গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ১৭৪তম (অধিবর্ষে ১৭৫তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৭৫৭ : পলাশীর যুদ্ধে স্বাধীন বাংলার নবাব ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে পরাজিত হন।
১৯৪৯ : পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়।
১৮৫৪ : স্যার রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, ভারতের যশস্বী বাঙালি শিল্পপতি ও সুদক্ষ ইঞ্জিনিয়ার।
১৮৬৭ : হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শান্তিনিকেতনের অধ্যাপক ও ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ অভিধানের সংকলক।
১৯২২ : সফিউদ্দিন আহমেদ, বাঙালি প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী।
১৯৩৬ : সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলাদেশি অধ্যাপক, লেখক ও প্রাবন্ধিক।
১৯৪৮ : নবারুণ ভট্টাচার্য, ভারতীয় বাঙালি কবি ও কথাসাহিত্যিক।
১৮০৬ : ফরাসি প্রাণিবিজ্ঞানী ও দার্শনিক মাথুরিন জ্যাকে জাকুইয়েস বরিসন।
১৮৩৬ : স্কটিশ ইতিহাসবেত্তা, অর্থনীতিবিদ, রাজনৈতিক তাত্ত্বিক ও দার্শনিক জেমস মিল।
১৮৯১ : জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ উইলহেম এডুয়ার্ড ওয়েবার।
১৯৯০ : ভারতীয় কবি অভিনেতা ও রাজনীতিবিদ হরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়।
১৯৯৫ : মার্কিন মেডিকেল গবেষক এবং ভাইরাসবিদ জোনাস এডওয়ার্ড সল্ক।
পলাশী দিবস৷
জাতিসংঘের পাবলিক সার্ভিস দিবস৷
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক দিবস৷
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী একজন বাংলাদেশি লেখক, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক। দীর্ঘকাল তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। আশির দশকে ‘গাছপাথর’ ছদ্মনামে তিনি দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে সাপ্তাহিক প্রতিবেদন লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। শিক্ষায় অবদানের জন্যে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন এই ইমেরিটাস অধ্যাপক।
জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৬ সালের ২৩ জুন মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার বাড়ৈখালী গ্রামে। বাবার নাম হাফিজ উদ্দিন চৌধুরী ও মা আসিয়া খাতুন। বাবার চাকরিসূত্রে শৈশব কেটেছে রাজশাহী ও কলকাতায়। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি স্কুল, নটরডেম কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইংরেজি সাহিত্যে উচ্চতর গবেষণা করেছেন যুক্তরাজ্যের লিডস বিশ্ববিদ্যালয় এবং লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে।
কর্মজীবনে তিনি ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেটের সদস্য ছিলেন। দুবার তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের উপাচার্য নিয়োগের প্যানেলে মনোনয়ন পেলেও ভিসি পদ প্রত্যাখ্যান করেছেন। ওসমানী উদ্যান, লালন ফকিরের আখড়া, আড়িয়ল বিল রক্ষাসহ নানা আন্দোলনে তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। যুক্ত থেকেছেন দেশের নানা গণতান্ত্রিক ও সামাজিক আন্দোলনে।
পত্রিকা সম্পাদনার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত ছিলেন। সম্পাদনা করেছেন ‘পরিক্রমা’, ‘সাহিত্যপত্র’, ‘সচিত্র সময়’, ‘সাপ্তাহিক সময়’, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা’, ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টাডিস’ প্রভৃতি। তার সম্পাদনায় নিয়মিত প্রকাশিত হয় প্রগতিশীল, মুক্তচিন্তার মানুষের লেখালেখির জন্যে পরিচিত সাহিত্য-সংস্কৃতির পত্রিকা ‘নতুন দিগন্ত’।
প্রায় শত গ্রন্থের রচয়িতা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। ইতিহাস সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর প্রিয় বিষয়। তারুণ্যদীপ্ত সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন টানা ৬ দশক। নন্দিত হয়েছেন সামাজিক মুক্তির দিশারি নামেও। তিনি সৃষ্টিশীল ও মননশীল বহু গ্রন্থের প্রণেতা। তার গ্রন্থের মধ্যে ‘ইনট্রোডিউসিং নজরুল ইসলাম’, ‘দ্বিতীয় ভুবন’, ‘এ্যারিস্টটলের কাব্যতত্ত্ব’, ‘আমার পিতার মুখ’, ‘স্বাধীনতা ও সংস্কৃতি’, ‘দরজাটা খোলা’, ‘উনিশ শতকের বাংলা পদ্যের সামাজিক ব্যাকরণ’, ‘উপর কাঠামোর ভিতরেই’, ‘পিতার হুকুম’, ‘আশির দশকের বাংলাদেশের সমাজ’, ‘শ্রেণি, সময় ও সাহিত্য’, ‘বাঙালি কাকে বলি’, ‘বিরূপ বিশ্বে সাহসী মানুষ’, ‘গণতন্ত্রের সন্ধানে’, ‘স্বাধীনতার স্পৃহা’, ‘বৃত্তের ভাঙাগড়া’, ‘বাংলা সাহিত্য ও বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজ’, ‘ইংরেজি সাহিত্যে ন্যায়-অন্যায়’, ‘ভালো মানুষের জগৎ’, ‘রাষ্ট্র ও কল্পলোক’, ‘দুই যাত্রায় এক যাত্রী’, ‘জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও জনগণের মুক্তি’, ‘অবিরাম পথ খোঁজা ও সময় বহিয়া যায়’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
তার জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও জনগণের মুক্তি বইটি ২০১৫ সালে প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থের পুরস্কার পেয়েছে। বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদকসহ বহু সম্মাননা পেয়েছেন।
ব্যক্তিগতভাবে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী। কিন্তু সমাজতন্ত্র সম্বন্ধে নানা কথা চালু আছে দেশে। তিনি সমাজতন্ত্রের সেই কূটতর্কের মধ্যে কখনোই প্রবেশ করেননি। তিনি সাধারণ মানুষের মঙ্গলার্থে জীবনমানের উন্নয়নকেই সমাজতন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করেছেন। সবসময় তিনি বৈষম্য ও অসমতার বিরুদ্ধে তার চিন্তাকে সুতীক্ষ্ণভাবে ধরে রেখেছেন। একজন অঙ্গীকারবদ্ধ লেখকের যে জীবনব্যাপী সাধনা, সেখান থেকে তিনি কখনোই বিচ্যুত হননি।
সিরাজুল ইসলাম প্রতিনিয়ত আপডেট থেকে শিখে গেছেন-শিখিয়ে গেছেন, জীবনের দীক্ষা দেয়া-নেয় করে যাচ্ছেন। দায়িত্ববোধ থেকে লিখে গেছেন দেশ ও দশের প্রতি, রাষ্ট্রের পক্ষে তিনি চিন্তায় ও কাজে, লেখায় ও কথায়। দীর্ঘ সংগ্রামের মাঝখানে কোনো বিভাজন রেখা রাখেননি। নৈতিকতার স্বার্থে অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে বিলিয়ে দিয়েছেন মেধা ও মনন।
সবসময় কাজের মধ্যেই ডুবে থাকতে পছন্দ করেন। কাজের মধ্য দিয়েই নতুন সময়কে আবাহন করতে চান কর্মী এই মানুষটি। একবার একজন তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালে তিনি বলেছিলেন, ‘ওভাবে তো জন্মদিন উদ্যাপন করি না। তার প্রয়োজনও দেখি না। পেছনে ততটা তাকাই না। সামনের দিকেই চোখ রাখি। বয়স বাড়ছে। শুধু লক্ষ রাখি, কাজের ধারাবাহিকতা থাকছে কি না। সেটা জরুরি।’
সূত্র: সংগৃহীত