বাল্যশিক্ষার গল্পে বলা হয়েছিলো যে, বাবার ৫ ছেলে। মৃত্যুশয্যায় বাবা প্রত্যেক ছেলেকে ডাকলেন। বাঁশের কঞ্চির আঁটি হাতে দিয়ে বললেন, ভাঙতে। ছেলেরা চেষ্টা করলো, কিন্তু ভাঙতে পারলো না। এরপর বাবা আঁটি থেকে কঞ্চিগুলো খুলে প্রত্যেকের হাতে একটি করে কঞ্চি দিয়ে বললেন, এবার ভাঙো তো। ছেলেরা অবলীলায় কঞ্চিগুলো ভেঙে ফেললো। তখন বাবা বললেন, তোমরা যদি সঙ্ঘবদ্ধ থাকো তাহলে তোমাদের কেউ পরাজিত করতে পারবে না, আর যদি বিচ্ছিন্ন হও তাহলে তোমাদেরকেও সবাই বাঁশের কঞ্চির মতো ভেঙে ফেলবে। প্রকৃতিতেও দেখেন, যেখানে সঙ্ঘবদ্ধতা সেখানেই শক্তি।
একা একটি মৌমাছি কতটুকু মধুই বা সংগ্রহ করতে পারে। কিন্তু সঙ্ঘবদ্ধ থাকার কারণে তারা মধু আহরণ করে তা সংরক্ষণ করতে পারে। অথচ প্রজাপতিও মধু সংগ্রহ করে কিন্তু একা হওয়ার কারণে সে তা সংরক্ষণ করতে পারে না। এজন্যে মৌমাছি আত্মরক্ষা করতে পারে, লড়তে পারে, আক্রমণ করে ঝাঁকে ঝাঁকে।
আমি থেকে আমরায় রূপান্তরের পথে বাধা :
সংকীর্ণ স্বার্থ চিন্তা। বড় কিছু পেতে হলে অবশ্যই কিছু ছাড় দিতে হয়। নিজের প্রয়োজনের চেয়ে সহকর্মীদের প্রয়োজনকে আগে দেখতে হয়।
নিজেকেই বড় মনে করা। আমি কি হনুরে না ভাবা। অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হলে আপনি কখনও বড় হতে পারবেন না। কারণ আল্লাহ অহংকারীকে পদানত করে আর বিনয়ীকে সমুন্নত করে ।
অন্যের মতামতকে গুরুতব না দেয়া।
প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক মনোভাব।
অসহিষ্ণুতা ও মানিয়ে নেবার ক্ষমতার অভাব।
কেন আমি থেকে আমরায় রূপান্তরিত হবো :
সঙ্ঘে প্রত্যেকের অর্জন হয় বিশাল :
কোয়ান্টাম বিশ্বাস করে, একটি মস্তিষ্কের চেয়ে দশটি মস্তিষ্ক অনেক বেশি শক্তিশালী। সঙ্ঘ সবসময় এই সুযোগ গ্রহণে এগিয়ে থাকে। অনুভব করে- টুগেদার ইচ অভ আস এচিভ মোর।
মানবীয় গুণকে উন্নত করে :
একজন মানুষ যা নিয়ে অহংকার করে তা-ই তার পতনের কারণ হয়। সঙ্ঘে থেকে অহংকারী হবার সুযোগ কম। সঙ্ঘে থেকে অপরের কাজের স্বীকৃতি দিতে শিখবেন। হযরত আলী (রা) বলেছেন, যে লোক বিনয়ী সে কখনও নিঃসঙ্গ হয় না।
সঙ্ঘ জীবনের লক্ষ্যকে মহান করে :
একজন মানুষ আসলে ততটাই বড় যতটা বড় তার লক্ষ্য। কোয়ান্টামে আসার পরে আমরা ভাবতে শিখেছি, সারা পৃথিবী আমার। যেখানে দরকার সেখানে যাবো, যা প্রয়োজন তা-ই নেবো। সঙ্ঘে থেকে শুধু সঙ্ঘের প্রধান ব্যক্তিরাই যে বড় হন তা নয়, যারা সঙ্ঘে থাকেন সেই ব্যক্তিবর্গরাও বড় হন। যেমন : নবীজীর নামের সাথে হযরত আবু বকর, হযরত ওমর, হযরত ওসমান এবং হযরত আলীর নামও চলে আসে।
মেধা বিকাশের চমৎকার প্লাটফর্ম : জন্মগতভাবে প্রত্যেকে মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও কিছু কিছু মানুষ মেধার বিচ্ছুরণ ঘটাতে পারেন। অধিকাংশ মেধাবীরা মেধার গর্ভে হারিয়ে যান। কারণ তারা নিজেকে নিয়মের মধ্যে আনতে পারেন না। সঙ্ঘে থেকে মানুষ মনে করেন, নিয়ম সবার জন্যেই সমান। আমি নিয়মের ব্যতিক্রম এটি ভাবার কোনো সুযোগ এখানে নেই। আর মেধার বিকাশের জন্যে সঙ্ঘ হচ্ছে এমনই একটি প্লাটফর্ম।
নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন সহজ হবে : কেরানি যে কেউ হতে পারে কিন্তু ব্যবস্থাপক সবাই হতে পারেন না। সারা পৃথিবীতে কর্মী হিসেবে আমাদের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে কিন্তু আমরা জানি না কীভাবে হাজারো মানুষের মেধা, সময়, শ্রমকে কাজে লাগিয়ে কাজটি উঠিয়ে নিতে হয়। সঙ্ঘে না থাকলে আপনি জানবেন না কীভাবে দায়িত্ব নিতে হয়, কীভাবে নেতৃত্ব দিতে হয় এবং কীভাবে নেতৃত্বকে অনুসরণ করতে হয়।
সেবক হবার মানসিকতা তৈরি হবে : শুধু পরিবারে বেড়ে উঠে আপনি সেবক হতে পারবেন না। কারণ পরিবারের অধিকাংশ সদস্যরা চিন্তা করে, আমার জন্যে কে কী করেছে। আর কে কী করতে পারতো। সঙ্ঘে এসে আপনার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হবে। আপনি চিন্তা করবেন- আমি নিজেকে কতটা উজাড় করে দিতে পারি। পৃথিবীর সকল মহামানব ছিলেন সর্বোত্তম সেবক। যে কারণে তারাই মেধার স্ফূরণ বেশি ঘটাতে পেরেছেন।
সঙ্ঘের সাথে স্রষ্টার রহমত থাকে : নবীজী সবসময় সঙ্ঘবদ্ধ থাকতে উৎসাহিত করেছেন। এমনকি তিনি বলেছেন, তোমরা তিনজন একত্রিত হলে একজনকে নেতা বানাও। তিনি বলেছেন, তোমরা সঙ্ঘবদ্ধ থাকো কারণ সঙ্ঘের সাথে স্রষ্টার রহমত থাকে।