বিশিষ্ট বাঙালি জ্যোতির্বিজ্ঞানী অমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় এর মৃত্যুদিন
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ১৭৩তম (অধিবর্ষে ১৭৪তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৬৩৩ : পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে-এই অভিমতের জন্যে গ্যালিলিও গ্যালিলির বিচার শুরু হয়।
১৮১৪ : লন্ডনে লর্ডের ক্রিকেট মাঠে প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৭২ : আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থায় (আইএলও) বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভ।
১৮৫৬ : হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড, বিখ্যাত ইংরেজ ঔপন্যাসিক।
১৮৮৯ : কবি শেখর কালিদাস রায়, রবীন্দ্রযুগের বিশিষ্ট রবীন্দ্রানুসারী কবি, প্রাবন্ধিক ও পাঠ্যপুস্তক রচয়িতা।
১৮৯৮ : এরিখ মারিয়া রেমার্ক, জার্মান সাহিত্যিক ও স্বনামধন্য লেখক।
১৯১২ : সাগরময় ঘোষ, বাঙালি লেখক ও বাংলা সাহিত্য পত্রিকা ‘দেশ’ এর সাবেক সম্পাদক।
১৯৪০ : আব্বাস কিয়রোস্তামি, বিশ্ববিখ্যাত ইরানি চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, চিত্রগ্রাহক ও আলোকচিত্রশিল্পী।
১৯৩৬ : মরিস শ্লিক, জার্মান দার্শনিক, পদার্থবিজ্ঞানী এবং যৌক্তিক ইতিবাদের উদ্গাতা।
২০২০ : অমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশিষ্ট বাঙালি জ্যোতির্বিজ্ঞানী।
ড. অমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালি জ্যোতির্বিজ্ঞানী। কলকাতার পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা-অধিকর্তা। জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি বৃটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার বাগনানের মুগকল্যাণ গ্রামে।বাবা গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতা করতেন।
ইন্টারমিডিয়েট, স্নাতক আর স্নাতকোত্তর পর্বের পড়াশোনা শেষ করেন বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফলিত গণিতে এমএসসি করার সময় স্পেশাল পেপার হিসাবে নিয়েছিলেন অ্যাস্ট্রোনমি আর সেটা পড়াতেন বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী জয়ন্ত বিষ্ণু নারলিকারের বাবা বিষ্ণু বাসুদেব নারলিকার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় পাস করার পরই বেনারসের স্থানীয় ডিএভি কলেজে অঙ্কের অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবনের শুরু। এরপর ১৯৫৬ সালে বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা ‘নটিক্যাল অ্যালম্যানাক ইউনিটে’ যোগ দেন। ১৯৬৮ সালে তিনি এই সংস্থার সমস্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং দীর্ঘ ১২ বছরের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে তিনি সংস্থাটিকে ১৯৮০ সম্প্রসারিত করেন এবং নতুন নামে এক আন্তর্জাতিক গবেষণাগার- ‘পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টার’ পরিণত করেন। তিনি হন প্রথম অধিকর্তা। সরকারি কর্মক্ষেত্র থেকে আনুষ্ঠানিক অবসর নেওয়ার পর ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার এমপি বিড়লা তারামণ্ডলে যোগ দেন। ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে বিড়লা তারামণ্ডলের নবকলেবরে উদ্বোধনের পর মহাকাশকে দর্শকদের সামনে হাজির করার নতুন প্রকল্পে তার অবদান আছে।
সাধারণের মধ্যে বিজ্ঞানসচেতনতা প্রসারে অন্যতম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। সারা জীবন নিরলস পরিশ্রম করেছেন নিরহংকারী এই মানুষটি। প্রথমে টেলিস্কোপ হাতে, পরের স্লাইড সহযোগে চলে যেতেন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে জ্যোতির্বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলো সাধারণকে বোঝাতে। একই সাথে তিনি জ্যোতিষশাস্ত্রের নামে কুসংস্কার ও অপবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে সবসময় মুখর হতেন। সহজ সরল ভাষায় জ্যোতিষশাস্ত্রের ভ্রান্ত দিকগুলো তুলে ধরতেন। বেতার ও দূরদর্শনের অসংখ্য জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে সাধারণ মানুষকে বিজ্ঞান সচেতনতার কাজ করে গেছেন। তার ২২৫টিরও বেশি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কিত বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে প্রবন্ধের সংখ্যা ২৫০০ এর বেশি। ইংরেজিতে তিনটি ও বাংলায় পাঁচটি প্রকাশিত বই রয়েছে তার। বাংলায় প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো- ‘ধূমকেতু রহস্য ও হ্যালি’, ‘জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিবিজ্ঞানী’, ‘জ্যোতিষ কি আদৌ বিজ্ঞান’ ইত্যাদি।
১৯৯৫ সালে ভারত সরকার অমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে ‘সম্মানিত করেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০০১ খ্রিস্টাব্দে তাকে ‘গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য ‘স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করে। ওই বছরই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ডিএসসি উপাধিতে ভূষিত করে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানের তথ্যগুলো বাংলায় লেখা এবং সেগুলো ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া এই অসামান্য অবদানের জন্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ২০১২ সালে তাকে বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন ‘জগত্তারিণী’ স্বর্ণপদকে সম্মানিত করে।
এছাড়াও প্যারিসের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোমিক্যাল ইউনিয়নের এফিমারাইউস কমিশনে তিনি একমাত্র নির্বাচিত ভারতীয় সদস্য ছিলেন। ছিলেন রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির ফেলো, ব্রিটিশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল-এর নির্বাচিত সদস্য। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, বেলজিয়াম, জাপান, চীন ও কোরিয়ায় আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণা সংক্রান্ত সম্মেলনে তিনি আমন্ত্রিত হন। সম্মেলনগুলোতে তার গবেষণামূলক প্রবন্ধ পাঠ ছিল উচ্চ প্রশংসিত।
অধ্যাপক অমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো পাণ্ডিত্য, ব্যক্তিত্ব ও সরলতায় পূর্ণ মানুষ পৃথিবীতে খুব কমই দেখা যায়। তিনি ছিলেন ‘ম্যান অব অর্গানাইজেশন’। ২০২০ খ্রিস্টাব্দের ২২ জুন রাতে বার্ধক্যজনিত কারণে কলকাতায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত