ভারতের প্রখ্যাত বাঙালি প্রাণরসায়ণ বিজ্ঞানী বীরেশচন্দ্র গুহ এর জন্মদিন
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ১৫৯তম (অধিবর্ষে ১৬০তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৯৫৯ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে পারমাণবিক শক্তিচালিত প্রথম সাবমেরিন তৈরি করে।
১৯৬৩ : আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন ধূমপানবিরোধী প্রচার শুরু করে।
২০০২ : বাংলাদেশ পূর্ব তিমুরকে স্বীকৃতি দেয়।
১৮৯৭ : মণীন্দ্রলাল বসু, বাঙালি লেখক ও ঔপন্যাসিক।
১৯০৪ : বীরেশচন্দ্র গুহ, ভারতের প্রখ্যাত বাঙালি প্রাণরসায়ণ বিজ্ঞানী।
১৯৫৫ : টিম বার্নার্স-লি, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের জনক।
১৮০৯ : বৃটেনের বিখ্যাত লেখক ও দার্শনিক থমাস পাইন।
১৮৪৫ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম রাষ্ট্রপতি এন্ড্রু জ্যাক্সন।
১৯৯১ : বাঙালি দার্শনিক অধ্যাপক বিমলকৃষ্ণ মতিলাল।
২০১২ : বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিক্ষক গবেষক ও সমালোচক সুভাষ চৌধুরী।
বিশ্ব মহাসাগর দিবস৷
বীরেশচন্দ্র গুহ ছিলেন প্রখ্যাত প্রাণ-রসায়ণবিদ ও অন্যতম বিশিষ্ট অধ্যাপক। তিনি ভারতে প্রাণ-রসায়ণের জনক হিসেবে পরিচিত। জন্মগ্রহণ করেন তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার (বর্তমানের বাংলাদেশের)ময়মনসিংহে। বাবার নাম রাসবিহারী গুহ। তাদের আদি বাড়ি ছিল বরিশালের বানারিপাড়ায়। মহাত্মা অশ্বিনীকুমার দত্ত ছিলেন তার মাতুল।
বীরেশ চন্দ্র গুহ কলকাতার শ্রীকৃষ্ণ পাঠশালা থেকে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে প্রবেশিকা ও সিটি কলেজ থেকে আইএসসি পাস করে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু বিএসসি পড়ার সময়ই অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার অপরাধের ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে কলেজ থেকে বিতাড়িত হন। পরে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে থেকে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে রসায়নে অনার্স-সহ প্রথম স্থান অধিকার করে বিএসসি পাস করেন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে এম.এসসিতেও প্রথম হন। ছাত্রাবস্থায় ঘোষ ট্রাভেলিং বৃত্তি লাভ করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করে আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হন। এমএসসি পাঠের সময় তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রখ্যাত রসায়ন বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের সংস্পর্শে আসেন। আচার্যের বিজ্ঞানের প্রতি অবদান, নিঃস্বার্থ আদর্শবাদ ও স্বদেশেপ্রেম পরবর্তীতে তাকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল।
পড়াশোনা শেষে এক বছর বেঙ্গল কেমিক্যালস এণ্ড ফার্মাসিউটিক্যালসে কাজ করার পর ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ‘টাটা স্কলারশিপ’ পেয়ে বিলেত যান। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি. এবং ডি.এসসি. ডিগ্রি লাভ করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল ষণ্ডের যকৃতের মধ্যে ভিটামিন বি-২ এর অস্তিত্ব অনুসন্ধান। এরপর কেমব্রিজের বিখ্যাত প্রাণ-রসায়নবিদ এফ.সি.হপ্ কিন্সের অধীনেও তিনি গবেষণা করেন।
১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে দেশে ফেরার পর কিছুদিন আবার বেঙ্গল কেমিক্যালস এণ্ড ফার্মাসিউটিক্যালসে কাজ করেন। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত রসায়ন বিভাগে প্রধান অধ্যাপকের পদ পান। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার তাকে খাদ্যদপ্তরের প্রধান টেকনিক্যাল উপদেষ্টাপদে নিযুক্ত করেন। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের সভ্য হিসাবে কাজ করেন।
১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন এবং আমরণ অধ্যাপনা ও গবেষণার কাজে লিপ্ত থাকেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে গমবীজ থেকে ভিটামিন নিষ্কাশন, অ্যাস্করিক অ্যাসিড অথবা ভিটামিন-‘সি’ বিষয়ে গবেষণা করেন। উদ্ভিদ কোষ থেকে ‘অ্যাস্করবীজেন’ বিশ্লেষণে তিনি ও তার সহযোগীরা মৌলিক কৃতিত্ব দেখান। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলার দুর্ভিক্ষের সময়ে ঘাস-পাতা থেকে প্রোটিন বিশ্লেষণের গবেষণা শুরু করেন এবং মানুষের খাদ্যে এই উদ্ভিজ্জ প্রোটিণ মিশ্রণের নানা পদ্ধতি দেখান। মূলত বীরেশচন্দ্র গুহর প্রয়াসে ভারতে প্রাণ-রসায়ন বিজ্ঞান ও জৈবপ্রযুক্তি বিদ্যার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। সে কারণে তাকে ভারতের আধুনিক প্রাণ-রসায়ন বিজ্ঞানের জনক-( Father of modern Biochemistry in India) নামে আখ্যা দেওয়া হয়।
বীরেশচন্দ্র কালিদাস, রবীন্দ্রনাথ বা শেক্সপিয়ার থেকে সংস্কৃত, বাংলা বা ইংরাজিতে কবিতা আবৃত্তি করে বন্ধুদের প্রায়ই মুগ্ধ করতেন। তিনি বিখ্যাত সমাজসেবিকা ড. ফুলরেণু গুহকে বিবাহ করেন। দুজনেরই সমাজ সেবা সাহিত্য সংস্কৃতি সঙ্গীত চিত্রকলার প্রতি অসীম আগ্রহ ছিল।
বীরেশচন্দ্র গুহের মৃত্যুর পর স্ত্রী ড. ফুলরেণু গুহ স্বামীর ইচ্ছানুসারে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে স্বোপার্জিত অর্থ ও তাদের বালিগঞ্জস্থিত বৃহৎ অট্টালিকা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাণ-রসায়ন বিষয়ে গবেষণার জন্যে দান করেন। বর্তমানে এটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের “The Guha Centre for Genetic Engineering and Biotechnology “(GCGEB)। বীরেশচন্দ্র ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের ২০ মার্চ ৫৮ বছর বয়সে লক্ষ্ণৌতে মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত