বাংলাদেশের একজন সাংবাদিক ও সাহিত্যিক মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী মৃত্যুবরণ করেন।
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ৩১২তম (অধিবর্ষে ৩১৩তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৮৮১ : বালক-বালিকাদের পাঠ্য সাপ্তাহিক ‘আর্যকাহিনী’ প্রকাশিত হয় যার সম্পাদক ছিলেন সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায়।
১৮৯৫ : জার্মান পর্দাথবিদ ভিলহেল্ম কনরাড রন্টগেন রঞ্জন রশ্মি আবিষ্কার করেন। রঞ্জন রশ্মি হলো ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এক ধরনের তাড়িত চৌম্বক বিকিরণ; যার অপর নাম এক্স-রে।
১৯১০ : ওয়াশিংটনের নির্বাচনে প্রথম নারী ভোট প্রদান করেন।
১৬৫৬ : এডমন্ড হ্যালি, বিখ্যাত ইংরেজ জ্যোতির্বিজ্ঞানী, ভূপদার্থবিদ, গণিতজ্ঞ, আবহাওয়াবিদ এবং পদার্থবিজ্ঞানী।
১৯০৯ : আচার্য ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়, বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী দিল্লি ঘরানার শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী।
১৯২১ : সুবিনয় রায়, প্রখ্যাত বাঙালি রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী।
১৯২৩ : জ্যাক কিলবি, নোবেলবিজয়ী আমেরিকান প্রকৌশলী ও পদার্থবিজ্ঞানী।
১৬৭৪ : ইংরেজ কবি জন মিলটন।
১৯৩৩ : ভারতীয় আলোকচিত্র শিল্পী লক্ষ্মীনারায়ণ রায়চৌধুরী।
১৯৫৩ : নোবেলজয়ী রুশ লেখক ইভান বুনিন।
১৯৫৪ : বাংলাদেশি সাহিত্যিক মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী।
১৯৮৫ : প্রখ্যাত রবীন্দ্রজীবনীকার প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়।
২০০৯ : নোবেলজয়ী রাশিয়ান পদার্থবিদ ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী ভিতালি ল্যাজারেভিচ গিঞ্জবার্গ।
মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী ছিলেন বাংলাদেশের একজন সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। বিশ শতকের মধ্যভাগে প্রাঞ্জল ভাষায় প্রবন্ধ রচনা করে যারা খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, ওয়াজেদ আলী ছিলেন তাদের অন্যতম।
জন্মগ্রহণ করেন সাতক্ষীরা জেলার বাঁশদহ গ্রামে। বাবা মুনশি মোহাম্মদ ইব্রাহিম ছিলেন একজন পল্লিচিকিৎসক। বাবার ডাক্তারখানায় সংবাদপত্র পাঠ ও নানা বিষয়ে বিতর্ক চলত। এসব বিষয় কিশোর ওয়াজেদ আলীকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। এ থেকেই ভবিষ্যৎ জীবনে একজন সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন তার মধ্যে দৃঢ়মূল হয়।
শিক্ষাজীবনের শুরু বাঁশদহের মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয়ে। স্থানীয় বাবুলিয়া উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে বৃত্তিসহ এন্ট্রান্স পাস করার পর তিনি কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজে এফএ ক্লাসে ভর্তি হন। কিন্তু মওলানা আকরাম খাঁর প্রভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে তিনি পরীক্ষার আগে কলেজ ত্যাগ করেন এবং ব্রিটিশবিরোধী অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। পরে তিনি সাংবাদিকতায় চলে আসেন এবং ১৯২০ থেকে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত কলকাতায় মুসলিম মালিকানাধীন বেশ কয়েকটি দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো: মোহাম্মদী, নবযুগ, সেবক, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, The Musalman, খাদেম, সওগাত, সহচর, বুলবুল ও সাম্যবাদী।
দুই শতাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধের লেখক ওয়াজেদ আলীর জীবদ্দশায় প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা খুবই কম। ছোট ও মাঝারি আকারের জীবনী, অনুবাদ ইত্যাদি মিলিয়ে তার আটটি গ্রন্থ পাওয়া যায়। সেগুলো হলো- মরুভাস্কর, স্মার্ণানন্দিনী (অনুবাদ), ছোটদের হজরত মোহাম্মদ, কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মোহাম্মদ আলী, ডন কুইজসোটের গল্প, মহামানুষ মুহসিন ও সৈয়দ আহমদ। এর মধ্যে মরুভাস্কর ও স্মার্ণানন্দিনী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সম্প্রতি বাংলা একাডেমী থেকে তার রচনাবলির অংশবিশেষ দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। ওয়াজেদ আলী প্রথমদিকে ইংরেজিতেও কিছু প্রবন্ধ রচনা করেছেন।
মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী ছিলেন মুসলিম কৃষ্টি ও সমাজজীবনের একজন ব্যাখ্যাকার এবং একজন আদর্শবাদী সাহিত্যিক। তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে সাংবাদিকতা ও সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে সমাজসেবাকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন। তিনি মুসলিম সমাজের নানা দোষত্রুটি, নতুন রাজনৈতিক পটভূমিতে সমাজ ও জীবন বিকাশের ধারা এবং ভাষা ও সাহিত্যের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে সমকালীন পত্র-পত্রিকায় বহু মূল্যবান প্রবন্ধ রচনা করেন। তিনি যুক্তিবাদী মন ও পরিচ্ছন্ন চিন্তার অধিকারী ছিলেন।
১৯৫৪ সালের ৮ নভেম্বর সাতক্ষীরাতে নিজ গ্রামেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত