গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ২১৭তম (অধিবর্ষে ২১৮তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৯১৪ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহিওতে প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রাফিক সংকেত ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়।
১৯৬২ : নেলসন ম্যান্ডেলা কারাগারে অন্তরীন হন। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তাকে জেলখানায় কাটাতে হয়।
১৮৫০ : গি দ্য মোপাসঁ, একজন বিখ্যাত ফরাসি কবি গল্পকার ও ঔপন্যাসিক।
১৯০৪ : অতুল সুর, বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ, নৃতাত্ত্বিক, অর্থনীতিবিদ, লেখক ও কলকাতা বিশেষজ্ঞ।
১৯৪০ : অধ্যাপক ড. অণুপম সেন, উপাচার্য, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়; সমাজবিজ্ঞানী এবং একুশে পদক বিজয়ী।
১৭৭৫ : ব্রিটিশ ভারতে কর কর্মকর্তা মহারাজা নন্দকুমার।
১৯৩২ : ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের শহীদ বিপ্লবী অতুল সেন।
১৯৭৫ : কবি ও সম্পাদক সিকান্দার আবু জাফর।
সিকান্দার আবু জাফর ছিলেন একজন বাঙালি কবি, সঙ্গীত রচয়িতা, নাট্যকার ও সাংবাদিক। পুরো নাম সৈয়দ আল হাশেমী আবু জাফর মুহম্মদ বখত সিকান্দার। তিনি ভারত বিভাগোত্তর কালে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা ‘সমকাল’ সম্পাদনার জন্যে বিশেষভাবে খ্যাত। তার একটি বিখ্যাত কবিতা- ‘জনতার সংগ্রাম চলবেই, আমাদের সংগ্রাম চলবেই’। এটি পরে জনপ্রিয় গণসঙ্গীতে রূপান্তরিত হয়।
ষাটের দশকে পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাঙালি সংস্কৃতিচর্চার যে ধারা গড়ে ওঠে, আবু জাফর ছিলেন তার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক।
জন্মগ্রহণ করেন ১৯১৯ সালের ১৯ মার্চ সাতক্ষীরা জেলার তেঁতুলিয়া গ্রামে। পারিবারিক আদি নিবাস ছিল পাকিস্তানের পেশোয়ারে; সেখান থেকে তার পিতামহ মাওলানা সৈয়দ আলম শাহ হাশেমী ওই গ্রামে এসে বসতি স্থাপন করেন।
আবু জাফর স্থানীয় তালা বিদে ইনস্টিটিউট থেকে প্রবেশিকা (১৯৩৬) এবং কলকাতার রিপন কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। পেশাগত জীবন শুরু করেন কলকাতার মিলিটারি একাউন্টস বিভাগে। পরে সিভিল সাপ্লাই অফিসে চাকরি করেন। সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদারের ‘গ্লোব নিউজ এজেন্সী’ নামক সংবাদ-সংস্থায়ও তিনি কিছুকাল কাজ করেন; এ সময় তিনি ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। আবু জাফর ১৯৫০ সালে কলকাতা থেকে ঢাকায় আসেন এবং বিভিন্ন সময়ে দৈনিক নবযুগ, ইত্তেফাক, সংবাদ ও মিল্লাত পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। তিনি মাসিক ‘সমকাল’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ‘সমকাল মুদ্রায়ণ’ নামে একটি ছাপাখানা ও ‘সমকাল প্রকাশনী’ নামে একটি প্রকাশনালয় স্থাপন করেন।
আবু জাফর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতা, দেশপ্রেম ও বিপ্লবের চেতনাসম্পন্ন অনেক গান রচনা করেন। তার রচিত ‘আমাদের সংগ্রাম চলবেই’ গানটি মুক্তিযুদ্ধের সময় জনগণকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। আবু জাফর গদ্য ও পদ্য রচনায় সমান দক্ষ ছিলেন। তবে কবি হিসেবে তিনি সর্বাধিক খ্যাতি লাভ করেছিলেন।
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে উপন্যাস- মাটি আর অশ্রু, পূরবী, নতুন সকাল; ছোটগল্প- মাটি আর অশ্রু; কবিতা- প্রসন্ন শহর, তিমিরান্তিক, বৈরী বৃষ্টিতে, বৃশ্চিক-লগ্ন, বাংলা ছাড় ইত্যাদি। এছাড়াও নাটক- সিরাজউদ্দৌলা, মহাকবি আলাওল, শকুন্ত উপাখ্যান, মাকড়সা ইত্যাদি। অনুবাদক হিসেবেও তিনি খ্যাত ছিলেন। তার কয়েকটি অনূদিত গ্রন্থ হলো- যাদুর কলস, সেন্ট লুইয়ের সেতু, রুবাইয়াৎ : ওমর খৈয়াম ইত্যাদি।তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং একুশে পদক লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ৫ আগস্ট ঢাকায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বনানী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
সূত্র: সংগৃহীত