শ্রীরামকৃষ্ণের অন্যতম শিষ্য ও ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত’র রচয়িতা মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত এর জন্মদিন
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ১৫৫তম (অধিবর্ষে ১৫৬তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৯৫৫ : ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে সরাসরি টেলিফোন যোগাযোগ স্থাপিত হয়।
১৯৭০ : প্রশান্ত মহাসাগরে ১৬৯টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত টোঙ্গা স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৩৬ : ব্রুস ডার্ন, আমেরিকান অভিনেতা।
১৯৬৬ : ভ্লাদিমির ভয়েভদস্কি, রাশিয়ান গণিতবিদ।
১৯৭৫ : অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, মার্কিন অভিনেত্রী। চলচ্চিত্র নির্মাতা ও মানবহিতৌষী। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে জন্ম। তিনবার গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার, দুই বার স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড পুরস্কার ও একবার একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। ২০০১ সালে তিনি জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার শুভেচ্ছাদূত মনোনীত হন। বিশ্বব্যাপী মানবতার প্রচার ও শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করার জন্যে তিনি বিশেষভাবে সমাদৃত।
১৯৩১ : মক্কার শরিফ, আরব নেতা ও হেজাজের বাদশাহ হুসাইন বিন আলি।
১৯৩২ : ‘শ্রীম’ নামে পরিচিত শ্রীরামকৃষ্ণের অন্যতম শিষ্য ও ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত’ রচয়িতা মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত।
২০২০ : বলিউডের কিংবদন্তি পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার বাসু চ্যাটার্জী।
২০২০ : উত্তমকুমারের প্রিয় চিত্রগ্রাহক বৈদ্যনাথ বসাক।
মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত ছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণের গৃহী শিষ্য। তিনি ছিলেন জীবনীকার। তার জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত’ রচনা। জন্মগ্রহণ করেন ১৮৫৪ সালের ১৪ জুলাই কলকাতার বিখ্যাত বৈদ্য পরিবারে। বাবার নাম মধুসূদন গুপ্ত।
মহেন্দ্রনাথ হেয়ার স্কুল এবং প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র ছিলেন। এন্ট্রান্স পরীক্ষায় দ্বিতীয়, এফএ পরীক্ষায় পঞ্চম এবং বিএ পরীক্ষায় তৃতীয় স্থান লাভ করেছিলেন। কর্মজীবনে তিনি যশোরের নড়াইল স্কুলে, কলকাতার সিটি, রিপন, মেট্রোপলিটন, এরিয়ান, ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, মডেল প্রভৃতি স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। রিপন, সিটি এবং মেট্রোপলিটন কলেজে তিনি ইংরেজি, অর্থনীতি, মনোবিজ্ঞান ও ইতিহাস পড়াতেন। শ্রীরামকৃষ্ণদেবের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়ে তিনি বিদ্যাসাগরের শ্যামপুকুর ব্রাঞ্চ স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। জীবনের শেষ পাঁচ বছর ঝামাপুকুর মর্টন ইন্সটিটিউশন (বর্তমানে আমহার্স্ট স্ট্রিটের হিন্দু অ্যাকাডেমি) কিনে তার অধ্যক্ষ এবং পরিচালক হন। মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত মাস্টার মশায় নামে বেশি পরিচিত ছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণদেবের সন্ন্যাসী শিষ্যদের কেউ কেউ তার শিষ্য এবং তার ছাত্ররা অনেকে পরে রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের সন্ন্যাসী হয়েছিলেন। অনেকে তাকে তাই ‘ছেলে ধরা মাস্টার’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত শ্রীরামকৃষ্ণদেবের জীবনের শেষ চার বছরে পঞ্চাশটির মতো দেখা সাক্ষাতের নিপুন বিবরণ তিনি যত্নসহকারে তার ডায়েরিতে লিখে রেখেছিলেন। যা পরে বই আকারে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত নামে প্রকাশিত হয়ে অসাধারণ খ্যাতি এবং জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই গ্রন্থের মাধ্যমে তিনি সংসারে থেকেও শ্রীরামকৃষ্ণদেবের বাণী প্রচার করে গেছেন।
মহেন্দ্রনাথ তার ডায়রিতে লিখেছিলেন, ‘আমার ছেলেবেলা থেকে ডায়েরী লেখার অভ্যাস ছিল। যখন যেখানে ভাল বক্তৃতা বা ঈশ্বরীয় প্রসঙ্গ শুনতুম, তখনই বিশেষ ভাবে লিখে রাখতুম। সেই অভ্যাসের ফলে ঠাকুরের সঙ্গে যেদিন যা কথাবার্তা হতো, বার তিথি নক্ষত্র তারিখ দিয়ে লিখে রাখতুম।’
এইভাবেই তিনি লিখে গেছেন। সৃষ্টি করেছেন তার শ্রেষ্ঠকীর্তি, পাঁচ খণ্ডে রামকৃষ্ণকে নিয়ে ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত’।
‘শ্রীম’, ‘মাস্টার’, ‘মণি’, ‘মোহিনীমোহন’ বা কখনও কেবল ‘একজন ভক্ত’ নামের আড়ালে নিজেকে লুকোতে চেষ্টা করলেও, মহেন্দ্রনাথ তার প্রকৃত পরিচয় বাঙালি পাঠকের কাছে গোপন রাখতে পারেননি। পঞ্চম তথা শেষ খণ্ড প্রকাশের কয়েক মাস আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান মহেন্দ্রনাথ। আর বাঙালিকে দিয়ে যান তার ইতিহাসের অন্যতম সম্পদ, ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত’।
১৯৩২ সালের ৪ জুন ঠনঠনিয়া কালিবাড়ির কাছে কথামৃত ভবনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত