বাংলাদেশি টেলিভিশন ও মঞ্চ অভিনেতা আলী যাকের জন্মগ্রহণ করেন।
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ৩১০তম (অধিবর্ষে ৩১১তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৮১৩ : মেক্সিকোর স্বাধীনতা ঘোষিত হয়।
১৮৬০ : আব্রাহাম লিংকন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
১৯৭৫ : আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, বাংলাদেশের প্রথম প্রধান বিচারপতি, দেশটির ষষ্ঠ রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৯৬ : বিল ক্লিনটন পুনরায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
১৮১৪ : অ্যাডলফে সাক্স, বেলজীয় বংশোদ্ভূত ফরাসি যন্ত্রপ্রকৌশলী ও স্যাক্সোফোনের উদ্ভাবক।
১৮৫১ : চার্লস ডও, মার্কিন সাংবাদিক ও অর্থনীতিবিদ।
১৯২৬ : হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়, ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অভিনেতা।
১৯৪৪ : আলী যাকের, বাংলাদেশি টেলিভিশন ও মঞ্চ অভিনেতা।
১৯৪১ : ফরাসি লেখক মরিস লি ব্লাঞ্চ।
১৯৬৪ : নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জার্মান সুইস প্রাণরসায়ন বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ হান্স ভন ইউলার-ছেলপিন।
আলী যাকের ছিলেন একজন বাংলাদেশি অভিনেতা। টেলিভিশন ও মঞ্চ নাটকে তিনি ছিলেন সমান জনপ্রিয়। দেশীয় বিজ্ঞাপনশিল্পের তিনি একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটি-র কর্ণধার ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখতেন।
জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর তৎকালীন চট্টগ্রাম জেলার ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার (বর্তমানে জেলা) রতনপুর ইউনিয়নে। বাবা মাহমুদ তাহের ও মা রেজিয়া তাহের। বাবা-মায়ের চার সন্তানের মধ্যে যাকের ছিলেন তৃতীয়। বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে তিনি কুষ্টিয়া ও মাদারীপুরে শৈশব অতিবাহিত করেন। সহধর্মিনী সারা যাকেরও একজন অভিনেত্রী।
১৯৬০ সালে সেন্ট গ্রেগরিজ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরবর্তীতে ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
সত্তরের দশকে মঞ্চ কাঁপানো নূরুলদীন কিংবা নব্বই দশকে টিভি নাটকের ‘বড় চাচা’ সব রূপেই দর্শকের মন জয় করেছেন আলী যাকের। এছাড়া বাংলাদেশে সঠিক সময়ে নাটক মঞ্চস্থ এবং টিকেট কেটে নাটক দেখার প্রচলন তার হাত ধরেই হয়েছিল বলে জানা যায়।
আলী যাকের আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে মামুনুর রশীদের নির্দেশনায় মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকটিতে প্রথম অভিনয় করেন ১৯৭২ সালে। একই বছর আতাউর রহমান ও জিয়া হায়দারের আহ্বানে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে যোগ দেন। ওই দলে তিনি আতাউর রহমানের নির্দেশনায় ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। ১৯৭৩ সালে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে তিনি প্রথম নির্দেশনা দেন ‘বাদল সরকারের বাকি ইতিহাস’ নাটকে, যা ছিল বাংলাদেশে প্রথম দর্শনীর বিনিময়ে নাট্য প্রদর্শনীর যাত্রা।
ব্রেটল ব্রেশটের দ্য লাইফ অব গ্যালিলিও গ্যালিলি অবলম্বনে গ্যালিলিও নামে অনুবাদ নাটকে নামচরিত্র ‘গ্যালিলিও’ হিসেবে অভিনয়ের জন্যে আলী যাকেরকে ‘বাংলার গ্যালিলিও’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
টেলিভিশন ধারাবাহিকগুলোর মধ্যে ‘বহুব্রীহি’ ও আজ রবিবার আলী যাকেরের অন্যতম নাটক। এছাড়াও অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেন তিনি। একক নাটকের মধ্যে রয়েছে একদিন হঠাৎ, নীতু তোমাকে ভালোবাসি, পাথর সময়, অচিনবৃক্ষ, আইসক্রিম, পান্ডুলিপি, গণি মিয়ার পাথর ইত্যাদি।
মঞ্চ নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে- কবর, বুড়ো সালিকের ঘাড়ে রোঁ, বিদগ্ধ রমণী কুল, তৈল সংকট, এই নিষিদ্ধ পল্লীতে, দেওয়ান গাজীর কিস্সা, সৎ মানুষের খোঁজে, অচলায়তন, কোপেনিকের ক্যাপ্টেন, ম্যাকবেথ, টেমপেস্ট, নূরলদীনের সারাজীবন, কবর দিয়ে দাও, গ্যালিলিও, কাঁঠাল বাগান ইত্যাদি। এছাড়াও তিনি আগামী, নদীর নাম মধুমতী, লালসালু, রাবেয়া ইত্যাদি চলচ্চিত্রে কাজ করেন।
শিল্পকলায় অবদানের জন্যে একুশে পদক,
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার,
বঙ্গবন্ধু পুরস্কার,
মুনীর চৌধুরী পদক,
সেলিম আল দীন পদক,
নরেন বিশ্বাস পদক,
দ্য ডেইলি স্টার-স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড সেলিব্রিটিং লাইফ,
মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার-২০১৯, ইত্যাদি।
আলী যাকের আক্ষরিক অর্থে একজন নক্ষত্র। তিনি তার উপস্থিতির মাধ্যমে তার জ্ঞান, ব্যক্তিত্ব ও সারল্যের আলো ছড়াতেন। তার মেধা, মনন, জীবনাচরণ, নেতৃত্ব গুণ নাট্যপাড়ার অনেকের জন্যে ছিল অনুসরণীয়। বহু গুণের অধিকারী এই ব্যক্তিত্ব ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর সকালে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। বনানী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
সূত্র: সংগৃহীত