বিভাগপূর্ব ভারতবর্ষের মুসলিম কবি, দার্শনিক, সাহিত্যিক, দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ স্যার আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল জন্মগ্রহণ করেন।
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ৩১৩তম (অধিবর্ষে ৩১৪তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৭৯৮ : ব্রিটিশ গভর্নরের আদেশে কলকাতায় রবিবারে ঘোড়দৌড় ও সব রকম জুয়াখেলা নিষিদ্ধ হয়।
১৯৯৯ : জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেসকো নির্বাহী পরিষদের নির্বাচনে বাংলাদেশ এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ থেকে সদস্য নির্বাচিত হয়।
১৮১৮ : ইভান তুরগেনেভ, রাশিয়ার খ্যাতনামা উপন্যাস লেখক।
১৮৮৫ : হেরমান ওয়েইল, জার্মান গণিতবিদ।
১৮৭৭ : স্যার আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল, বিভাগপূর্ব ভারতবর্ষের মুসলিম কবি, দার্শনিক এবং রাজনীতিবিদ।
১৮৯৭ : রোনাল্ড জর্জ রেফর্ড নোরিশ, নোবেলজয়ী ইংরেজ রসায়নবিদ ও অধ্যাপক।
১৯২৯ : ইমরে কার্তেজ, নোবেলবিজয়ী হাঙ্গেরিয়ান লেখক।
১৯৩৬ : মিখাইল তাল, দাবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।
১৯৪৫ : শিপ্রা বসু, হিন্দুস্থানী উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের প্রখ্যাত শিল্পী।
১৯১৮ : ফরাসি কবি গিইয়োম আপলিনের।
১৯৫৩ : ইংরেজ কবি ডিলান টমাস।
২০১১ : ভারতীয় বংশোদ্ভূত নোবেলজয়ী মার্কিন বিজ্ঞানী হর গোবিন্দ খোরানা।
পুরো নাম আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল। আল্লামা ইকবাল নামেই অধিক পরিচিত। একাধারে একজন কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ ও মনীষী ছিলেন। আধুনিক বিশ্বে ইসলামের মর্মবাণীর সার্থক ব্যাখ্যাদাতা হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হয়। সমাজ, রাষ্ট্র, বিজ্ঞান, ধর্ম, শিল্পবিজ্ঞানসহ নানা ক্ষেত্রে তার রয়েছে অবদান।
জন্মগ্রহণ করেন পাঞ্জাবের শিয়ালকোটে ১৮৭৭ সালের ৯ নভেম্বর। বাবা শেখ নূর মুহাম্মদ ছিলেন পেশায় একজন দর্জি। মায়ের নাম ইমাম বিবি। বাবা-মা আদর করে তার নাম রাখেন ইকবাল-যার অর্থ সৌভাগ্য।
পড়াশুনার শুরুটা পারিবারিক পরিমণ্ডলেই। এরপর স্থানীয় মক্তবে তার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয়। ১৮৯৭ সালে আরবি ও ইংরেজিতে সারা পাঞ্জাবে প্রথম স্থান ও দু’টি স্বর্ণপদক লাভ করে বি.এ এবং ১৮৯৯ সালে দর্শন শাস্ত্রে স্বর্ণপদক লাভ করে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্মজীবনের শুরু হয় লাহোর ওরিয়েন্টাল করেজে ইতিহাস ও দর্শন শাস্ত্রের অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে। পরে লাহোর ইসলামিয়া কলেজ ও লাহোর সরকারি কলেজে ইংরেজি ও দর্শনের খন্ডকালীন অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ১৯০৫ সালে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্যে বিলেত যান।
বিলেতে তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজ থেকে দর্শন শাস্ত্রে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর পশ্চিম ইউরোপ ভ্রমণ শেষে জার্মানির মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে ১৯০৭ সালে ‘The Development of Metaphysics in Persia’ বিষয়ের উপর গবেষণা করে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯২৬ সালে তিনি পাঞ্জাবি আইন পরিষেদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং ধর্ম প্রবর্তকদের বিরুদ্ধে কৃৎসাপূর্ণ প্রচারণা বন্ধে প্রস্তাব পাস করেন। এরপর তিনি লন্ডন থেকে ডিস্টিংসান সহকারে ব্যারিস্টারি পাস করেন। সেখান থাকতেই তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন অধ্যাপনা করেন। এভাবেই ইকবালের মনে প্রাচ্যের সঙ্গে পাশ্চাত্যের সাক্ষাৎ ঘটে এবং তার কাব্যে এর দুয়ের অপূর্ব সম্মিলন ঘটে।
ইকবালের কাব্য-প্রতিভা ও অনুপম রসাবেশ সহজেই রস-পিপাসুদের আকৃষ্ট করে। জড়তা, ক্লীবতা ও দূর্গতির গহ্বরে নিপাতিত মাঠ-ঘাটের পথ প্রান্তরের মানুষ খুঁজে পায় অভূতপূর্ব শিহরণ ও কর্মচাঞ্চল্য। সূফী কবি মাওলানা জালাল উদ্দীন রুমী ছিলেন ইকবালের কাব্যপথের সর্বশ্রেষ্ঠ আলোকবর্তিকা।
সাধনামুখর জীবনে দার্শনিক ইকবালের কবিতায় উঠে আসে আল্লাহর প্রকৃতি, ভাগ্য-জীবন, আত্মতত্ত্ব, রাজনীতি, শিক্ষা, ধর্মতত্ত্ব, নীতিবিদ্যা, সূফীতত্ত্ব ইত্যাদি। এসব লেখনীতে ফুটে ওঠে তার দর্শন। তার কয়েকটি রচনা হলো- আসরার ই খুদী, শিকওয়া ও জবাবে শিকওয়া, দা রিকনস্ট্রাকশন ওফ রিলিজিয়াস থট ইন ইসলাম, বাআল ই জিবরাইল, জাভেদ নামা ইত্যাদি।
ইকবাল তার শিক্ষাকে কাজে লাগিয়েই সারা বিশ্বে সুনাম অর্জন করেন। ইরানেও রয়েছে তার সমধিক পরিচিতি। ইরাকে তিনি ইকবাল ই-লাহোরী নামে পরিচিত। ব্যক্তিগতভাবে ছিলেন খুবই ঠাণ্ডা মাথার মানুষ। তাছাড়া তিনি যেকোনো পরিস্থিতি খুব সহজেই কাটিয়ে উঠতে পারতেন। বিভিন্ন সময় ও পরিস্থিতিতে তিনি তিনবার বিয়ে করেছিলেন।
আল্লামা ইকবালের দর্শনের মূল কথা হচ্ছে খুদী বা আত্মা, এই খুদী বা আত্মার ধারণার উপর ভিত্তি করেই তার দর্শনের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। তার মতে, খুদী বাস্তব সত্তা এবং নিজের শক্তিতেই এই সত্তা অস্তিত্বশীল। অতিন্দ্রীয় অনুভূতির মাধ্যমে আমরা এই সত্তাকে জানতে পারি। তিনি বলেন, ‘খুদীকে এইরূপ উন্নত কর যে, তোমার প্রতিটি ভাগ্যলিপি লেখার পূর্বে খোদা যেন শুধান, কি তোমরা অভিপ্রায়’।
১৯৩৮ সালের ২১ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত