আমার টাকা আমি ইচ্ছেমতো দান করতে পারি। দান করা বা না করার ক্ষেত্রে আমি স্বাধীন।যে-কোনো একটা জায়গায় দান করলেই তো হলো!আমার সামান্য দানে সমাজ কতটুকুই-বা বদলাবে? |
দান শুধু ধনীদের জন্যে নয়। বরং নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ধনী-গরিব সবার জন্যেই। প্রতিটি শাশ্বত ধর্মের শিক্ষা হলো, সচ্ছল অবস্থায় যেমন দান করতে হবে, তেমনি অসচ্ছল অবস্থাতেও দান করতে হবে।
কোনো কাজ, কোনো উদ্যোগ, কোনো দানই সামান্য নয়। অগণতি মানুষরে সামান্য প্রচষ্টো জড়ো হয়ইে সমাজ বদলায়, জাতি এগয়িে যায়। আবার অনকে মানুষরে সামান্য অপচয়, সামান্য অনতৈকিতা মিলেই ঘটে জাতিগত পতন। তাই আজ দানরে সার্মথ্য কম বলে হীনম্মন্যতায় ভোগার প্রয়োজন নইে। যার সদচ্ছিা থাকে, দিন দিন তার সার্মথ্যও বাড়তে থাক। পৃথিবীর ইতহিাস র্পযালোচনা করলেও আমরা দেখি, যুগে যুগে সবচয়েে ধনীরা কিন্ত সমাজরে বাঁকবদল ঘটান নি; বরং কল্যাণচন্তিায় উদ্বুদ্ধ সাধারণ মানুষরোই যখন সীমতি সার্মথ্য ও উপকরণ একত্রতি করে দুস্থ-অসহায়রে পাশে দাঁড়াতে চেয়েছে, সমাজে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন।
এটি যুক্তিবিরুদ্ধ নয়। প্রকৃতিবিরুদ্ধও নয়। প্রকৃতির নিয়মই হচ্ছে, যখন কোথাও শূন্যতা সৃষ্টি হয় তখন চারদিক থেকে সে জিনিস এসে শূন্যতা পূরণের চেষ্টা করে। যেমন, বাতাস যখন হঠাৎ গরম হয়ে ওপরের দিকে উঠে যায়, সে ফাঁকা স্থান পূরণের জন্যে চারদিক থেকে বাতাস আসতে থাকে। বাতাসের বেগ বাড়তে থাকে। ঝড় সৃষ্টি হয়। বাজার অর্থনীতির নিয়মও হচ্ছে, কোনো সামগ্রীর অভাব সৃষ্টি হলে বিক্রেতারা সেদিকে ঝুঁকে পড়ে। ফলে চারদিক থেকে তা আসতে শুরু করে। একইভাবে দান করলে আসে আর্থিক সমৃদ্ধি।
অসুস্থ হলে আপনি ভালো ও দক্ষ ডাক্তারের কাছে যান, নাকি ডাক্তার মুসলমান হিন্দু না খ্রিষ্টান—এটা বিচার করেন? মামলায় জড়ালে আইনজীবীর ধর্ম বিচার করেন, নাকি তার যোগ্যতা? একইভাবে ধরুন, সড়ক দুর্ঘটনায় কিছু মানুষ আহত হলো। অমুসলিমদের রেখে শুধু মুসলিমদের আপনি হাসপাতালে নিয়ে যাবেন? আপনার বিবেক কি তাতে সায় দেবে? প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আপনি বিপন্ন মানুষের ধর্ম জিজ্ঞেস করবেন, নাকি তাকে উদ্ধার করবেন? তেমনি দান পাওয়ার জন্যে যে সবচেয়ে উপযুক্ত, অর্থাৎ সবচেয়ে অবহেলিত- বঞ্চিতকেই দান করতে হবে। এখানে তার ধর্মাধর্ম বিচার করা অমানবিক।
আমরা যাদের ভিক্ষুক মনে করি, তারা আসলে পেশাদার ভিক্ষুক। ভিক্ষাবৃত্তি এখন একটা ব্যবসা। এমন কোনো নজির নেই যে, কোনো ভিক্ষুক স্বাবলম্বী হয়ে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করে দিয়েছে।
নবীজী (স) ভিক্ষাবৃত্তিকে সবসময় নিরুৎসাহিত করেছেন। প্রতিটি ধর্মেই দানের মাহাত্ম্য সম্পর্কে যে কথা বলা হয়েছে, আমাদের সমাজে প্রচলিত ভিক্ষাবৃত্তি কোনোভাবেই তার আওতায় পড়ে না। দান ও যাকাতের উদ্দেশ্য হলো মানুষের দুর্দশা মোচন করা এবং তাকে স্বাবলম্বী করা। অথচ আপনি যদি সচেতনভাবে খেয়াল করেন, দেখবেন বছরের পর বছর একই জায়গায় একই লোক ভিক্ষা করছে। অর্থাৎ সহজে উপার্জনের একটি মাধ্যম হলো ভিক্ষাবৃত্তি। দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন-এ প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, ভিক্ষাবৃত্তি হলো বিনা পুঁজিতে ব্যবসা। বাংলাদেশের শতকরা ৯৮ ভাগ ভিক্ষুক প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ভিক্ষা করে (২২ ডিসেম্বর ২০১৮)। ভিক্ষুককে প্রতিদিন অর্থদান করে আপনি মূলত সমাজে পরগাছা তৈরিতেই সাহায্য করছেন। অতএব নিজেই ভেবে দেখুন—এটি সৎদান হচ্ছে কিনা।
আপনি যা পেতে চান, তা-ই আগে আপনাকে দিতে হবে। অর্থ চাইলে অর্থ দান করতে হবে। সম্মান পেতে হলে অন্যকে সম্মান করতে হবে। হাসিমুখ দেখতে চাইলে আগে নিজেকে হাসতে হবে। যা দান করবেন প্রাকৃতিক নিয়মেই তা বহুগুণে আবার ফিরে আসবে আপনার কাছে। দানের এ প্রতিদান সার্বজনীন, ধর্মবর্ণগোত্র নির্বিশেষে সবার জন্যে।
প্রাকৃতিক নিয়মে বাতাসের শূন্যতা যেভাবে ঝড় সৃষ্টি করে, তেমনি সাফল্যের কোয়ান্টাম সূত্র অনুসারে দানও আপনার প্রাচুর্যের প্লাবন সৃষ্টি করে। যত বিলিয়ে দেবেন তত সে শূন্যস্থান পূরণের জন্যে চারপাশ থেকে সৌভাগ্য আপনার দিকে আসতে থাকবে। যত যক্ষের মতো আঁকড়ে রাখবেন তত অভাববোধ, নিরাপত্তাহীনতা ও ভয়-আতঙ্ক বাড়তে থাকবে।