ইংরেজি সাহিত্যের দিকপাল শিক্ষক, শেক্সপিয়ার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট সাহিত্য সমালোচক সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত এর জন্মদিন
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ১৭৮তম (অধিবর্ষে ১৭৯তম)দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৯৬৭ : ইংল্যান্ডের এনফিল্ড শহরে প্রথম এটিএম (অটোমেটেড টেলার মেশিন) স্থাপন করা হয়।
২০০৭ : গর্ডন ব্রাউন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৮৮০ : হেলেন কেলার, আমেরিকান একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখক ও রাজনৈতিক কর্মী।
১৯০৩ : সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত, ইংরেজি সাহিত্যের দিকপাল শিক্ষক, শেক্সপিয়ার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট সাহিত্য সমালোচক।
১৯৩৯ : রাহুলদেব বর্মন, ভারতীয় সুরকার, সঙ্গীতশিল্পী।
২০০০ : বাঙালি ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক এবং সাহিত্যিক শঙ্কর ভট্টাচার্য।
সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ছিলেন ইংরেজি সাহিত্যের দিকপাল শিক্ষক, শেক্সপিয়ার-বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট সাহিত্য সমালোচক। জর্জ বার্নার্ড শ’ এবং উইলিয়াম শেকসপিয়র সম্পর্কে তার মূল্যবান সমালোচনা ইংরেজি সাহিত্যের মনীষী মহলে প্রশংসিত। আচার্য আনন্দবর্ধনের ‘ধ্বন্যালোক’ গ্রন্থের অনুবাদ ও ভূমিকা তার মনীষার উজ্জ্বল নিদর্শন।
জন্মগ্রহণ করেন অবিভক্ত বাংলার অধুনা বাংলাদেশের ঢাকার বানারিতে ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুন। বাবা হেমচন্দ্র সেনগুপ্ত ও মায়ের নাম মৃণালিনী সেনগুপ্ত। ফরিদপুরে পালং স্কুলে পড়াশুনা করেন। সেখান থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন তৃতীয় স্থান অধিকার করে। এরপর কলকাতায়। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে বি.এ পাস করেন। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ পাস করেন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তি এবং ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন।
দিল্লির হিন্দু কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবনের শুরু। এরপর প্রেসিডেন্সিসহ বেশ কয়েকটি কলেজে অধ্যাপনা করেন। চট্টগ্রাম কলেজ, রাজশাহী কলেজ ও জব্বলপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি অধ্যাপনা করেন। তবে সব থেকে বেশি সময় ছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজে। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে প্রধান অধ্যাপক হন।
সুবোধচন্দ্র বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণে তিনি শেষের দিকে ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্যের মূল্যবান সমালোচনা করেছেন। বিশেষ করে শেক্সপিয়ারের সাহিত্য-সমালোচনার বিভিন্ন দিক তিনি উন্মোচন করেন। ‘অ্যাসপেক্টস অফ শেক্সপিরিয়ান কমেডি’, ‘দ্য ওরিলিগিগ অব টাইম: দ্য প্রবলেম অব ডিউরেশন ইন শেক্সপিয়ারস্ প্লেজ’, ‘শেক্সপিয়ারস্ হিস্টোরিকাল প্লেজ’, ‘অ্যাসপেক্টস অফ শেক্সপিরিয়ান ট্র্যাজেডি’ এবং ‘শেক্সপিয়ার ম্যানুয়াল’ হলো উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের সাহিত্যের উপর তার পাঁচটি উচ্চ প্রশংসিত গ্রন্থ। এর মধ্যে অ্যাসপেক্টস অফ শেক্সপিরিয়ারস্ ট্র্যাজেডি বইটি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য। এছাড়া জর্জ বার্নার্ড শ’র সাহিত্যকর্মের উপর তার রচিত গ্রন্থ হলো দা আর্ট অফ বার্নাড শ’। এটিও মনীষী মহলে সমানভাবে প্রশংসিত।
বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্র সম্বন্ধেও তার বাংলা গ্রন্থগুলো বাংলা সমালোচনা সাহিত্যে বিশেষ স্বীকৃতি লাভ করেছে। এর মধ্যে ‘শরৎচন্দ্র: ম্যান অ্যান্ড আর্টিস্ট’, বাংলায় শরৎচন্দ্র, ‘দি গ্রেট সেন্টিনাল: এ স্টাডি অফ রবীন্দ্রনাথ টেগোর’, বাংলায় ‘রবীন্দ্রনাথ’, ‘বঙ্কিমচন্দ্র চ্যাটার্জি’, বাংলায় ‘বঙ্কিমচন্দ্র’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্তর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো-
‘কিটস: ফ্রম থিয়োরি টু পোয়েট্রি’
‘বিবেকানন্দ অ্যান্ড ইন্ডিয়ান ন্যাশনালিজম’
‘টুওয়ার্ডস এ থিয়োরি অফ ইমাজিনেশন’
‘অ্যান ইনট্রোডাকশন টু অ্যারিস্টটলস্ পোয়েটিক্স’
‘ইন্ডিয়া রেস্টেড ফ্রিডম’
শুধু ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্য বা পাশ্চাত্য দর্শন নয়, ভারতীয় দর্শন, মার্কসবাদ, প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্যের নন্দনতত্ত্ব সব বিষয়েই তার অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল। অবসর জীবনেও তিনি বহু অমূল্য রচনা ও গ্রন্থ লিখেছেন। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে আচার্য আনন্দবর্ধনের ‘ধ্বন্যালোক’ গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ ও ভূমিকা রচনা তার মনীষার আর একটি উজ্জ্বল নিদর্শন। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি তার জীবনের অভিজ্ঞতামূলক রচনা ‘তে হি নো দিবসা’ প্রকাশিত হয়। এছাড়া কলকাতার খ্যাতনামা প্রকাশনা সংস্থা সাহিত্য সংসদ প্রকাশিত প্রায় চার সহস্রাধিক জীবনী-সংবলিত আকর গ্রন্থ ‘সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান’ (প্রথম প্রকাশ মে, ১৯৭৬) সম্পাদনা তার অনন্যসাধারণ কীর্তি।
পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বহু সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিদ্যাসাগর পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দেই ভারত সরকার তাকে পদ্মভূষণ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে। তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের বিশিষ্ট সদস্য ও ইংল্যান্ডে আন্তর্জাতিক শেক্সপিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের একজিকিউটিভ কমিটির সদস্য ছিলেন।
সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত