গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ২৪১তম (অধিবর্ষে ২৪২তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
ঘটনাবলি
১৮৩১ : মাইকেল ফ্যারাডে তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ আবিষ্কার করেন।
১৮৩৫ : অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন নগর স্থাপিত হয়।
জন্ম
১৮৬২ : মরিস মাতেরলিঙ্ক, নোবেলজয়ী কবি ও নাট্যকার।
১৯০৪ : ভারনার ফ্রোসমান, নোবেলজয়ী জার্মান চিকিৎসক।
১৯৫৮ : মাইকেল জ্যাকসন, আমেরিকান গায়ক, গীতিকার এবং ড্যান্সার।
মৃত্যু
১৯৭৬ : কাজী নজরুল ইসলাম, বাঙালি লেখক, সাহিত্যিক, বিদ্রোহী কবি ও বাংলাদেশের জাতীয় কবি। (বাংলা ও ইংরেজি ক্যালেন্ডার সমন্বয়ের কারণে গত ২৭ আগস্ট তার প্রয়ান দিবস পালিত হয়।)
১৯৯৭ : কংসারী হালদার, পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার তেভাগা আন্দোলনের খ্যাতনামা নেতা ও এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
১৯৯৯ : মোহনানন্দ ব্রহ্মচারী, ভারতীয় বাঙালি ধর্মগুরু ও যোগী পুরুষ।
২০২১ : বুদ্ধদেব গুহ, প্রখ্যাত বাঙালি সাহিত্যিক।
বুদ্ধদেব গুহ
বুদ্ধদেব গুহ ছিলেন একজন বাঙালি লেখক। মূলত বন, অরণ্য এবং প্রকৃতি বিষয়ক লেখার জন্যে তিনি পরিচিত। শিশু সাহিত্যিক হিসেবেও তিনি ছিলেন জনপ্রিয়।
জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৬ সালে। ছোটবেলা কেটেছিল বাংলাদেশের বরিশাল ও রংপুরে। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সুপরিচিত সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াশোনা করেন। তার সহধর্মিনী প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়িকা ঋতু গুহ।
চাটার্ড অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পেশাগত জীবনের শুরু। পশ্চিমবঙ্গের আয়কর বিভাগের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য ছিলেন। আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রের অডিশন বোর্ডের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের সদস্য ছিলেন তিনি। বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবনে পরিচালন সমিতির সদস্যও নিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি। বুদ্ধদেব গুহ খুব সুন্দর ছবি আঁকতেন। নিজের লেখা একাধিক বইয়ের প্রচ্ছদ তিনি নিজেই এঁকেছেন। গায়ক হিসেবেও তিনি জনপ্রিয় ছিলেন।
বহু বিচিত্রতায় ভরপুর এবং অভিজ্ঞতাময় ছিল তাঁর জীবন। ইংল্যান্ড, ইউরোপের প্রায় সমস্ত দেশ, কানাডা, আমেরিকা, হাওয়াই, জাপান, থাইল্যান্ড ও পূর্বআফ্রিকা ভ্রমণ করেছেন। পূর্ব ভারতের বন-জঙ্গল, পশুপাখি ও বনের মানুষের সঙ্গেও ছিল তার সুদীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়।
বুদ্ধদেব গুহের প্রধান পরিচয় তিনি শিকার কাহিনি বা অরণ্যপ্রেমিক লেখক। কিন্তু অরণ্যানীর জীবন বা শিকার ছাপিয়ে তার রচনা ধারণ করেছে এক প্রেমিক সত্তাকে। এই প্রেমিক সত্তা একইসঙ্গে প্রকৃতি ও নারীকে অবিচ্ছিন্নভাবে ধারণ করেছে তার গল্প ও উপন্যাসে। ‘বাবলি’, ‘মাধুকরী’, ‘কোজাগর’, ‘হলুদ বসন্ত’, ‘একটু উষ্ণতার জন্য’, ‘কুমুদিনী’, ‘খেলা যখন’ এবং ‘ঋজুদা’ বাংলা কথাসাহিত্যের জগতে তার লেখা অনন্য সৃষ্টি। তাঁর রচিত ‘বাবা হওয়া’ এবং ‘স্বামী হওয়া’- এ দুইয়ের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে পুরস্কারজয়ী বাংলা চলচ্চিত্র ‘ডিকশনারি’। শিশু সাহিত্যিক হিসেবেও তিনি ছিলেন জনপ্রিয়। ঋজুদা তার সৃষ্ট একটি জনপ্রিয় অভিযাত্রিক গোয়েন্দা চরিত্র।
‘জঙ্গলমহল’ তার প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ। এরপর বহু উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। লেখক হিসেবে তিনি খুবই অল্প সময়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন।
বুদ্ধদেব গুহ একসময় রবীন্দ্রসংগীতও গাইতেন। পুরাতনী টপ্পা গানে তিনি অতি পারঙ্গম ছিলেন। টিভি এবং চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে তার একাধিক গল্প উপন্যাস। ‘হলুদ বসন্ত’ উপন্যাসের জন্যে তিনি আনন্দ পুরস্কার পান ১৯৭৬ সালে। এছাড়া শিরোমন পুরস্কার এবং শরৎ পুরস্কারেও সম্মানিত হন।
বুদ্ধদেব গুহ ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট ৮৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত