বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক, ও জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান এর মৃত্যুদিন।
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ২০৬তম (অধিবর্ষে ২০৭তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৮১৪ : জর্জ স্টিফেনশন প্রথম বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের সাফল্যজনক কার্যকারিতা প্রদর্শন করেন।
১৯০৯ : লুই ব্ল্যারিয়ট বিমানে ইংলিশ চ্যানেল পার হন।
১৯৭৮ : বিশ্বের প্রথম টেস্টটিউব শিশু লুইস ব্রাউন জন্মগ্রহণ করে।
২০০৭ : ভারতের ১৩তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে (প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি) দায়িত্ব গ্রহণ করেন প্রতিভা পাতিল।
১১৬৫ : ইবনে আরাবি, একজন আরব সূফি সাধক লেখক ও দার্শনিক।
১৮৭৫ : জিম করবেট, ইংলিশ শিকারি ও সংরক্ষণবাদী প্রকৃতিবিদ।
১৯০১ : মনোজ বসু, একজন ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক।
১৯০৫ : এলিয়াস ক্যানেটি, নোবেল বিজয়ী বুলগেরিয়ান বংশোদ্ভূত সুইস লেখক ও নাট্যকার।
১৯২৩ : মারিয়া গ্রাইপ, সুইডিশ লেখক।
১৯২৯ : সোমনাথ চ্যাটার্জী, ভারতীয় বাম রাজনীতিক।
১৯৩৯ : আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, বাংলাদেশি শিক্ষাবিদ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।
১৯৭৪ : রিফাত বিন সাত্তার, গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব বিজয়ী বাংলাদেশি দাবাড়ু।
১৮৩৪ : ইংরেজ কবি, সাহিত্য সমালোচক এবং দার্শনিক স্যামুয়েল টেইলর কোলরিজ।
১৮৪৩ : পানি নিরোধক কাপড়ের উদ্ভাবক চার্লস ম্যাকিনটোস।
১৯০৯ : ভারতের বিশিষ্ট আইনজীবী ও কানাড়া ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা আম্মেম্বল সুব্বা রাও পাই।
১৯৫৩ : অন্যতম সাংসদ, আইনজ্ঞ, বাগ্মী পণ্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র।
১৯৮০ : বাঙালি সমাজবিজ্ঞানী, সাহিত্য সমালোচক, সাহিত্যিক, লোকসংস্কৃতি সাধক, চিন্তাবিদ ও গবেষক বিনয় ঘোষ।
২০০২ : বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক, ও জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান।
অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা সাহিত্যিক, কবি, সাহিত্য সমালোচক, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
জন্মগ্রহণ করেন ১৯২২ সালের ২৬ মার্চ মাগুরা জেলার আলোকদিয়া গ্রামে। বাবা সৈয়দ আলী হামেদ ছিলেন একজন স্কুল ইন্সপেক্টর। মা সৈয়দা কামরুন্নেগার খাতুন ছিলেন ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার আগলা গ্রামের জমিদার ও পীর সৈয়দ মোকাররম আলীর মেয়ে। বাবা-মা দুদিক থেকেই তিনি ছিলেন সূফি ঐতিহ্যে লালিত।
ঢাকার আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স (এসএসসি) এবং ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমানে ঢাকা কলেজ) থেকে এফএ (এইচএসসি)পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে ১৯৪৩ সালে স্নাতক এবং ১৯৪৪ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর কলকাতা চলে যান। সেখানেই বিয়ে করেন।
সৈয়দ আলী আহসান অল ইন্ডিয়া রেডিও কলকাতা কেন্দ্র এবং রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রে কর্মসূচি নিয়ামকরূপে চাকরি করেন। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান নিযুক্ত হন। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এ পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলা একাডেমীর পরিচালক (প্রধান নির্বাহী) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে তিনি ভারতে চলে যান এবং কলকাতায় অবস্থান করে যুদ্ধের পুরো নয় মাস স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেন। তিনি লেখনী ও বক্তৃতার মাধ্যমে স্থানীয় ও বিশ্ব জনমত সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ১৯৭২ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানসহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দারুল ইহসানের উপাচার্যরূপেও তিনি কর্মরত ছিলেন।
সৈয়দ আলী আহসানের প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে কাব্যগ্রন্থ : অনেক আকাশ, একক সন্ধ্যায় বসন্ত, সহসা সচকিত, উচ্চারণ, আমার প্রতিদিনের শব্দ, প্রেম যেখানে সর্বস্ব ইত্যাদি। প্রবন্ধ গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত (আধুনিক যুগ) মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের সাথে, কবিতার কথা, কবিতার কথা ও অন্যান্য বিবেচনা, আধুনিক বাংলা কবিতা : শব্দের অনুষঙ্গে, রবীন্দ্রনাথ: কাব্য বিচারের ভূমিকা, মধুসূদন : কবিকৃতি ও কাব্যাদর্শ, আধুনিক জার্মান সাহিত্য, যখন কলকাতায় ছিলাম, বাংলা সাহিত্যে ইতিহাস মধ্যযুগ, শিল্পবোধ ও শিল্পচৈতন্য, জীবনের শিলান্যাস ইত্যাদি।
এছাড়াও সম্পাদিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে- পদ্মাবতী, মধুমালতী, অনূদিত গ্রন্থের মধ্যে ইকবালের কবিতা, প্রেমের কবিতা, ইতিহাস ইত্যাদি। ইসলামি গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- মহানবী, আল্লাহ আমার প্রভু এবং অন্যান্য গ্রন্থগুলো হলো- যখন সময় এলো, রক্তাক্ত বাংলা, পাণ্ডুলিপি, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, রজনীগন্ধা, চর্যাগীতিকা, আমাদের আত্মপরিচয় এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, ১৯৭৫ সাল, বাংলাদেশের সংস্কৃতি ইত্যাদি।
জীবদ্দশায় তিনি বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিত হন। এর মধ্যে রয়েছে- বাংলা একাডেমী পুরস্কার, দাউদ পুরস্কার (১৯৬৯ স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাক্কালে প্রত্যাখ্যান), শেরে বাংলা পুরস্কার, সুফি মোতাহার হোসেন স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ব একুশে পদক, নাসির উদ্দীন স্বর্ণপদক, মধুসূদন পুরস্কার, স্বাধীনতা পুরস্কার, জাতীয় অধ্যাপকরূপে নিযুক্তি, কিশোরকণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার (মরণোত্তর) ইত্যাদি।
এছাড়াও ১৯৭৪ সালে নাগপুরে বিশ্ব হিন্দী সম্মেলনে বিশেষ সম্মাননাপত্র ও ১৯৯২ সালে ফরাসি সরকারের OFFICER DE L’ORDRE DES ARTS ET DES LETTRES পদক ও সনদ লাভ করেন। মৃত্যুর কিছু আগে বাংলাদেশ সরকার তাকে শিক্ষাবিদরূপে এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রকল্প ভাষাবিদরূপে দুটি পৃথক স্বর্ণপদক প্রদান করে।
অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অবসান ঘটিয়ে ২০০২ সালের ২৫ জুলাই ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।
সূত্র: সংগৃহীত