1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২৬ অপরাহ্ন

আপনি কি বেতনের ১০ শতাংশ অর্থ দান করবেন

  • সময় মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ৬৯১ বার দেখা হয়েছে

মানুষ সাধারণত দানকে সরকার এবং ধনী ও অতিধনীদের বিষয় বলে মনে করেন। আসলে ইচ্ছা থাকলে যে কেউই জনহিতকর কাজের জন্যে দান করতে পারেন। আজকাল এ রকম মহতী মানুষের সংখ্যাও কিন্তু দুনিয়ায় কম নয়, যারা নিজেদের মাসিক বেতনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মানবকল্যাণে দান করেন।  বিবিসির সূত্রে গত ৬ ডিসেম্বর ২০২১ প্রথম আলোতে লেখাটি প্রকাশিত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের চাকুরে ও বাসিন্দা জন ইয়ান ঠিক করলেন, তিনি তার মোট বেতনের ১৫ শতাংশ জনহিতকর কাজে দান করবেন; যদিও এই দানের জন্যে তাকে নিজের চলতে বেশি দিন, অর্থাৎ বৃদ্ধ বয়সেও কাজ করতে হবে। এই সফটওয়্যার প্রকৌশলী প্রথমে ২০১৯ সালে তার বেতনের ১ শতাংশ দান করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ২০২০ সালে ৩ শতাংশ দান করার ঘোষণা দেন, যা ২০২১ সালে একলাফে ৫ গুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন।

জন ইয়ান বলেন, ‘দানের বিষয়ে আমার এই প্রতিশ্রুতির মানে হলো আমি তাড়াতাড়ি অবসরে যাচ্ছি না। ফি নেয়—এমন বেসরকারি স্কুলে আমি সন্তানদেরও পড়াতে পারব না।’ তিনি ‘গিভিং হোয়াট উই ক্যান’ (জিডব্লিউডব্লিউসি) নামের একটি আন্তর্জাতিক দাতব্য কর্মসূচিতে দান করছেন। তার মহতী দানের মহিমা দেখে এখন আরও অনেকেই তাদের বেতনের ১০ শতাংশ অর্থ জিডব্লিউডব্লিউসির সদস্য হয়ে দান করছেন।

জিডব্লিউডব্লিউসির সদস্যরা সরাসরি নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী দান করেন কিংবা সংস্থাটির দেওয়া তালিকা দেখেও অর্থ দিয়ে থাকেন। জিডব্লিউডব্লিউসি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি দাতব্য সংস্থা সেন্টার ফর ইফেক্টিভ অ্যালট্রুইজমের (সিএফইএ) সহযোগী সংস্থা।

জনহিতকর কাজের জন্যে বেতনের একটি নির্দিষ্ট অংশ দান করার কারণ হিসেবে জন ইয়ান জানান, তিনি পৃথিবীর বিপুলসংখ্যক মানুষের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থানে আছেন। সে জন্যে তিনি মানুষের জন্যে কিছু করতে চান। জন ইয়ান হলেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম প্রজন্মের অভিবাসী এক পরিবারের সন্তান। তিনি বলেন, ‘আমি জানি, আমার এই দানের ফলে ব্যক্তিগত সুখ কিছুটা ব্যাহত হবে।’

২০০৯ সালে অক্সফোর্ডের দুই ছাত্র উইল ম্যাকঅ্যাসকিল ও টবি ওর্ড জিডব্লিউডব্লিউসি কর্মসূচি শুরু করেন। তারা দুজনই এখন দর্শনশাস্ত্রে গবেষণা করছেন। তারা ‘ইফেক্টিভ অ্যালট্রুইজম’ বা ‘কার্যকর পরোপকার’-এ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী জিডব্লিউডব্লিউসির সদস্য সংখ্যা ৬ হাজার ৪৩৯। তাদের দানের সম্মিলিত পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৪ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ২০২০ সালে করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সদস্য হয়েছেন এক হাজার। আরও এক হাজার মানুষ একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কিংবা ১০ শতাংশের কম অর্থ দান করার কথা জানান।

জিডব্লিউডব্লিউসি সাধারণত আগ্রহী ব্যক্তিদের বেতনের ১০ শতাংশ দান করার আহ্বান জানায়। এ প্রসঙ্গে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক লুক ফ্রিম্যান বলেন, ১০ শতাংশ অর্থ হচ্ছে কারও বেতনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ, যা দান করার মতো সক্ষমতা ধনী দেশগুলোর চাকরিজীবীদের রয়েছে।

তিনি বেতনের ১০ ভাগের ১ ভাগ দান করার বিষয়ে একটি ঐতিহাসিক সংযোগের দিকেও ইঙ্গিত করেন। সেটি হলো ইহুদি ও খ্রিষ্টান উভয় ধর্মেই আয়ের ১০ শতাংশ অর্থ কোনো দাতব্য সংস্থা বা গির্জায় দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। তবে জন ইয়ানের মতো কেউ কেউ আরও বেশি দান করার প্রতিশ্রুতি দেন।

নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগের বাসিন্দা পিপ্পা গিলবার্ট কয়েক বছর আগে থেকেই তার আয়ের ১০ শতাংশ জিডব্লিউডব্লিউসিতে দান করে আসছেন। তিনি বলেন, ‘বেঁচে থাকার জন্য যা প্রয়োজন, তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল আমার। অথচ বিশ্বের অনেকেরই কিচ্ছুটি নেই। সে জন্যে বেতনের একটা অংশ দান করা আমার কাছে অপরিহার্য বলে মনে হয়েছিল।’

৬০ বছরের পিপ্পা গিলবার্ট চলতি বছরে অবসর নেন। তিনি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার বিশ্লেষক হিসেবে চাকরি করতেন। তিনি বলেন, ‘অবসর নেওয়ার পর আয় কমেছে বটে; কিন্তু এটি এখনো আমার ব্যক্তিগত প্রয়োজনের চেয়ে বেশি।’

যারা জিডব্লিউডব্লিউসিতে দান করছেন, তাদের মধ্যে ছাত্র, অবসরপ্রাপ্ত চাকুরে, ব্যবসায়ী রয়েছেন, যাদের গড় বয়স ৩০ বছর। তাদের মধ্যে মধ্যম ও উচ্চ আয়ের মানুষ যেমন রয়েছেন, তেমনি নিম্ন আয়ের লোকও কিন্তু কম নয়। লুক ফ্রিম্যান বলেন, ‘যাদের সামর্থ্য বেশি, তাদেরই দান করতে উৎসাহিত করি আমরা।’

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টন শহরের জুলিয়া ও জেফ ওয়াইজ দম্পতির দুজনই উচ্চ আয়ের মানুষ। তারা এখন নিজেদের বেতনের ৫০ শতাংশই দাতব্য সংস্থায় দান করছেন। এই দম্পতি প্রধানত ম্যালেরিয়া ফান্ড ও ম্যালেরিয়া কনসোর্টিয়ামে দান করে। তারা গিভওয়েল নামক একটি অলাভজনক তথা দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দান করেন।

দাতব্য সংস্থাগুলোর মধ্যে গিভওয়েলকে অন্যতম কার্যকর একটি বলে মনে করা হয়। ৩৬ বছর বয়সী জুলিয়া বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই অনুভব করেছি যে আমাদের পৃথিবীকে একটি ভালো ও সুন্দর জায়গা হিসেবে গড়ে তুলতে কোনো না কোনোভাবে কিছু করা উচিত।’

এ প্রসঙ্গে লন্ডনের কিংস কলেজের অর্থনীতিবিদ জিভুন স্যান্ধার অবশ্য বলেন, ‘এটি খুবই ভালো ব্যাপার যে অনেক মানুষই অধিক পরিমাণে দান করছেন। কিন্তু ধনীদের ওপর উচ্চহারে করারোপের মাধ্যমে তহবিল গঠন করে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী যতটা নিশ্চিত করা যাবে, ঠিক ততটা সম্ভব নয় দানের অর্থে।’

ধারাবাহিকভাবে মার্কিন নাগরিকেরাই অন্য যেকোনো দেশের নাগরিকদের তুলনায় দাতব্য কাজে বেশি অর্থ দান করেন। তারা ২০২০ সালে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ দান করেছেন, যা পরিমাণে ৪৭ হাজার ১০০ কোটি ডলার। আবার এ কথাও ঠিক যে উন্নত দেশগুলোর জোট অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) সদস্যদেশগুলোর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই দেখা যাচ্ছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দারিদ্র্যের হার। এটি কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও লেখক জেনিফার রুবেনস্টেইন বলেন, রাজনৈতিক উদ্যোগ ও প্রাতিষ্ঠানিক দান ছাড়া দরিদ্র মানুষের ক্ষমতায়ন হয় না।

তবে জেনিফার রুবেনস্টেইনের বক্তব্যের পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ফ্রিম্যান বলেন, দাতব্য সংস্থাগুলো এখনো বিশ্বজুড়ে চরম দারিদ্র্য মোকাবিলায় সহায়তা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মধ্যে অনেকেই যা ভাবি, তার চেয়ে বেশি ধনী। আমাদের মধ্যে অনেকেই দানের মাধ্যমে জীবনে অর্থপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।’

সূত্র : প্রথম আলো (৬ ডিসেম্বর, ২০২১)

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com