বাংলাদেশের কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনেতা, গীতিকার ও লেখক আমজাদ হোসেন এর জন্মদিন
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ২২৬তম (অধিবর্ষে ২২৭তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৭৯০ : সুইডেন ও রাশিয়া শান্তিচুক্তি হয় এই দিনে।
১৮৮৫ : জাপান প্রথম জং প্রতিরোধক রং প্যাটেন্ট করে।
১৯৩১ : ইলা সেন ও মীরা দেবী নামে কুমিল্লার অষ্টম শ্রেণীর দুই ছাত্রী ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী তৎপরতার অংশ হিসেবে কুমিল্লার ম্যাজিস্ট্রেট সিজি স্টিভেন্সকে গুলি করে হত্যা করে।
১৯৪১ : রুজভেল্ট ও চার্চিল আটলান্টিক চার্টার নামক শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
১৯৪৭ : ব্রিটিশ শাসন থেকে পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভ।
১৮৯৭ : লাবণ্য প্রভা ঘোষ, ভারতের একজন গান্ধীবাদী স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং মানভূম জেলায় অনুষ্ঠিত বাংলা ভাষা আন্দোলনের একজন নেত্রী ছিলেন।
১৯৪২ : আমজাদ হোসেন, বাংলাদেশের অভিনেতা, গীতিকার, লেখক এবং চলচ্চিত্রকার।
১৯৪২ : শহীদ কাদরী, বাংলাদেশি কবি ও সাহিত্যিক।
১৯৮৩ : সুনিধি চৌহান, ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় একজন সঙ্গীতশিল্পী।
১৭৭৪ : জার্মান চিকিৎসক ও পণ্ডিত জোহান জ্যাকব রেইস্ক।
১৯৫৬ : জার্মান নাট্যকর্মী, নাট্যকার ও কবি বের্টল্ট ব্রেখট।
১৯৫৮ : বিখ্যাত ফরাসি পদার্থবিশারদ ফ্রেদেরিক জোলিও-কুরি।
২০১১ : ভারতের মুম্বইয়ের চলচ্চিত্র জগতের জনপ্রিয় চিত্রতারকা শিল্পী ও পরিচালক শাম্মী কাপুর।
আমজাদ হোসেন ছিলেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনেতা, গীতিকার ও লেখক। ব্যতিক্রমধর্মী এই চলচ্চিত্র নির্মাতা তার কর্মজীবনে ১২টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ৬টি বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন। সাবিনা ইয়াসমিনের (১৩টি) পর তিনি সর্বাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী। এছাড়া তিনি প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ছয়টি ভিন্ন বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন এবং এক আয়োজনে পাঁচটি বিভাগে (গোলাপী এখন ট্রেনে চলচ্চিত্রের জন্যে) জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। পরবর্তীকালে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে এই দুটি কৃতিত্ব গড়েন গাজী রাকায়েত।
জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) জামালপুর জেলায়। লেখালেখির মাধ্যমেই সৃজনশীল জীবনের শুরু। ছড়া দিয়ে সাহিত্যাঙ্গণে প্রবেশ। তার প্রথম কবিতা ছাপা হয় বিখ্যাত ‘দেশ’ পত্রিকায়। ছোটদের জন্যেও তিনি লিখেছেন বহু গল্প, ছড়া এবং উপন্যাস। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ও গল্প লিখেছেন।
আমজাদ হোসেন ১৯৬১ সালে ‘তোমার আমার’ চলচ্চিত্রে অভিনয় দিয়ে চলচ্চিত্রে আগমন করেন। পরে চিত্রনাট্য রচনা ও পরিচালনায় মনোনিবেশ করেন এবং চলচ্চিত্র পরিচালনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র আগুন নিয়ে খেলা (১৯৬৭)। পরে তিনি নয়নমনি (১৯৭৬), গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮), ভাত দে (১৯৮৪) দিয়ে প্রশংসিত হন। গোলাপী এখন ট্রেনে ও ভাত দে চলচ্চিত্রের জন্যে তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালকের জন্যে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
আগুন নিয়ে খেলা (১৯৬৭)
জুলেখা (১৯৬৭)
দুই ভাই (১৯৬৮)
বাল্যবন্ধু (১৯৬৮)
পিতা পুত্র (১৯৭০)
নয়নমনি (১৯৭৬)
গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮)
সুন্দরী (১৯৭৯)
কসাই (১৯৮০)
দুই পয়সার আলতা (১৯৮২)
জন্ম থেকে জ্বলছি (১৯৮২)
ভাত দে (১৯৮৪)
সখিনার যুদ্ধ (১৯৮৪)
হীরা মতি (১৯৮৮)
গোলাপী এখন ঢাকায় (১৯৯৪)
আদরের সন্তান (১৯৯৫)
সুন্দরী বধূ (২০০২)
প্রাণের মানুষ (২০০৩)
কাল সকালে (২০০৫)
গোলাপী এখন বিলাতে (২০১০)
উপন্যাস, গল্প, সংলাপসহ নানামুখী লেখালেখি করে গেছেন আমজাদ হোসেন। এর মধ্যে নাটক : ‘জব্বার আলী এখন রিমান্ডে’, ‘হ্যালো জব্বার আলী’; উপন্যাস : ধ্রুপদী এখন ট্রেনে, দ্বিধাদ্বন্দ্বের ভালোবাসা, আমি এবং কয়েকটি পোস্টার, রক্তের ডালপালা, ফুল বাতাসী, রাম রহিম, আগুনে অলঙ্কার, ঝরা ফুল, শেষ রজনী, মাধবীর মধাব, মাধবী ও হিমানী, মাধবী সংবাদ ইত্যাদি। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস : যুদ্ধে যাবো, অবেলায় অসময়, উত্তরকাল, যুদ্ধযাত্রার রাত্রি ইত্যাদি। শিশু-কিশোরদের জন্যে লেখা জন্মদিনের ক্যামেরা, যাদুর পায়রা, ভূতের রাণী হিমানী, সাত ভূতের রাজনীতি, শীতের রাজা উহু কুহু, টুকটুক, রঙিন ছড়া কৃষ্ণচুড়া ইত্যাদি। গল্পগ্রন্থ : পরী নামা জোছনায় বৃষ্টি, কৃষ্ণলীলা এবং ডারকেনিং ডে নামের ফিকশন। রয়েছে রচনাসমগ্র: মুক্তিযুদ্ধের রচনাসমগ্র, মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস সমগ্র, মুক্তিযুদ্ধের নির্বাচিত কিশোর গল্প, আমজাদ হোসেনের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস, উপন্যাসসমগ্র-১, নির্বাচিত গল্প, গল্পসমগ্র, কিশোর গল্পসমগ্র, কিশোরসমগ্র, মাধবী সমগ্র ইত্যাদিসহ অসংখ্য গান রচনা করেছেন। ১৯৭০ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’র সংলাপ রচনা করেন এবং এতে মধু চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবিটি পরবর্তীতে বাংলাদেশের মানুষের কাছে বিপুল জনপ্রিয়তা পায়।
আমজাদ হোসেন অনেক বিখ্যাত গানের গীতিকার। ‘জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো’, ‘আমি আছি থাকব ভালোবেসে মরব’, ‘হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ’, ‘কেউ কোনোদিন আমারে তো কথা দিলো না’, ‘চুল ধইরো না খোঁপা খুলে যাবে গো’, ‘একবার যদি কেউ ভালোবাসতো’, ‘বাবা বলে গেল আর কোনো দিন গান কোরো না’, ‘এমনওতো প্রেম হয়’সহ বহু গান তিনি লিখে গেছেন।
শিল্পকলায় অবদানের জন্যে বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘একুশে পদকে’ ভূষিত করে। এছাড়া সাহিত্য রচনার জন্যে তিনি ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে দুইবার অগ্রণী শিশু সাহিত্য পুরস্কার ও ২০০৪ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ একাধিক পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ইউরো শিশু সাহিত্য পুরস্কার, ফজলুল হক স্মারক পুরস্কার, টেলিভিশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ থেকে আজীবন সম্মাননাসহ কয়েকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। বিভিন্ন সিনেমায় কাহিনীকার, সংলাপ রচনা, গীতিকার কিংবা পরিচালনার জন্যে তিনি বহুবার বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন।
আমজাদ হোসেন ২০১৮ সালের নভেম্বরে স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। ঢাকায় কিছুদিন চিকিৎসার পর সরকারি অনুদানে উন্নত চিকিৎসার জন্যে তাকে ব্যাংককে নিয়ে যাওয়া হয়। ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর ৭৬ বছর বয়সে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ২০ ডিসেম্বর তার মরদেহ দেশে আসে। জামালপুরের পৌর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
সূত্র: সংগৃহীত