1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
  2. [email protected] : adminbackup :
বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:০৪ অপরাহ্ন

আমার বাচ্চা খায়

  • সময় বুধবার, ১৬ জুন, ২০২১
  • ১২১১ বার দেখা হয়েছে

আমার বাচ্চা খায়

মিষ্টি সেতারা লক্ষী। ডানাসহ পক্ষী।

সারাটা দিন খেলা, খাওয়া, পড়া, লেখা, ঘুম আর কাজ।

রাতের বেলা গভীর ঘুমে ভাঁজ।

সেতারা, ছোট্ট মেয়ে, আড়াই বছর হলো বয়স। খেলনা গাড়ি চালাচ্ছে আর নিজের মনে এই কথাগুলো আওরাচ্ছে। উচ্চারণ খুব স্পষ্ট নয়, কিন্তু যে শব্দের পর যে শব্দ তা ঠিক বলতে পারছে। কীভাবে পারছে? কারণ, প্রতিবার ঘুম পাড়ানোর আগে গুনগুন করে মায়ের কণ্ঠে এই ছন্দ সে শুনছে জন্মের পর মুহূর্ত থেকেই। শুনতে শুনতে কখন যে তার চোখ মুদে আসত? হয়তো এই ছড়ার কথাগুলো সে বুঝত। তা না হলে ঘুমের সময় ঘুম, খাওয়ার সময় খাওয়া, খেলার সময় হাত-পা-চোখ নেড়ে এত দারুণ ভঙ্গিমা করত কীভাবে!

সেতারার মা একজন কোয়ান্টাম গ্রাজুয়েট। ভালো ভালো কথা অটোসাজেশনের মতো করে নিজেকে শোনালে যে কত উপকার হতে পারে তা তিনি তার নিজের জীবনেই দেখেছেন। অনেক ভীতু টাইপের ছিলেন ছোটবেলা থেকেই। চলতে ভয়, কইতে ভয়, ভূতের ভয় (!), পরীক্ষাকে ভয়, সাপের ভয়-কোনো ভয়েরই কমতি ছিল না। তিনি যখন থেকে মেডিটেশন শুরু করলেন, অটোসাজেশন দিতে থাকলেন-আমি বিশ্বাসী, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক; পরিস্থিতি একটু একটু করে বদলাতে শুরু করল। একদিনে হয় নি, কিন্তু ধাপে ধাপে। যে-ই তিনি সামান্য কেঁচো (যদিও ভূমির উর্বরতায় অসামান্য অবদান রাখে, তবে অতি নিরীহ বোঝাতেই সামান্য শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে) দেখে পাড়া কাঁপিয়ে ফেলতেন চিৎকারে, সেই তিনি এক ঝড়োবৃষ্টির সময় গ্রামের বাড়িতে তার পা ঘেঁষে চলে যাওয়া সাপ দেখেও টু শব্দটি করেন নি। কেন? মস্তিষ্ক এখন আর সাপ, কেঁচো দেখার সাথে সাথে ভয়ের অনুভূতির সংযোগ করিয়ে দেয় না। বরং পরিস্থিতিকে সহজ স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়ার এক দারুণ সামর্থ্য সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্যে। ভালো কথা আর গালমন্দের মধ্যে পার্থক্য এখানেই। ভালো কথা জয় আনে, মন্দ কথা ক্ষয় করে।

এই লেখাটির শিরোনাম দেখে অনেক মা নিশ্চয়ই খুব আগ্রহ নিয়ে পড়তে শুরু করেছেন ভেতরের কথাগুলো, যদি কোনো টিপস পাওয়া যায় বাচ্চাকে খাওয়ানোর। তারা এতক্ষণে হয়তো ভাবছেন, বাচ্চার কথা না বলে বাচ্চার মায়ের কথা শুনে কী হবে। আমার চিন্তা, আমার দৌড়াদৌড়ি সব তো বাচ্চাকে খাওয়ানোর জন্যে। আসলেই তো ঠিক, বাচ্চা খাবে। কিন্তু কী খাবে? অবশ্যই ঘরে তৈরি পুষ্টিকর খাবার। এই খাবারটা যাবে কোথায়? বাচ্চার মুখ থেকে পাকস্থলীতে, তারপর সেই খাদ্যপুষ্টি ছড়িয়ে পড়বে সারাদেহে। ইদানীং অধিকাংশ মায়েদের তার বাচ্চা নিয়ে যদি কমন একটি অনুযোগ থাকে তাহলে সেটা কী? আমার বাচ্চা কিচ্ছু খেতে চায় না। না খেলে কি চলে? তাই ডিম সেদ্ধ দাও, তা না খেলে ডিম পোচ, তা না খেলে ডিম ভাজি, তা না খেলে চিনির মতো বিষ দিয়ে করো ডিম মামলেট। প্রতি দফায় একটি ডিম খাওয়ানোর জন্যে রেডি থাকে আরো তিনটি বিকল্প ডিম। এভাবে দিনে চারটি ডিম হলে মাসে লাগে ১২০০ ডিম। ডিমের এই বাড়তি খরচ না করে যদি একটু ভালো কথা একটু মমতা দিয়ে একটু শ্রম ব্যয় করে আমাদের প্রিয় মায়েরা বলতেন তাহলে এক বাচ্চার পেছনে ৩০টি ডিমেই মাস চলতো বেশ।

কী সেই কথা? তুমি খুব ভালো, খাবার দিলেই খেয়ে ফেলো।

ব্যস, এটুকুই? জ্বী এটুকুই। বলেই দেখুন না টানা এক মাস। যত মমতা নিয়ে সুন্দরভাবে বলবেন, বিশ্বাসের সাথে বলবেন, তত দ্রুত এই কথার আছর তার মধ্যে পড়বে। কখন বলবেন সেটাও জানতে হবে। যখন সে ঘুমিয়ে পড়ছে, তন্দ্রা তন্দ্রা ভাব তখন এবং যখন সে ঘুম থেকে উঠছে তখন। চুলে বিলি কাটতে কাটতে এসময় আপনি তাকে যা যা ভালো কথা, যা উচিত কথা, তার করণীয়ের কথা, তার বোঝার মতো করে বলুন। সবচেয়ে কাজে আসবে অটোসাজেশন কণিকা বা বইয়ের অটোসাজেশনগুলো। বইয়ে ১০০১টি অটোসাজেশন আছে, আপনার পছন্দ ও প্রয়োজন বুঝে প্রতিবার ঘুমের আগে সেখান থেকে একটি/ দুটি করে বলুন। আর সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন কর্মব্যস্ত সুখী জীবন-এই দারুণ অটোসাজেশন তো আছেই। সেইসাথে আছে আমি বিশ্বাসী, আমি সাহসী। আমি পারি, আমি করব। আমার জীবন আমি গড়ব। বলতে থাকুন; সূর্য উঠলে যেমন সবাই দেখতে পায়, তেমনি আপনার হাসিখুশি, উচ্ছল, প্রাণবন্ত, তরতাজা সন্তানকে দেখে একদিন আপনি নিজেই মুগ্ধ হয়ে যাবেন।

ওড়ার জন্যে পাখির দুটো ডানাকেই ঠিক থাকতে হয়। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে যতটা না শরীর তারচেয়ে বেশি মন ভালো থাকতে হয়। যে কারণে বলা হয়-মন ভালো তো সব ভালো। নিজের বেলাতেই দেখুন, যেদিন মনটা খারাপ ছিল সামনে বিরিয়ানি দেখেও খিদে লাগে নি। আর যেদিন মনটা ভালো ছিল, সেদিন আলু ভর্তা-ডাল দিয়েই কী সুন্দর খেয়ে নিয়েছিলেন। শিশুর যেমন হাত-পা আছে। তারও তো মন আছে। আছে আত্মসম্মানবোধ। সবার সামনে যখন তার সম্পর্কে অভিযোগ, আক্ষেপ করা হয়-সে খায় না, খেতে চায় না, তখন তার সম্মানটা কোথায় নামে! তাই সে না খেতে চাইলেও অন্যদের সামনে সবসময় বলতে হবে, আমার বাচ্চা খায়। এটুকুও যদি বলতে না চান তাহলে একেবারে মৌন থাকুন। ওর খাবারের খতিয়ান তো কেউ জানতে চাইতে আসেন নি। অন্যদের সামনে শিশু কোনো খাবার না খেলে বেজারমুখে নয়, হাসিমুখে বলুন-মনে হয় একটু পরে খাবে।

হতে পারে এটি সত্যি। একটু পরে খিদে লাগলে নিজেই এসে আপনাকে বলবে, মাম্মি খাবো। পারলে খাওয়ানোর আগে তার সাথে দৌড়াদৌড়ি করুন। এক্সারসাইজ খিদে বাড়ায়। কখনো খেতে গিয়ে সে যদি না বলে বড়জোর দুবার চেষ্টা করুন। ডাইনিং টেবিলে বসা থাকলে চলে আসুন খাটে, দস্তরখান বিছিয়ে বসুন। কিংবা জানালার ধারে দাঁড় করান। কিংবা বারান্দায় নিয়ে বসান। রাস্তা দেখান, রিকশা/ গাড়ি দেখান, আকাশ দেখান, বিমান দেখান, কাক দেখান, আরো ভালো হয় হাঁড়-কাটাগুলো কাককে দিয়ে দিন। দানের এই বরকতে সে ঠিকই খেয়ে নেবে।

তবে করজোড়ে অনুরোধ করছি, কার্টুন দেখিয়ে, মোবাইল/ ট্যাব বা এ জাতীয় ডিভাইসের সাহায্য নিয়ে তাকে খাওয়াবেন না। এগুলো আপনার যতটা না উপকার করবে তারচেয়ে বেশি ক্ষতি করবে। কী ক্ষতি-এ নিয়ে জানতে চাইলে সহজেই জানতে পারবেন। সে প্রসঙ্গে আর না যাই। শুধু একজন বিশেষজ্ঞের কথা বলি যাকে বাংলাদেশের অনেকেই চেনেন, না দেখলেও অন্তত তার নামটা শুনেছেন। প্রখ্যাত নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ও সার্জন অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত একবার আক্ষেপ করে বলেছিলেন, মোবাইলে ভিডিও দেখিয়ে মায়েরা এই যে একঘণ্টা ধরে বাচ্চাকে খাওয়ান, তাতে যতটা না পুষ্টি বাচ্চা খায়, তারচেয়ে বেশি খায় রেডিয়েশন। শুধু তাই নয়, এই যে অভ্যাস গড়ে উঠবে, শেষ পর্যন্ত মোবাইল, ট্যাব না পেলে খেতেই চাইবে না। আর সেই খাওয়া তার শরীরে কেজি কেজি মাংস বাড়াবে, কিন্তু সুঠাম স্বাস্থ্য গড়বে না। সে কী খাচ্ছে, খাবারটির স্বাদ-গন্ধ কেমন, রঙের তফাৎ কতটা এগুলোকে বুঝতে দিতে তাই খাওয়ার সময় সব ধরনের স্ক্রিনকে না বলুন।

শিশুরা বৈচিত্র্য পছন্দ করে। তাই একই সব্জি একেকদিন খানিকটা ভিন্ন ধাঁচে রান্না করে দিন। সেইসাথে তাকে নিয়ে কাঁচাবাজারে যান। সবজি চেনান। খাওয়ার সময়ও শাক-সবজি খেলে কী উপকার তা তাকে বলুন। জাগ্রত অবস্থায় তো আমরা বলিই, সবচেয়ে কাজে আসবে ঐ যে ঘুমের আগে-পরে তন্দ্রা ভাবের সময় বলাটা। কারণ, অবচেতন মনকে কথা শোনানোর সবচেয়ে সুন্দর সময় সেটি। আর একবার অবচেতন মনে তথ্য গেঁথে গেলে সে নিজেই বলতে শুরু করবে-ফলে বাড়ে বল, শাকে বাড়ে মল। শুধু শাক কেন, আপনার দেড় বছরের শিশু করলাও খেতে চাইবে শখ করে, লেবু-পানি ঢকঢক করে গিলবে, চিনির মতো বিষ মিশিয়ে দেয়ার জন্যে আবদার করবে না। এগুলো গল্পের মতো শোনাচ্ছে, তাই না! কিছুদিন চর্চা করে দেখুন। আপনিও আরেক মায়ের কাছে এই গল্প করবেন। সেদিনের অপেক্ষায় রইলাম!

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com