আমার বড় ভাই ভানরাম বম। আমার আগে কোয়ান্টাম কসমো স্কুলে ভর্তি হন তিনি। এরপর ২০০৭ সালে আমি ভর্তি হই। তারপর শুরু হয় আমার কোয়ান্টা জীবন। কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজ থেকেই আমি পিইসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করেছি।
বড় ভাইও এখান থেকে এইচএসসি শেষ করে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডমিশনের প্রস্তুতির সময় ভাই আমার পাশে সবসময় ছায়ার মতো ছিলেন, এজন্যে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। এছাড়াও আমার ও পরিবারের জন্যে ভাই অনেক কষ্ট করেছেন। সে বরাবরই একজন ভালো হ্যান্ডবল খেলোয়াড়। স্কুলে থাকতেও ভালো খেলেছে, এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট খেলে অর্জিত অর্থ মাকে প্রায় সময় পাঠান। তাই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি—আমাদের দুই ভাইয়ের এই সম্পর্কটা যেন সারাজীবন অটুট থাকে।
আমি প্রায় ১৪ বছর কোয়ান্টামে থেকেছি। ফলে অনেক কিছু শিখেছি। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি ধ্যানের মাধ্যমে নিজের মনছবিকে স্থির করা। আসলে একজন মানুষকে বড় কিছু করতে হলে অবশ্যই লক্ষ্যস্থির করা প্রয়োজন।
তাই বলে জীবনকে উপভোগ করতে কার্পণ্য করি নি। ছোটবেলায় বন্ধুদের সাথে খুব মজা করেছি। মাঝে মাঝে ভাবতাম সেই অতীতের সময়টা যদি আবার ফিরে পেতাম! ক্যাম্পাসে আমি সবসময় হাসিখুশি থাকতাম। সেইসাথে বন্ধু, সহপাঠী, সিনিয়র, জুনিয়র যারই মন খারাপ থাকত, সুযোগ পেলে তার কাছে গিয়ে হাসির কথা বলে তার মন ভালো করে দিতাম।
আমি ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছি এবং উত্তীর্ণ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিই। মনছবিও ছিল যে, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাব এবং ঈশ্বরের আশীর্বাদে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলার মৃৎশিল্প বিভাগে চান্স পেয়েছি। আমি এখান থেকে ভবিষ্যতে আরো ভালো কিছু করতে চাই। আমি পড়াশোনা শেষ করে নিজেকে সৃষ্টির সেবায় উৎসর্গ করতে চাই। এছাড়া আমি জীবনের অন্যান্য দিকগুলোতেও সাফল্য অর্জন করতে চাই।
কোয়ান্টামমে আমার একটা মজার কাহিনী আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। সেটা হচ্ছে—আমি যখন ২০০৭ সালে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসি তখন আমার ছোট চাচার সাথে আসি। তখনকার দিনে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ছিল না। তেমন কোনো যানবাহন পাওয়া যেত না। তারপর আবার পায়ে হেঁটেও যেতে হতো অনেকটা রাস্তা। তখন আমিরাবাদ থেকে কোয়ান্টামম পর্যন্ত আসতে প্রায় সারাদিন লেগেছিল আমাদের। কিন্তু এখন যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নতি হওয়ায় ঘণ্টাখানেক সময়ও লাগে না। আগের চিত্র আর এখনকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
কোয়ান্টামম এখন অনেক উন্নত। আসলে শূন্য থেকে শুরু হওয়া একটি জায়গা কীভাবে ফুলে-ফলে বিকশিত হলো, এটা আমি আমার চোখের সামনে দেখলাম। দেশের দুর্গম একটি জায়গা পরিণত হলো আলোকিত এক জনপদে। দিন দিন যার আলো আরো ছড়িয়ে পড়ছে। এখনই যদি কোয়ান্টামমের আলো এতটা ছড়াতে পারে, তাহলে আরো ১০ কিংবা ২০ বছর পর কী হবে তা ভাবতে অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে।
[ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন থেকে ২০২৪ সালে প্রকাশিত ‘সব সম্ভব’ বই থেকে ]