কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ভদ্রলোক। তিনি ছিলেন একটি সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। বয়স ৫৭ বছর। চিকিৎসাধীন ছিলেন শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। হাসপাতালেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি। কোয়ান্টাম দাফন টিমের কাছে ফোন আসে সেই হাসপাতালের হটলাইন থেকে।
তৈরি হয়ে রওনা দেন স্বেচ্ছাসেবীরা। দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে তারা মৃতের পক্ষে পেলেন শুধু তার অল্পবয়সী স্ত্রী-কে। পরে জানা গেল তিনি ভদ্রলোকের দ্বিতীয় স্ত্রী। তিনি একাই হাসপাতালে সব দায়িত্ব পালন করছিলেন। গ্রামে লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্যে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থাও তিনিই করলেন।
দ্বিতীয় স্ত্রী জানালেন, ’শুরু থেকেই অসুস্থ স্বামীর পাশে কেউ ছিল না। মৃত্যুর পরও কেউ আসে নি। মানুষটির কোনো সন্তান হয় নি। প্রথম পক্ষের স্ত্রী একজন শিক্ষিকা। তার সাথেও ডিভোর্স হয় নি। কিন্তু তিনি তার স্বামীর মৃত্যুর পরও আসেন নি। সেই স্ত্রীর একটি পালক কন্যা আছে, তিনিও আসেন নি।
গ্রামে বেশ সম্মানিত এই পরিবার। কর্মজীবনেও প্রধান শিক্ষক হিসেবে কত সম্মান ছিল তার। কিন্তু করোনাভাইরাস তাকে আজ কী অবস্থার মুখোমুখি করেছে! কেউ তো আসছেই না, ফোনেও খোঁজখবর নিতে ভয় পাচ্ছে, যদি কোনো দায়িত্ব নিতে হয়!‘
স্বেচ্ছাসেবীরা লাশ পরিচ্ছন্ন করলেন হাসপাতালেই। নিয়ম অনুযায়ী ওযু গোসল করালেন, জানাজা পড়ালেন। এরপর গ্রামের উদ্দেশে রওনা হলেন।
এর মধ্যে স্বেচ্ছাসেবীরা ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেন মৃতের ভাইসহ আরো কিছু আত্মীয়ের সাথে। তারা আসতে সরাসরি অস্বীকৃতি জানালেন। অনেক বোঝানোর পরও তাদের এক কথা—’আমাদের তো পরিবার আছে, আমাদের ভালো থাকতে হবে!‘
দ্বিতীয় স্ত্রী নিজের সিদ্ধান্তে তার ভাইয়ের সাহায্যে গ্রামে কবর তৈরি করেছেন। মৃতের দুই স্ত্রী শুনে স্বেচ্ছাসেবীরা ধারণা করলেন কবরের জায়গা নিয়ে ঝামেলা হতে পারে। তাই তারা আগেই ইউএনও এবং পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়ে রেখেছেন। পুলিশ কর্মকর্তা গ্রামে চার সদস্যের ফোর্স পাঠিয়ে দেন।
আর ইউএনও নিজে উপস্থিত হয়েছেন। শহর থেকে গ্রামে যেতে প্রায় দেড় ঘণ্টা লাগল। দুপুর ১টা বাজে তখন। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে তার দাফন কাজ শেষ হলো প্রশাসনের উপস্থিতিতেই। গ্রামের হাতেগোনা দুয়েকজন মানুষ উপস্থিত ছিল। তারা একবাক্যে স্বীকার করলেন যে, মৃত ভদ্রলোক বড় ভালো মানুষ ছিলেন।
স্বেচ্ছাসেবীরা বিদায় নেয়ার সময় দ্বিতীয় স্ত্রী কান্নাজড়িত কন্ঠে বলছিলেন, ’তার স্বামী কত পরোপকারী মানুষ ছিলেন! কেউ হয়তো মেয়ে বিয়ে দিতে পারছে না, তিনি সাহায্য করেছেন।
কারো পড়ার খরচ বহনের সামর্থ্য নেই, তিনিই খরচ দিয়েছেন। অথচ তার বিদায়বেলায় আপনাদের মতো কিছু পরোপকারী মানুষ এসে সাহায্য করলেন। ধন্যবাদ জানানোর ভাষা আমার নেই।‘
Mia Mohammad Musa, Razu Ahmed and 14 others
Share