আপনার বয়স কি ১৫ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে? হয়ে থাকলে আপনাকে অভিনন্দন! আপনি তরুণ, আপনি সেই বয়সে আছেন যে বয়সে কেউ, কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাষায়, ‘স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি’, যে বয়সে ‘বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি’, যে বয়স ‘বিপদের মুখে অগ্রণী’।
আসলে দুঃসাহসী উদ্যোগ বা ঝুঁকি গ্রহণে প্রয়াসী হওয়া আপনার পক্ষেই সম্ভব। কারণ তারুণ্য এক দুর্বার শক্তি, যা আপাত অসম্ভকে সম্ভব করে। এই শক্তির নিয়ন্ত্রিত ও কল্যাণকর ব্যবহারে আসে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। আর আপনি নিজে যখন বিকশিত হবেন তখন আপনার হাত ধরে জাতীয় সমৃদ্ধিই আসবে শুধু না, আপনি নিজেও হবেন সাফল্যমণ্ডিত।
তবে এ-জন্যে প্রয়োজন আত্মপ্রত্যয়, সৃজনশীলতা, মুক্ত বিশ্বাস, সঠিক জীবনদৃষ্টি আর ইতিবাচক মনোভাব।
আরো পড়ুন :
আমাদের অনেক শিক্ষার্থীরই এখন নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য নেই; থাকলেও সেটা অপূর্ণাঙ্গ। শৈশবের লক্ষ্য কৈশোরে গিয়ে বদলে যায়, সেটাও আবার বদলে যায় তারুণ্যে পৌঁছে।
জরিপে দেশের তরুণরা জীবনের যে লক্ষ্যগুলোর কথা বলেছেন তার মধ্যে সবচেয়ে ‘কমন’ দুটি হলো- উচ্চশিক্ষা এবং সরকারি চাকুরি।
ধরুন, আপনি পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলেন, পড়ালেখা শেষে সরকারি চাকুরিও পেলেন; কিন্তু এরপর?
আসলে জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ, তা অর্জনের প্রয়াস, লক্ষ্যপূরণ, তারপর আবার একটি লক্ষ্য নির্ধারণ- এই চক্রটিই আমাদের ভালো থাকার রসদ জোগায়। তাই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকতে হবে জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে।
তবে কেবল বস্তুগত প্রাপ্তি, অর্থাৎ গাড়ি-বাড়ি বা ধন-সম্পদ না, স্বাস্থ্য পরিবার আত্মিকতা ইত্যাদি বিষয়েও থাকা উচিত নির্দিষ্ট লক্ষ্য। কারণ কেবল বস্তুগত প্রাপ্তির পেছনে ছুটলে জীবন-সন্তুষ্টি কমে যায়- স্রেফ কথার কথা নয়, বহু গবেষণার ফলাফল এটা।
তাই আপনার লক্ষ্য বা মনছবি হতে পারে- আপনার পরিবার আলোকিত পরিবার হচ্ছে, আপনি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলছেন, কর্মময় সুখী জীবনযাপন করছেন, বার্ধক্যেও সুস্থ-সবল-সচল-কর্মক্ষম আছেন, নিজেকে পরিণত করেছেন লাখো মানুষের ভরসাস্থলে, যাদের অশ্রুতে আপনি নিচ্ছেন শেষ বিদায়।
উচ্চশিক্ষা নিয়ে তরুণদের মধ্যে দুটি ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি-
১. ‘অমুক’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অমুক’ সাবজেক্টে না পড়লে লাইফ শেষ, এবং
২. চাকুরিই যদি না করি তো উচ্চশিক্ষার কী দরকার!
আসলে আপনি জীবনে কী হতে চান সাবজেক্ট চয়েস হবে সেটার আলোকেই; ব্যাচের অন্যরা কী করছে, বা কোনটা ‘টপ সাবজেক্ট’ সেই বিবেচনায় নয়। এবং, পছন্দের সাবজেক্ট যেখানে পাবেন সেখানেই পড়বেন।
আর আপনি চাকুরি করেন বা না-ই করেন, উচ্চশিক্ষাকে অবহেলা করবেন না।
বলবেন, উচ্চশিক্ষা ছাড়াই তো অনেকে সফল হয়েছে! আসলে উচ্চশিক্ষা ছাড়াই আপনি সফল হতে পারেন; কিন্তু এর ঘাটতি পূরণ হবার নয়।
দেশের এক বড় শিল্পপতি। দেশে বিজনেসের পাশাপাশি বিদেশের সাথেও লেনদেন ছিল। তবে তিনি লেখাপড়া জানতেন না।
একবার এক বিদেশি ব্যবসায়ীর সঙ্গে নেগোসিয়েশন হচ্ছে। তিনি ইংরেজি না জানায় কথা যা বলার তা তার ম্যানেজারই বলছেন। অনেকক্ষণ এভাবে চলার পর ভদ্রলোকের মনে হলো, অল্প একটুর জন্যে সমঝোতা হচ্ছে না; এখন ‘ইয়েস’ বললেই হয়। তিনি অধৈর্য হয়ে ‘ইয়েস’ বলে হাত বাড়িয়ে দিলেন।
ম্যানেজার বিস্ময়ে হতবাক! কারণ নেগোসিয়েশনটিকে নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসার ঠিক আগ মুহূর্তেই তার বস ‘ইয়েস’ বলে ফেলেছে। এবং ঐ একটি ‘ইয়েস’-এর জন্যে তার ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছিলো ‘মাত্র’ দেড় কোটি টাকা!
ক্যারিয়ার প্ল্যানে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার জজ-ব্যারিস্টার বিসিএস আর ব্যাংক জবের বাইরে কিছু যেন ভাবতেই পারছে না এখনকার বেশিরভাগ তরুণ।
কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থীদের বিসিএস চাকুরির জন্যে মরীয়া প্রয়াস চালাতে দেখা যাচ্ছে। গ্রাজুয়েশন লেভেলের অনেকেই একাডেমিক পড়ালেখার চেয়ে বিসিএসের প্রস্তুতিই নিচ্ছে বেশি। ৪১তম বিসিএসে আবেদন করেছিল প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ পরীক্ষার্থী। পৃথিবীতে অন্তত ২৮টি দেশ আছে যেগুলোর জনসংখ্যা এর চেয়েও কম!
কিন্তু প্রশ্ন হলো, একেকটি পদের বিপরীতে চাকুরিপ্রার্থী ২২০ জন, চাকুরি পাবে ১ জন; তাহলে বাকি ২১৯ জনের কী হবে?
৫/৬ বার চেষ্টাতেও বিসিএসে উৎরাতে না পেরে যখন তারা অন্য কোথাও চেষ্টা করছে ততদিনে মেধার ‘ধার’ কমে গেছে। উপরন্তু সরকারি চাকুরির প্রস্তুতি নেয়ার তোড়জোড়ে একাডেমিক পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট এবং দীর্ঘকাল ‘বেকার’ থাকাটা চাকুরিদাতার মনে চাকুরিপ্রার্থীর যোগ্যতা সম্পর্কে জন্ম দিচ্ছে নেতিবাচক ধারণার।