আমাদের ধারণা ছিলো একরকম। কোয়ান্টামে এসে সায়েন্স অব লিভিং জানার পরে আমরা জানি এটি আরো একটু অন্যরকম। এটি কীভাবে অন্যরকম আজকের এই প্রোগ্রামের আলোচনা থেকে আমরা সহজেই জানতে পারবো এবং বুঝতে পারবো আমরা কতটুকু স্মার্ট। একারনে আজকের আলোচনাকে দুইভাগে ভাগ করে প্রথমেই রাখা হয়েছে ব্যত্তিত্ব এবং পরে স্মার্টনেস।
কারণ আগে ব্যক্তিত্বকে তৈরি করে পরে সেটিকে স্মার্ট করতে হবে। তাহলে চলুন আমরা জেনে নেই ব্যক্তিত্ব মানে কী? ব্যক্তিত্ব কেমন হবে, কীভাবে ব্যক্তিত্ব তৈরি করতে হবে। ব্যক্তিত্ব বিষয়টিকে আমরা তুলনা করতে পারি সেই ছোট্টবেলায় কাপড় দিয়ে পুতুল তৈরি করার সাথে। ছোট্টবেলায় মাটি দিয়ে কিংবা কাপড় সেলাই করে আমরা পুতুল বানাতাম। তারপর পুতুলের গায়ে পোশাক পড়াতাম। পুতুলের সৌন্দর্য পরিপূর্ণতা পেত তার সুন্দর রকমারি রঙের পোশাকে। অর্থাৎ প্রথমে কাঠামো ঠিক করতে হবে তারপরে তার ওপরে পোশাক পড়াতে হবে। আমাদের ক্ষেত্রে ব্যক্তিত্ব হচ্ছে সেই কাঠামো এবং সেটা ঠিক থাকলে স্মার্ট করা অর্থাৎ রঙিন পোশাক পড়ানো খুব কষ্টের হবে না। ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারীদের প্রশ্ন করে জানা যায়, তাদের মতে ব্যক্তিত্ব মানে হচ্ছে গম্ভীর থাকা, চুপচাপ থাকা, না হাসা, সবার সাথে কথা না বলা, খোলামেলা না মেশা, রাশভারিভাবে চলা ফেরা করা ইত্যাদি।
আর কোয়ান্টাম কণিকা বই থেকে আমরা জেনেছি- সামাজিক মুখোশ নয়, অন্তর্গত শক্তিই হচ্ছে ব্যক্তিত্ব। অন্তর্গত শক্তি মানে হচ্ছে একজন মানুষের মনের গভীরে সঞ্চিত ইতিবাচক তরঙ্গ। এই ইতিবাচক তরঙ্গ অনেক উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত হয়। আমাদের চারপাশে অনেক উপকরণ আছে কিন্তু কোন কোন উপাদান মিলে আমার ব্যক্তিত্ব তৈরি হবে তা আমাকেই ঠিক করতে হবে। এর আগে একবার জীবনের মডেল প্রসঙ্গ নিয়ে একটি শিক্ষার্থী মাসিক প্রোগ্রাম হয়েছিলো। সেখানে একটি গ্রুপ ডিসকাশনে অংশগ্রহণকারীরা জীবনের মডেল হিসেবে যাকে ভাবতে চাই তার গুণাগুণ শনাক্ত করেছিলেন।
সেই পয়েন্টগুলো তালিকাভুক্ত করে যে পয়েন্টগুলো উঠে এসেছে তা হলো- ইতিবাচকতা বা প্রো-একটিভ থাকা,নিয়মানুবর্তী,সময়ানুবর্তী হওয়া। মমতাময় হওয়া। কঠোর পরিশ্রমী, সৎ, বিনয়ী, ধৈর্যশীল, সাহসী, শিষ্টাচারী হওয়া। প্রজ্ঞাবান, ক্ষমাশীল, সহযোগিতার মনোভাব থাকা। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, দানশীল, স্বাবলম্বী হওয়া। দায়িত্বশীল, বন্ধুভাবাপন্ন, ভরসাস্থল হওয়া। বিশ্বাসী, আন্তরিকতা, একাগ্রতা, সত্যবাদী, সুবচনের অধিকারী হওয়া। দেশপ্রেমিক, স্বেচ্ছাসেবী, পরচর্চা/ গীবত থেকে বিরত থাকা। নেতৃত্বের গুণ, স্নেহশীল, ন্যায়পরায়ণ, কাজের প্রতি একনিষ্ঠ, স্থির লক্ষ্য সম্পন্ন। সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, ধার্মিক, মিশুক, যত্নশীল, নিত্য নতুন বিষয়ের প্রতি আগ্রহী। যা বলেন তা ব্যক্তিগত জীবনে চর্চাও করেন। এরকম ৬২টি পয়েন্ট সেই গ্রুপ ডিসকাশন থেকে শনাক্ত করা হয়েছিলো। তবে এই ৬২টি গুণের বাইরে আরো অনেক গুণ থাকতে পারে। গুণের ক্ষেত্রে সংখ্যা বাড়াতে পারলে ভালো। কিন্তু মূল কয়েকটি গুণ ধারণ করতে পারলে বাকিগুলো এমনিতেই হয়ে যায়। যেমন, স্কুলে একবার ভর্তি হতে পারলেই, স্কুল ড্রেস, জুতো, মোজা, টিফিন বক্স, পানির ফ্লাক্স নিজের জন্যে কেনা হয়ে যায়। প্রশ্ন করতে পারেন, তাহলে ফান্ডামেন্টাল গুণ কী কী হতে পারে? নবীজীর হাদীস থেকেই তো আমরা জানি।
এক লোক তার হাতটানের অভ্যাস ছিলো। হাতটান তো বুঝি। চৌর্যবৃত্তি কিংবা আরো সহজ করে বললে না বলে অন্যের জিনিস নিয়ে নেয়া। সেই লোক, তার ইচ্ছা হলো ভালো হওয়ার কিন্তু মনে মনে আশা হাতটান ছাড়বে না। তো সে নবীজীকে এসে বললো-ইয়া রসুলুল্লাহ! আমি অত কিছু মানতে টানতে পারবো না, আমাকে শুধু একটা নির্দেশ দিন। সেটাই আমি মানতে চাই। এর বেশি কিছু সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। নবীজী তো দয়ার মন, নরম। তিনি বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে, মিথ্যা বলো না। সে লোক তো মহাখুশি। আমাকে নামাজ পড়তে বলা হয় নি, রোজাও রাখতে বলা হয় নি। না খেয়ে থাকলে কতই না কষ্ট হতো। মাত্র মিথ্যা না বলা। এটা কোনো ব্যাপার? এটা যে কত বড় ব্যাপার সেটা বোঝা গেল দুদিন বাদে। রাতে বাসা থেকে বেরিয়েছে, মনে মনে তক্কে তক্কে আছে, কোথায় গেলে ভালো করে চুরি করা যাবে। এর মধ্যে একজন তাকে জিজ্ঞেস করলো, ভাই যাচ্ছো কোথায়? এখন কোনো চোর কি কখনো বলে, যাচ্ছি ভাই চুরি করতে। এখন এটাই তো সত্য কথা। আর এটা না বললে মিথ্যা বলা হবে। আর নবীজী (স) তো মিথ্যা বলতে না করেছেন। এখন আর কী করা। লোকটি বাসায় ফিরে গেলো। পরের দিনও চুরি করার জন্যে বেরিয়েছে। অন্যদের জিজ্ঞাসা, কোথায় যাচ্ছো। শেষ পর্যন্ত সত্য কথা বলতে না পেরে বাসায় ফিরে গেলো। এইভাবে একসময় তার চুরি করার যা একটু অভ্যাস ছিলো, আগ্রহ ছিলো তা চাপা পড়ে গেলো, লোকটি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলো।
এটাই হচ্ছে কথামতো কাজ। এটাই হচ্ছে ব্যক্তিত্ব। আর জীবন কণিকার ১৬৩ নম্বর কণিকায় আমরা দেখেছি, কথা ও কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকলে কখনো ব্যক্তিত্ব অর্জিত হয় না। তার মানে ব্যক্তিত্ব অর্জন করতে হলে কথা ও কাজের সাথে মিল রাখতে হবে। যা জানি, যা বুঝি তার কতটুকু আমার জীবনে অনুসরণ করছি সেটা দেখতে হবে। এবার আমরা সে বিষয়টিই দেখবো আত্মজিজ্ঞাসার মাধ্যমে। চোখ বন্ধ করে আমরা নিজের সাথে শুধু মেলাবো। কীসের সাথে নিজেকে মেলাবো? সর্বোত্তম আদর্শ-এর সাথে। সর্বোত্তম আদর্শ কে? নবীজী (স), আল্লাহর খুব ঘনিষ্ঠ জন। তাঁর আদর্শ, তাঁর জীবন কত কত গুণাবলিতে সমৃদ্ধ এটা বোঝার জন্যে সর্বোত্তম আদর্শ কণিকাটি আমাদের জন্যে খুব সহায়ক।
আত্মজিজ্ঞাসা: ১. শুধুমাত্র দয়ালুকে আল্লাহ দয়া করেন। তাই জীবে দয়া কর; আল্লাহ তোমাকে দয়া করবেন। -আবু দাউদ কোনো পশুর মুখে প্রহার করবে না। -মুসলিম আমরা কী জীবে দয়া করি? জীব মানে মানুষ, জীব মানে পশুপাখি, জীব মানে গাছপালাও। হাঁটতে হাঁটতে কোনো কারণ ছাড়াই গাছের পাতা ছিঁড়ি কি না। যদিও ছাগলের মতো গাছের পাতা খাবো না কোনোদিনই, তাহলে কেন ছিঁড়বো?
২. নিজের জন্যে যা আকাঙ্ক্ষা কর, অন্যের জন্যেও তা-ই আকাঙ্ক্ষা করবে। তাহলেই তুমি প্রকৃত বিশ্বাসী হতে পারবে। -বোখারী আমি এ প্লাস চাই, কিন্তু আমার সহপাঠী ডি পেলে আমার মনটা নেচে ওঠে কি না।
৩.প্রয়োজন ছাড়া অন্যের বিষয়ে নাক গলাবে না। এটাই প্রকৃত মুসলমানের পরিচয়। -আবু দাউদ কোনো না কোনোভাবে কারো বাসায় সমস্যা জেনেছিলাম, এখন তাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আরো জানতেই হবে যে, কী সমস্যা, বল বল।
৪.সৎকর্ম ও সত্যনিষ্ঠায় প্রথম হওয়ার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা কর। তাহলেই সফলকাম হবে। -বায়হাকি ভালো কাজ করতে কি ভালো লাগে? মিথ্যা বললে আমার সম্মান বাঁচে এমন পরিস্তিতিতে আমি সাহস করে সত্য বলতে পারি কি না?
৫.যদি আমাকে ভালবাসো তবে অপরের প্রতি বিদ্বেষ, ক্ষোভ ও ঘৃণা থেকে নিজের অন্তর মুক্ত রাখো। -মেশকাত কারো প্রতি আমার বিদ্বেষ আছে কি না, আমি ক্ষুব্ধ হই কি না, কাউকে ঘৃণা করি কি না?
৬.বিবেক দংশিত হয় এমন কিছু করো না। -মেশকাত আমি জানি কাজটা করা ঠিক না, তারপরও আমি সেটা করি কি না?
৭. আন্তরিক বিনয় সকল সৎগুণের উৎস। -মেশকাত সহপাঠীকে কোনো একদিন খারাপ ব্যবহার করেছিলো। পরে তার শোধ নেয়ার সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও সে সুযোগটা নিলাম না এমন করতে পারি কি না?
৮. গোপনে দান কর। এটাই সর্বোত্তম দান। -মেশকাত বন্ধু আমার করা নোট পেয়ে পড়ে পরীক্ষায় লিখে ভালো করেছে। আমি কি ক্লাসের অন্যদেরকে সেটা বলে দেই যে, ও তো আমার নোট পড়েছে।
৯. যখন তুমি কোনো পীড়িতকে দেখতে যাও তখন তাকে সান্ত্বনা দাও এবং বল-‘তুমি সুস্থ ও দীর্ঘজীবী হবে’। -মেশকাত আমি কি তা বলি?
১০. জ্ঞান অর্জন কর ও জ্ঞান বিতরণ কর, এটাই সর্বোত্তম কাজ। -মেশকাত জীবনের জন্যে প্রয়োজনীয় জ্ঞান আমি প্রতিদিন আরো বেশি করে জানতে কি চাই? যদি জানতে পারি তাহলে তা কি অন্যকে সুযোগমতো জানাতে চাই কি না। আমি যে মেডিটেশন করি, সেটা কি আমার সব সহপাঠী জানেন?
১১. মৃতদের সম্পর্কে খারাপ কথা বলো না। -তিরমিজী ধরুন, আপনার টিচার আপনাকে ৫ নম্বর কম দিয়েছেন। তিনি মারা গেলে কি আমি বলি, স্যার বড় ভালো ছিলেন? ভালো বলতে না পারলে অন্তত চুপ থাকতে পারি কি না?
১২. যখন কথা বল-সত্য বল। যখন অঙ্গীকার কর, তা পালন কর। অন্যায় ও আঘাত করা থেকে বিরত থাকো। -মেশকাত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গিয়ে গুল মারি কি না? পাত্তা পাওয়ার জন্যে চাপা মারি কি না? বন্ধুদের বলেছি ৫টায় দেখা করবো। সাড়ে ৫টা বাজে। তখনো বাসায়। ফোন করার পর বললাম, দোস্ত, এই ২ মিনিট, একদম কাছাকাছি চলে আসছি। কমিটমেন্ট রক্ষা করি কি না? অন্যায় ও আঘাত করা থেকে বিরত থাকো। -মেশকাত লাইব্রেরিতে বই পড়তে গিয়ে পাতা ছিঁড়ে পকেটে নিয়ে এলাম। এরকম করি কি না? কারো লেকচার খাতা ফটোকপি করতে এনে কলমের দাগ দিয়ে দোকানদারকে বুঝিয়ে দিলাম, পাতা ইচ্ছামতো মুড়িয়ে দিলাম স্থায়ীভাবে ইস্ত্রি করে দিলাম
১৩. নিকৃষ্ট মানুষ তারাই, যারা অন্যের ক্ষতি করার জন্যে ও বন্ধুদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানোর জন্যে কুৎসা রটায় এবং ভালো মানুষের ছিদ্রান্বেষণ করে। -মেশকাত জানিস! ও তোর নামে এই এই বলতেছে সবাইকে!-সত্য নয়, এমন কথা বলে দুজনের বন্ধুত্ব নষ্ট করি কি না?
১৪. তুমি যদি বিশ্বাসী হও, তাহলে প্রতিবেশীকে কষ্ট দিও না। -বোখারী আমি কি হাই ভলিউমে গান ছেড়ে শুধু নিজে না, প্রতিবেশীকে শোনাই? জানালা দিয়ে পাশের বাড়ির কার্নিশে কি ময়লা ফেলি?
১৫. তিনজন একত্রিত হলে দুজন কখনো চুপিচুপি কথা বলবে না; যতক্ষণ না আরো লোকজন এসে উপস্থিত হয়। -বোখারী বললে তৃতীয় জন ভাবতে পারে তাকে নিয়েই বোধ হয় নেতিবাচক কথা বলছে।
১৬. যখন কোনো শবযাত্রা তোমার পাশ দিয়ে যাবে তখন উঠে দাঁড়াও। -মেশকাত আমি কি আমার সামনে দিয়ে কোনো লাশ যেতে দেখলে তার জন্যে দোয়া করতে পারি, কিছুক্ষণ স্থির দাঁড়িয়ে?
১৭. আল্লাহর দৃষ্টিতে সেটিই শ্রেষ্ঠ আমল বা সৎকর্ম যা অল্পমাত্রায় হলেও নিয়মিত করা হয়। -বোখারী আমি কি প্রতিদিন প্রতিদিনের পড়া পড়ি? আমি কি কাজ জমাই?
১৮. আল্লাহর ওপর ভরসা রাখো, কিন্তু সতর্কতা ও করণীয় কর্তব্যে অবহেলা করো না। -মেশকাত পরীক্ষার আগে দাড়ি-টুপি পড়ে, নামাজী হয়ে পড়া কম পড়ে কি মনে করি যে, আল্লাহ পাস করিয়ে দেবেন?
১৯. অন্যের এমন সব দোষত্রুটি দেখা ও বলা থেকে বিরত থাকো, যা তোমার মধ্যেও আছে।-মেশকাত আমি কি অন্যের দোষ দেখলে নিজের দিকে তাকিয়ে আত্মপর্যালোচনা করি যে, সেটা আমার মধ্যে আছে কি না?
২০. প্রশংসার ক্ষেত্রে যুক্তির সীমা লঙ্ঘন করো না। -আবু দাউদ দোস্ত! তোকে আজ শাহরুখ খান লাগছে। খামোখা খামোখা এরকম প্রশংসা করা।
২১. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। যে মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞ নয়। -আবু দাউদ বাইরের মানুষকে তো কমবেশি বলি। ঘরের মানুষকে কি থ্যাংকস বলি। যে মা ভাত-ভর্তা রান্না করেছেন সেজন্যে কি ধন্যবাদ জানাতে পারি তাকে? নাকি লজ্জা পাই? নাকি ঘরের মানুষকে থ্যাংকস বলার কী আছে মনে করি?
২২. কারো প্রতি অন্যায় করে থাকলে যত তাড়াতাড়ি পারো ক্ষমা চেয়ে নাও। -বোখারী সরি বললে নিজের প্রেস্টিজ কমে যায়-এরকম মনে হয় কি না? বাইরের মানুষকে তো কমবেশি বলি। ঘরের মানুষকে কি সরি বলি।
২৩. সবাইকে আগে সালাম দাও। -বোখারী বাইরের মানুষকে তো কমবেশি বলি। ঘরে ঢুকে কি আমরা সালাম দিতে পারি?
২৪. সবচেয়ে নিকৃষ্ট সে-ই, যার দুর্ব্যবহারের জন্যে অন্যেরা তাকে এড়িয়ে চলে। -বোখারী আমরা কি সেই হতভাগাদের দলে যাদের দুর্ব্যবহারের জন্যে অন্যরা তাদের একঘরে করে রাখে।
২৫. একজন সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, কীভাবে আত্মশুদ্ধি করা যায়। নবীজী (স) বললেন, তুমি সবসময় মনে রাখবে তুমি যেখানেই থাকো না কেন আল্লাহ তোমার সাথে আছেন (তোমার সবকিছু দেখছেন)। -তিরমিজী সবার চোখের আড়ালে দরজা বন্ধ করে থাকার সময় কি মনে হয়, একজন আমাকে অবশ্যই দেখছেন? চমৎকার আত্মনিমগ্নতায় সবাই নিজেকে মনের আয়নায় দেখতে পেরে নিজেদেরকে সৌভাগ্যবান মনে করছে। আসলে মানুষের অন্তর্গত শক্তি যখন গতিময়তা পায় তখন আপাত অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়, ইতিহাস সৃষ্টি করা যায়।
যেভাবে নবীজী (স) এবং নবীজীর সাথে যারা ছিলেন, তারা বদলেছেন। আর এই অন্তর্গত শক্তি বাড়ে নিজেকে ভালবাসতে পারলে। সকল পরিবর্তনের শুরু হচ্ছে নিজেকে ভালবাসার মধ্য দিয়ে। ভালবাসা হচ্ছে প্রথম ধাপ। কিন্তু মজার বা অদ্ভুত যা-ই বলুন না কেন, আমরা নিজেকে ভালবাসি কি বাসি না সে হিসাব না থাকলেও এটা সত্যি যে, কেউ কেউ অন্যকে এই পরিমাণে ভালবাসেন যে, তাদের পক্ষ থেকে যখন ছ্যাকা খান তখন হাত ব্লেড দিয়ে কাটতে, কিংবা গায়ে আগুন লাগাতে, কিংবা ছাদ থেকে ঝাঁপ দিতে একটু বাধে না। যা-ই হোক, নিজেকে ভালবাসতে পারলেই নিজের জন্যে ভালো কাজ করা কঠিন হলেও করা যাবে।
ব্যক্তিত্ব আরো সুন্দর হয় যখন তা স্মার্ট হয়। ছেলে হলে মেয়েকে, মেয়ে হলে ছেলেকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা স্মার্টনেস নয়। এটা পশুসুলভ প্রবণতা। প্রতিটি পশুই সহজাতভাবে বিপরীত লিঙ্গকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করে। সত্যিকার স্মার্ট সে-ই যার আত্মপ্রত্যয় ও গুণাবলি স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাকে চারপাশের মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে।
যেমনটি আমাদের শ্রদ্ধেয় গুরুজী। তিনি ঢাকায় অনুষ্ঠিত লাইফ স্কিল প্রোগ্রামের দ্বিতীয় ব্যাচে হঠাৎ করে উপস্থিত হলে সেখানে সবার মধ্যে আনন্দ অনুরণন শুরু হয়ে যায়। লাইফ স্কিল প্রোগ্রামে গুরুজী সেবক নিয়ে আলোচনা করেন সেখান থেকে উঠে আসে প্রকৃত স্মার্টনেস কী। একজন মানুষের প্রকৃত স্মার্টনেস হচ্ছে যখন যেখানে যা করা উচিত তা স্বতঃস্ফূর্তভাবে করতে পারা। আর তা তখনই করা যাবে যখন লক্ষ্য থাকবে সেবা করার।
যে ভাবতে পারবে, বিশ্বাস করতে পারবে যে, ‘আমি যেখানেই যাবো, যার সাথে দেখা করবো তার জীবনে আনন্দ নিয়ে আসবো।’ উপলব্ধি করবে যে, আমার কষ্টের কারণ যা-ই হোক না কেন, আমি অন্যকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকবো। যিনি যত ভালো সেবা দিতে পারেন তিনি তত র্স্মাট। তাহলে আসুন আগামী এক মাস কোথায় কোথায় কাকে কাকে কীভাবে সেবা দেয়া যায় এই চেষ্টা করি এবং এই চিন্তাকে সবসময়ের জন্যে অন্তরে লালন করি।