1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২০ পূর্বাহ্ন

ইতিহাসে সেপ্টেম্বর ৪ – বাংলাদেশি সঙ্গীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন এর জন্মদিন

  • সময় শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ১০২৫ বার দেখা হয়েছে

বাংলাদেশি সঙ্গীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন এর জন্মদিন

গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ২৪৬তম (অধিবর্ষে ২৪৭তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।

ঘটনাবলি

১৮৮২ : মার্কিন বিজ্ঞানী এডিসন বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা আবিষ্কার করেন।
১৮৮৮ : জর্জ ইস্টম্যান ক্যামেরার রোল ফিল্ম প্যাটেন্ট করেন।
১৯৩০ : লন্ডনে কেমব্রিজ থিয়েটার চালু হয়।

জন্ম

১৮৪৬ : ড্যানিয়েল বার্নহ্যাম, মার্কিন স্থপতি।
১৮৮০ : ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী, সমাজতান্ত্রিক ও গবেষক।
১৮৯০ : এস ওয়াজেদ আলী, বাঙালি সাহিত্যিক।
১৮৯৪ : জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, ভারতীয় বাঙালি রসায়ন বিজ্ঞানী শিক্ষক ও উদ্ভাবক।
১৯০৬ : ম্যাক্স ডেলবুর্ক, নোবেল বিজয়ী জার্মান চিকিৎসা ও জীববিজ্ঞানী।
১৯১৭ : দ্বিতীয় হেনরি ফোর্ড, মার্কিন শিল্পপতি।
১৯৩৪ : ক্লাইভ গ্রেঞ্জার, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ।
১৯৫২ : ঋষি কাপুর, ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক এবং পরিচালক।
১৯৫৪ : সাবিনা ইয়াসমিন, বাংলাদেশি সঙ্গীতশিল্পী।

মৃত্যু

১৯৬৪ : ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকারী এবং সূর্য সেনের সশস্ত্র বিপ্লবী লোকনাথ বল
২০০৩ : ভারতীয় বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী জগন্ময় মিত্র
২০০৪ : বাঙালি গীতিকার, সুরকার ও প্রযোজক বীরেশ্বর সরকার
২০১১ : বাংলাদেশি সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগঠক অজিত রায়
২০১২ : ভারতীয় বাঙালি লেখক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ

সঙ্গীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন

সাবিনা ইয়াসমিন একজন বাংলাদেশি নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গানের পাশাপাশি তিনি দেশাত্মবোধক গান থেকে শুরু করে উচ্চাঙ্গ, ধ্রুপদী, লোকসঙ্গীত ও আধুনিক বাংলা গানসহ বিভিন্ন ধারার নানান আঙ্গিকের সুরে গান গেয়ে নিজেকে দেশের অন্যতম সেরা সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়ে তিনি এক ডজনেরও বেশি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। শিল্পকলার সঙ্গীত শাখায় অবদানের জন্যে বাংলাদেশ সরকার তাকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক এবং সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে।

জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। বাবা লুৎফর রহমান ব্রিটিশ রাজের অধীনে সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। মায়ের নাম বেগম মৌলুদা খাতুন। পৈতৃক বাড়ি ছিল সাতক্ষীরায়। পাঁচ বোনের মধ্যে চার বোনই সঙ্গীতের সাথে যুক্ত। তারা হলেন ফরিদা, ফৌজিয়া, নীলুফার এবং সাবিনা ইয়াসমিন। তার আরেক বোন নাজমা ইয়াসমিন। তার ভগ্নীপতি চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনেতা, সুরকার খান আতাউর রহমান এবং তার ভাগ্নে সঙ্গীতশিল্পী আগুন।

বাবার চাকরির সূত্রে নারায়ণগঞ্জে বেড়ে ওঠেন। শৈশব থেকে তিনি গানের পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন। তার বাবা রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতেন। মা মুর্শিদাবাদে সে সময়ের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ও ওস্তাদ কাদের বক্সের কাছে গান শিখতেন। তার বড় বোন ফরিদা ও ফৌজিয়া দুর্গাপ্রসাদ রায়ের কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিখতেন। তিনি ও নীলুফার তাদের সাথে বসতেন। তার মা তাকে তালিমে সহায়তা করতেন এবং হারমোনিয়াম বাজিয়ে সঙ্গ দিতেন। মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি প্রথম মঞ্চে গান করেন। পরবর্তীকালে ওস্তাদ পি সি গোমেজের কাছে একটানা ১৩ বছর গানের শাস্ত্রীয় গানের তালিম নেন।

সাবিনা ইয়াসমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তার সহপাঠী ছিলেন শেখ কামাল ও তার স্ত্রী সুলতানা কামাল খুকী। গানের ব্যস্ততার জন্যে পড়াশোনায় সময় দিতে পারতেন না। তবে তার বোন নীলুফারও সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হওয়ায় তার কাছ থেকে নোটগুলো সংগ্রহ করতেন।

১৯৬৪ সালে তিনি বেতারে ছোটদের গানের অনুষ্ঠান খেলাঘর-এ নিয়মিত অংশ নিতেন। এই অনুষ্ঠান থেকে তার প্রথম সম্মানী ছিল ১০ টাকা। অনুষ্ঠানে তার সঙ্গী ছিলেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ। শিশুশিল্পী হিসেবে তারা দুজন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের নিকট থেকে পুরস্কারও অর্জন করেছিলেন। সাবিনা মাত্র ১৩ বছর বয়সে আমজাদ হোসেন ও নুরুল হক বাচ্চু পরিচালিত ‘আগুন নিয়ে খেলা’ (১৯৬৭) চলচ্চিত্রে আলতাফ মাহমুদের সুরে ‘মধুর জোছনা দীপালি’ গান গাওয়ার মাধ্যমে নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এই গানের জন্যে তিনি ৫০০ টাকা সম্মানি পান। এর পূর্বে তিনি এহতেশামের নতুন সুর (১৯৬২) চলচ্চিত্রে রবীন ঘোষের সুরে প্রথম শিশুশিল্পী হিসেবে গান করেন।

তিনি সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন তার প্রতিবেশীর বাড়িতে আলতাফ মাহমুদ আসেন। মাহমুদ তখন চলচ্চিত্রের সঙ্গীত ও সুরায়োজন করতেন। তার মা ও তিনি মাহমুদকে তাকে চলচ্চিত্রের গানের সুযোগ দেওয়া অনুরোধ করেন এবং মাহমুদ তাকে আগুন নিয়ে খেলা (১৯৬৭) চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার সুযোগ দেন।

আশির দশকে তার গাওয়া ‘জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো’, ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো ও চিঠি দিও প্রতিদিন গানগুলো জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তার গাওয়া দেশাত্মবোধক গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো’, ‘সব ক’টা জানালা খুলে দাও না’, ‘ও আমার বাংলা মা’, ‘মাঝি নাও ছাড়িয়া দে’, ‘সুন্দর সুবর্ণ’ ও ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার’ ইত্যাদি।

সম্মাননা

সাবিনা ইয়াসমিন সঙ্গীতে অবদানের জন্যে বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে একুশে পদক, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, বিএফজেএ পুরস্কার, উত্তম কুমার পুরস্কার, এইচএমভি ডাবল প্লাটিনাম ডিস্ক, বিশ্ব উন্নয়ন সংসদ থেকে সঙ্গীতে ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি লাভ, জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার, পূর্বাণী চলচ্চিত্র পুরস্কার, শেরে বাংলা স্মৃতি পদক, অ্যাস্ট্রোলজি পুরস্কার, জিয়া স্মৃতি পদক, নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ‘বেস্ট সিঙ্গার’ পুরস্কার, ২০১৭ সালে দশম স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-দ্য ডেইলি স্টার জীবনের জয়গান উৎসবের আজীবন সম্মাননাসহ অসংখ্য পুরস্কার পান।

২০০৭ সালে প্রতিভাবান এই গুণী শিল্পীর শরীরে মরণব্যাধি ক্যান্সার ধরা পড়ে। তবে সংবাদটি জানার পর ভেঙে পড়েননি তিনি। মনকে শক্ত রেখে, অসংখ্য ভক্ত-শুভানুধ্যায়ীর দোয়া ও ভালোবাসায় ক্যান্সার থেকে সেরে ওঠেন। সিঙ্গাপুরে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরেন।

পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে গানের ভুবনে বিচরণ করছেন সাবিনা। বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র রুনা লায়লা ছাড়া তার সমকক্ষ হয়ে আর কেউই এতো লম্বা সময় ধরে আধিপত্য বজায় রাখতে পারেননি। মরমি শিল্পী আব্দুল আলীম থেকে শুরু করে একালের উঠতি গায়কদের সঙ্গেও তিনি একের পর এক গান গেয়ে চলেছেন। সুযোগ পেয়েছেন উপমহাদেশের বরেণ্য সুরকার আর ডি বর্মণের সুরে গান গাওয়ার। উপমহাদেশের বিখ্যাত দুই কণ্ঠশিল্পী কিশোর কুমার ও মান্না দের সঙ্গেও তিনি গান গেয়েছেন। ক্যারিয়ারে ১২ হাজারের মতো গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। এখনো জাদুকরী কণ্ঠে মুগ্ধ করে যাচ্ছেন সব শ্রেণির সঙ্গীতপ্রেমী মানুষকে।

 

সূত্র: সংগৃহীত

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com