বাংলা সাহিত্যের প্রথম ঔপন্যাসিক প্যারীচাঁদ মিত্র (যার ছদ্মনাম টেকচাঁদ ঠাকুর) জন্মগ্রহণ করেন ১৮১৪ সালের ২২ জুলাই
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ২০৩ তম (অধিবর্ষে ২০৪ তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৯১২ : ইংল্যান্ডে ইন্ডিয়া সোসাইটি কর্তৃক রবীন্দ্রনাথের সংবর্ধনা
১৯৭২ : বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় গুয়াতেমালা।
১৮১৪ : প্যারীচাঁদ মিত্র, বাংলা সাহিত্যের প্রথম ঔপন্যাসিক, ছদ্মনাম টেকচাঁদ ঠাকুর
১৮৪৭ : ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়, বিখ্যাত বাঙালি কৌতুক লেখক
১৮৮৭ : গুস্টাফ লুটভিগ হের্ৎস, নোবেল বিজয়ী জার্মান পদার্থবিদ
১৮৮৮ : সেলম্যান ওয়াক্সম্যান, নোবেল বিজয়ী ইউক্রেরিয়ান বংশোদ্ভূত আমেরিকান প্রাণরসায়নী ও মাইক্রো জীববিজ্ঞানী
১৯২৬ : মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, মননশীল প্রবন্ধকার, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষক, শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী।
১৯৪৮ : বিখ্যাত বাঙালি চিত্রশিল্পী হেমেন্দ্রনাথ মজুমদার
১৯৭০ : ‘মাসিক বসুমতী’ পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক প্রাণতোষ ঘটক
১৯৭৬ : বাঙালি লেখক, ছোটগল্পকার ও ঔপন্যাসিক মণীন্দ্রলাল বসু
প্যারীচাঁদ মিত্র ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম ঔপন্যাসিক। তার ছদ্মনাম টেকচাঁদ ঠাকুর। তিনি ছিলেন একাধারে লেখক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিসেবী ও ব্যবসায়ী। অবশ্য লেখালেখির পরিচয়েই তিনি বেশি পরিচিত হন। তিনি রচনা করেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস হিসেবে খ্যাত ‘আলালের ঘরের দুলাল’।
জন্মগ্রহণ করেন ১৮১৪ সালের ২২ জুলাই কলকাতায়। বাবা রামনারায়ণ মিত্র প্রথম জীবনে হুগলি জেলার পানিসেহালা থেকে কলকাতা আগমন করেন। আঠারো শতকে ইউরোপীয় বণিকদের তাবেদারির মাধ্যমে যেসব ভারতীয় বেনিয়া নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন করেন, রামনারায়ণ মিত্র ছিলেন তাদেরই একজন।
প্যারীচাঁদ মিত্রের শিক্ষাজীবন শুরু হয় পারিবারিক পরিমণ্ডলে। তিনি পণ্ডিত ও মুনশির কাছে যথাক্রমে বাংলা ও ফারসি শেখেন। ১৮২৭ সালে তিনি হিন্দু কলেজে ভর্তি হন এবং খ্যাতিমান শিক্ষক হেনরি ডিরোজিওর তত্ত্বাবধানে থেকে শিক্ষা সম্পন্ন করেন।
কর্মজীবন শুরু করেন কলকাতা পাবলিক লাইব্রেরির ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান হিসেবে। ক্রমান্বয়ে তিনি লাইব্রেরিয়ান এবং ওই প্রতিষ্ঠানের সেক্রেটারি পদে অধিষ্ঠিত হন। পাবলিক লাইব্রেরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা এবং অন্যান্য বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি প্যারীচাঁদ অত্যন্ত সফলভাবে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি কয়েকটি বিনিয়োগ কোম্পানির অংশীদার ও পরিচালক ছিলেন।
একজন সমাজহিতৈষী ও সংস্কৃতিসেবী হিসেবে বাঙালির জাগরণে তার অবদান গুরুত্বপূর্ণ। বাঙালি সমাজের হিতার্থে তিনি বহু সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন। জ্ঞানোপার্জিকা সভা, বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি, ডেভিড হেয়ার মেমোরিয়াল সোসাইটি, রেস ক্লাব, এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড হর্টিকালচারাল সোসাইটি, বেথুন সোসাইটি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
এছাড়াও প্যারীচাঁদ মিত্র জাস্টিস অব পিস, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো, জেল ও কিশোর অপরাধীদের সংশোধন কেন্দ্রের পরিদর্শক, কলকাতা হাইকোর্টের গ্র্যান্ড জুরি, বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য, কলকাতা মিউনিসিপ্যাল বোর্ডের অবৈতনিক ম্যাজিস্ট্রেট ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সম্মানসূচক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
পরে মূলত সাংবাদিকতা ও বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্যেই প্যারীচাঁদ বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন। তিনি দি ইংলিশম্যান, ইন্ডিয়ান ফিল্ড, হিন্দু প্যাট্রিয়ট, ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়া এবং বেঙ্গল স্পেক্টেটর পত্রিকার নিয়মিত লেখক ছিলেন। উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে- আলালের ঘরের দুলাল, মদ খাওয়া বড় দায় জাত থাকার কি উপায়, রামারঞ্জিকা, কৃষিপাঠ, ডেভিড হেয়ারের জীবনচরিত এবং বামাতোষিণী। ইংরেজি গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: A Biographical Sketch of David Hare, The Spiritual Stray Leaves, Stray Thought of Spiritualism, Life of Dewan Ramkamal Sen এবং Life of Coles Worthy Grant।
সাহিত্যক্ষেত্রে প্যারীচাঁদের সর্বশ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব ‘আলালের ঘরের দুলাল’; যা বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস হিসেবে খ্যাত। রচনারীতি ও ভাষাগত দিক থেকে এ উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে নতুন ধারার সূচনা করে। এ উপন্যাসে প্যারীচাঁদ প্রথমবারের মতো বাংলা সাহিত্যের প্রচলিত গদ্যরীতির নিয়ম ভেঙে চলিত ভাষারীতি প্রয়োগ করেন। সাধারণ মানুষের মুখে ব্যবহৃত কথ্য ভাষা ‘আলালের ঘরের দুলাল’ উপন্যাসের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
প্যারীচাঁদ মিত্র ১৮৮৩ সালের ২৩ নভেম্বর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত