ভারতের ভৌত রসায়ন বিজ্ঞানের পথিকৃৎ ড. নীলরতন ধর মৃত্যুবরণ করেন।
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ৩৩৯তম (অধিবর্ষে ৩৪০তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৩৬০ : ফ্রান্সের মুদ্রা ফ্রাঁ চালু হয়।
১৮৫৪ : অ্যারোন অ্যালেন রিভলবিং থিয়েটার চেয়ার প্যাটেন্ট করেন।
১৯৩২ : জার্মান বংশোদ্ভুত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন আমেরিকার ভিসা পান।
১৯৬৯ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব-পাকিস্তানের নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ’।
১৮৩০ : ক্রিশ্চিনা রসেটি, ইংরেজ মহিলা কবি।
১৯০১ : ওয়াল্ট ডিজনি, একজন মার্কিন চলচ্চিত্র প্রযোজক, নির্দেশক, কাহিনীকার, নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী ও অ্যানিমেটর।
১৯০১ : প্রমথ ভৌমিক, সাম্যবাদী বিপ্লবী, সাংবাদিক ও কৃষক নেতা।
১৯০১ : ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ, নোবেলজয়ী জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী।
১৯১১ : প্রণব রায়, প্রবাদপ্রতিম গীতিকার ও কবি।
১৯১৩ : গোপাল ঘোষ, খ্যাতনামা বাঙালি চিত্রশিল্পী।
১৯২৫ : গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, বাংলা আধুনিক ও চলচ্চিত্র সঙ্গীতের বিশিষ্ট গীতিকার ও সুরকার।
১৯২৬ : ফ্রান্সের বিখ্যাত ধারণাবাদী (ইম্প্রেশনিস্ট) চিত্রশিল্পী ক্লোদ মোনে।
১৯৫১ : খ্যাতিমান ভারতীয় চিত্রশিল্পী এবং লেখক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
১৯৬১ : প্রখ্যাত বাঙালি লেখক ও অর্থনীতিবিদ ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।
১৯৬৩ : বিখ্যাত বাঙালি রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী।
১৯৮৬ : ভারতের ভৌত রসায়ন বিজ্ঞানের পথিকৃৎ ড. নীলরতন ধর।
১৯৯৩ : প্রখ্যাত বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার সত্য চৌধুরী।
আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবস।
বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস।
নীলরতন ধর ছিলেন ভৌত রসায়ন ক্ষেত্রের একজন বাঙালি রসায়ন বিজ্ঞানী। ভারতীয় বিজ্ঞান একাডেমীর তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।
জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দের ২ জানুয়ারি অধুনা বাংলাদেশের যশোরে। বাবা আইনজীবী প্রসন্নকুমার ধর। পিতামহ প্রেমচাঁদ ধর। মা ছিলেন যশোরের ফতেপুর জমিদার কুঞ্জবিহারী ঘোষের মেয়ে নিরোদমোহিনী দেবী। বাবা স্বদেশি আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। প্রসন্নকুমারের ছয় পুত্র ও তিন কন্যার মধ্যে নীলরতন ছিলেন তৃতীয়।
স্থানীয় সরকারি জেলা স্কুলে পড়াশোনা করেন। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন তিনি। শিক্ষা জীবনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সর্বস্তরেই প্রথম। এম.এসসি-তে কলা ও বিজ্ঞান বিভাগ মিলিয়ে সর্বোচ্চ রেকর্ড নম্বর পেয়ে ২০টি স্বর্ণপদক, গ্রিফিথ পুরস্কার ও এশিয়াটিক সোসাইটি প্রদত্ত পুরস্কার লাভ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে এমএসসি পড়ার সময়ই আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র ও আচার্য্য জগদীশচন্দ্র বসুর অধীনে গবেষণায় রত হন।
১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে স্টেট স্কলারশিপ পেয়ে বিলেত যান। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে এবং প্যারিসের সরবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ডি.এসসি উপাধি লাভ করেন।
১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন থেকে ফিরে আই.ই.এস নির্বাচিত হয়ে এলাহাবাদ ম্যুর সেন্ট্রাল কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন। তার জীবনের বিখ্যাত কাজ Induced and photochemical reaction। আজীবন গবেষণার কাজে লিপ্ত থেকেছেন। ৯৪ বৎসর বয়সেও তার প্রিয় বিষয় Nitrogen Fixation নিয়ে গবেষণায় রত ছিলেন। তার মৌলিক গবেষণাপত্রের সংখ্যা ছয় শতেরও বেশি। পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি ডক্টরেট এবং এস.এ. হিল ও জি. হিল স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন। নোবেল পুরস্কার কমিটিতে ১৯৩৮, ১৯৪৭ ও ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে রসায়ন বিভাগে বিচারক ছিলেন।
নীলরতন সরকার রচিত গ্রন্থগুলো হচ্ছে- আমাদের খাদ্য, জমির উর্বরতা বৃদ্ধির উপায়, নিউ কনসেপশন ইন বায়ো-কেমিস্ট্রি এবং ইনফ্লুয়েন্স অফ লাইট ইন সাম বায়ো-কেমিক্যাল প্রসেসেস ইত্যাদি।
নীলরতন এলাহাবাদে ইণ্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সের বাড়িটির জন্যে ২০ লাখ টাকা ব্যয় করেন। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় পরে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে নীলরতন ধরের প্রথমা স্ত্রী বিজ্ঞানী সেইলা (শিলা) ধরের মৃত্যুর পর তার নামাঙ্কিত করে।
নীলরতন অত্যন্ত মিতব্যয়ী জীবনযাপন করতেন। বিজ্ঞান গবেষণার জন্যে বহু অর্থ দান করেছেন। আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের নামে অধ্যাপক পদ ও আচার্য্য জগদীশচন্দ্র বসুর নামে লেকচারার পদ সৃষ্টি জন্যে ১ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। চিত্তরঞ্জন সেবাসদনকে ১ লক্ষ টাকা এবং এ ছাড়া তার ৭ বছরের সম্পূর্ণ বেতন এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করে গিয়েছিলেন। ভারত সরকার তাকে ‘পদ্মশ্রী’ খেতাব দিতে চাইলে তিনি তা বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখান করেন।
নীলরতন ধর ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের ৫ ডিসেম্বর ৯৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত