ঘটনাবলি
১৯৩৫ : বেলুড় মঠে রামকৃষ্ণ মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়।
জন্ম
১৭৫০ : ক্যারোলিন হার্সেল, ব্রিটিশ-জার্মান অ্যাস্ট্রোনমার।
১৮৮০ : রাজশেখর বসু, বাঙালি সাহিত্যিক, অনুবাদক, রসায়নবিদ ও অভিধান প্রণেতা।
১৯৫০ : কবীর সুমন, বাঙালি গায়ক।
১৯৫৩ : রিচার্ড স্টলম্যান, মার্কিন প্রোগ্রামার, মুক্ত সোর্সের প্রবক্তা ও গ্নু ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা।
মৃত্যু
২০০৭ : বাংলাদেশি ক্রিকেটার মানজারুল ইসলাম রানা।
২০১৩ : বাংলাদেশি পদার্থবিজ্ঞানী ও গণিতবিদ ড. জামাল নজরুল ইসলাম।
ড. জামাল নজরুল ইসলাম
অধ্যাপক ড. জামাল নজরুল ইসলাম ছিলেন বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ। তিনি ছিলেন গণিতবিদ ও বিশ্বতত্ত্ববিদ। মহাবিশ্বের উদ্ভব ও পরিণতি বিষয়ে মৌলিক গবেষণার জন্যে বিশেষভাবে খ্যাত। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের মধ্যে মৌলিক বিজ্ঞানে তার মতো অবদান আর কারো নেই। বিশ্ব বিজ্ঞানেও তিনি ছিলেন বাংলার গর্ব।
জন্মগ্রহণ করেন বাবার কর্মক্ষেত্র ঝিনাইদহে ১৯৩৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। স্কুল জীবনের শুরু কলকাতায়। সেখান থেকে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে কিছুদিন, শেষে পাকিস্তানের লরেন্স কলেজ থেকে সিনিয়র কেমব্রিজ পাস করেন। বিএসসি সম্মান ডিগ্রি অর্জন করেন কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে। এরপর বৃত্তি নিয়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতে ট্রাইপজে তিন বছরের কোর্স দুই বছরে শেষ করেন। ১৯৬০ সালে কেমব্রিজ থেকেই মাস্টার্স। ১৯৬৪ সালে সেখান থেকেই প্রায়োগিক গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ড. ইসলাম অত্যন্ত দুর্লভ ও সম্মানজনক ডক্টর অব সায়েন্স বা ডিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। ছাত্রজীবনে তার সমসাময়িক ও আজীবনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন বিস্ময়কর বিজ্ঞান-প্রতিভা স্টিফেন হকিং।
জামাল নজরুল ইসলাম ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরাল ফেলো ছিলেন। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত কেমব্রিজ ইনস্টিটিউট অব থিওরেটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমিতে গবেষণা করেছেন। ১৯৭১-৭২ দুই বছর ক্যালটেক বা ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ভিজিটিং অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ১৯৭৩-৭৪ সালে লন্ডনের কিংস কলেজে ফলিত গণিতের শিক্ষক, ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে সায়েন্স রিসার্চ ফেলো এবং ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত মনে সিটি ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করেছেন।
এর মধ্যে জামাল নজরুল ইসলামের অনেক গবেষণা নিবন্ধ বিখ্যাত সব বিজ্ঞান জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং ১৯৮৩ সালে তার গবেষণা গ্রন্থ দ্য আল্টিমেট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হলে সারা বিশ্বের কসমোলজিস্টদের মধ্যে হইচই পড়ে যায়। দ্রুত বইটি পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়। পরের বছর কেমব্রিজ থেকেই প্রকাশিত হয় ক্লাসিক্যাল জেনারেল রিলেটিভিটি। তার গবেষণা আইনস্টাইন-পরবর্তী মহাবিশ্ব গবেষণায় বিরাট অবদান রেখেছে। তিনি এই ধারায় গবেষণা অব্যাহত রেখে পরবর্তীকালে লেখেন ফার ফিউচার অব দ্য ইউনিভার্স বা মহাবিশ্বের দূরবর্তী ভবিষ্যৎ।
সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহ কখনো এক সরলরেখায় এলে পৃথিবীর ওপর তার প্রভাব পড়বে কি না, তা নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। তবে গবেষণায় প্রফেসর ইসলাম আশার কথাই শুনিয়েছিলেন—সে রকম ঘটার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কেমব্রিজ এবং পশ্চিমে শিক্ষার গবেষণা ও অধ্যাপনায় থাকাকালে তার বন্ধু ও সুহৃদমহল গড়ে ওঠে বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানীদের নিয়ে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন তার শিক্ষক ফ্রিম্যান ডাইসন, পদার্থবিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যান, ভারতের সুব্রহ্মনিয়াম চন্দ্রশেখর, পাকিস্তানের আবদুস সালাম, ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ও অমিয় বাগচী, তার সহপাঠী জয়ন্ত নারলিকার, ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জিম মার্লিস প্রমুখ।
১৯৮৪ সালে প্রফেসর ইসলাম তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিলেন। পশ্চিমের উন্নত দেশে ৩০ বছরের অভ্যস্ত জীবন, সম্মানজনক পদ, গবেষণার অনুকূল পরিবেশ, বিশ্বমানের গুণীজন সাহচর্য এবং আর্থিকভাবে লোভনীয় চাকরি ছেড়ে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে দেশে ফিরে এলেন। এলেন একেবারে নিজ জেলা চট্টগ্রামে। অতি দামি চাকরি ছেড়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে যোগ দিলেন মাসিক তিন হাজার টাকা বেতনে।
দেশে ফেরা সম্পর্কে তিনি এক জায়গায় লিখেছেন, ‘স্থায়ীভাবে বিদেশে থাকার চিন্তা আমার কখনোই ছিল না। দেশে ফিরে আসার চিন্তাটা প্রথম থেকেই আমার মধ্যে ছিল, এর ভিন্নতা ঘটেনি কখনোই। আরেকটা দিক হলো বিদেশে আপনি যতই ভালো থাকুন না কেন, নিজের দেশে নিজের মানুষের মধ্যে আপনার যে গ্রহণযোগ্যতা এবং অবস্থা সেটা বিদেশে কখনোই সম্ভব ছিল না।’
দেশে ফিরে জামাল নজরুল ইসলাম গড়ে তুলেছেন উচ্চতর বিজ্ঞান গবেষণাগার আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান গাণিতিক ও ভৌতবিজ্ঞান গবেষণাকেন্দ্র বা রিচার্স সেন্টার ফর ম্যাথমেটিক্যাল অ্যান্ড ফিজিক্যাল সায়েন্স (আরসিএমপিএস)।
মানবতাবাদী এই মানুষটি বিশেষত চট্টগ্রাম সমাজের নানা সংস্থা ও উদ্যোগে জড়িয়ে পড়েন। তার মূল্যবান সময়ের অনেকখানিই এভাবে ব্যয়িত হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা তাকে চিন্তিত রাখত। সমাজে হিংসা ও হানাহানি, ক্ষমতাবানের দৌরাত্ম্য, চরমপন্থা ও অসহিষ্ণুতার প্রকোপ তাকে খুবই কষ্ট দিত। মানুষের মধ্যে লোভ আর স্বার্থপরতা দেখলেও তিনি খুব মনঃকষ্টে ভুগতেন।
মহান এ বিজ্ঞানী ২০১৩ সালের ১৬ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত