বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় কবি ও ছড়াকার সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ২৫ জুন মৃত্যুবরণ করেন
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ১৭৬তম (অধিবর্ষে ১৭৭তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৯৩২ : ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে সর্বপ্রথম টেস্ট ক্রিকেট খেলা শুরু হয়।
১৯৭৮ : নেদারল্যান্ডকে হারিয়ে (৩-১) আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ ফুটবলে জয়ী হয়।
১৮৬৪ : ভালটার নের্নস্ট, জার্মান রসায়নবিদ
১৮৯৪ : হের্মান ওবের্ট, রোমানিয়ান বংশোদ্ভূত জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী
১৯০৩ : জর্জ অরওয়েল, এক কালোত্তীর্ণ ইংরেজ সাহিত্যিক
১৯০৭ : ইয়োহানেস হান্স ডানিয়েল ইয়েনসেন, জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী
১৯০৮ : সুচেতা কৃপালনী, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
১৯৬৩ : ইয়ান মার্টেল, বুকার পুরস্কার বিজয়ী একজন কানাডীয় সাহিত্যিক
১৯৬৩ : জর্জ মাইকেল, ইংরেজ পপ গায়ক, সুরকার, গীতিকার, রেকর্ড প্রযোজক এবং সমাজসেবক
১৯৭৫ : ভ্লাদিমির ক্রামনিক, বিখ্যাত রুশ দাবাড়ু ও গ্র্যান্ডমাস্টার
১৯১৬ : মার্কিন বাস্তবতাবাদী চিত্রশিল্পী, চিত্রগ্রাহক, ভাস্কর ও চারুকলা শিক্ষক টমাস এয়াকিনস
১৯২২ : বাঙালি কবি ও ছড়াকার সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
১৯৩৮ : রুশ ভাষাবিজ্ঞানী নিকোলাই ত্রুবেৎস্কোয়
১৯৬০ : বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান আধুনিক কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত
১৯৮৪ : ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকো
২০০৬ : ভারতীয় বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী, ভারত সরকারের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ও পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম পথিকৃৎ বাসন্তী দুলাল নাগচৌধুরী
২০০৯ : মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী মাইকেল জ্যাকসন
২০২০ : ভারতীয় বাঙালি লেখক ও সাংবাদিক নিমাই ভট্টাচার্য
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় কবি ও ছড়াকার। তার কবিতায় ছন্দের কারুকাজ, শব্দ ও ভাষা যথোপযুক্ত ব্যবহারের কৃতিত্বের জন্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে ‘ছন্দের জাদুকর’ নামে আখ্যায়িত করেন। একাধিক ছদ্মনামে তিনি কাব্যচর্চা করতেন, যেমন নবকুমার, কবিরত্ন, অশীতিপর শর্মা, ত্রিবিক্রম বর্মণ, কলমগীর ইত্যাদি। মধ্যযুগে ভারতের ইতিহাস, সংস্কৃতি, পৌরাণিক প্রভৃতি বুদ্ধি-বৃত্তিবিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্তের অধিকারী।
জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কলকাতার নিকটবর্তী নিমতা গ্রামে। পৈতৃক নিবাস বর্ধমান এর চুপী গ্রামে। বাবা রজনীনাথ দত্ত ছিলেন কলকাতার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং পিতামহ অক্ষয় কুমার দত্ত ছিলেন তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক।
সত্যেন্দ্রনাথ কলকাতার সেন্ট্রাল কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৮৯৯) এবং জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশন (বর্তমান স্কটিশ চার্চ কলেজ) থেকে এফএ (১৯০১) পাস করেন। কিন্তু পরে বিএ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। তিনি প্রথমে বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন এবং পরে ব্যবসা ছেড়ে কাব্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন।
সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন ভারতী পত্রিকাগোষ্ঠীর অন্যতম বিশিষ্ট কবি। প্রথম জীবনে তিনি মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দেবেন্দ্রনাথ সেন, অক্ষয়কুমার বড়াল প্রমুখের দ্বারা প্রভাবিত হন। পরে রবীন্দ্রানুসারী হলেও তিনি কবিস্বভাবে হয়ে ওঠেন স্বতন্ত্র। তিনি নানাবিধ ছন্দোনির্মাণ ও ছন্দ উদ্ভাবনে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। বাংলা ভাষার নিজস্ব বাগধারা ও ধ্বনি সহযোগে নতুন ছন্দসৃষ্টি তার কবিপ্রতিভার মৌলিক কীর্তি। এজন্যে তিনি ‘ছন্দের জাদুকর’ ও ‘ছন্দোরাজ’ নামে সাধারণ্যে পরিচিত। ১৯১৮ সালে ভারতী পত্রিকার বৈশাখ সংখ্যায় ছন্দ সম্পর্কিত তার প্রসিদ্ধ রচনা ‘ছন্দ-সরস্বতী’ প্রকাশিত হয়। বাংলা শব্দের সঙ্গে আরবি-ফারসি শব্দের সমন্বিত ব্যবহার দ্বারা বাংলা কাব্যভাষার শক্তি বৃদ্ধির প্রাথমিক কৃতিত্ব তারই।
এছাড়াও আরবি, ফারসি, চীনা, জাপানি, ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার বহু কবিতা অনুবাদ করে তিনি বাংলা সাহিত্যএর বৈচিত্র্য ও সমৃদ্ধি সাধন করেন। অনুবাদের মাধ্যমে তিনি বিশ্বের কাব্যসাহিত্যের সঙ্গে বাংলার যোগাযোগ ঘটান। দেশাত্মবোধ, মানবপ্রীতি, ঐতিহ্যচেতনা, শক্তিসাধনা প্রভৃতি তার কবিতার বিষয়বস্তু। মেথরদের মতো অস্পৃশ্য ও অবহেলিত সাধারণ মানুষ নিয়েও তিনি কবিতা লিখেছেন।
সত্যেন্দ্রনাথের উল্লেখযোগ্য রচনাবলি হলো: সবিতা, সন্ধিক্ষণ, বেণু ও বীণা, হোম শিখা, ফুলের ফসল, কুহু ও কেকা, তুলির লিখন, অভ্র-আবীর, হসন্তিকা, বেলা শেষের গান, বিদায়-আরতি, কাব্যসঞ্চয়ন, শিশু-কবিতা ইত্যাদি। অনুবাদ কাব্যগুলো হলো: তীর্থরেণু, তীর্থ-সলিল, মণিমঞ্জুষা এবং গদ্যরচনার মধ্যে উপন্যাস জন্মদুঃখী, চীনের ধূপ(প্রবন্ধ), ছন্দ-সরস্বতী(প্রবন্ধ), রঙ্গমল্লী (নাট্যানুবাদ) ইত্যাদি।
দেশাত্মবোধ, মানবপ্রীতি, ঐতিহ্যচেতনা, শক্তিসাধনা প্রভৃতি তার কবিতায় ছন্দের মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। দেশের প্রতি মমতার প্রকাশ তার লেখা নিচের দুই লাইনে চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে-
মধুর চেয়ে আছে মধুর, সে এই আমার দেশের মাটি,
আমার দেশের পথের ধূলো, খাঁটি সোনার চাইতে খাঁটি।
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে ১৯২২ সালের ২৫ জুন মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত