১৮৭৯ : লন্ডনে ব্রিটেনের প্রথম টেলিফোন একচেঞ্জ স্থাপিত হয়।
১৮৮০ : ইংল্যান্ডে প্রথম ক্রিকেট টেস্ট ম্যাচ শুরু।
১৯৯৮ : ডায়াবেটিক সোসাইটির প্রথমবারের মতো স্বর্ণপদক প্রদান শুরু। বঙ্গবন্ধুকে মরণোত্তর স্বর্ণপদক প্রদান।
১৮৭৬ : জন জেমস রিকার্ড ম্যাক্লিয়ড, নোবেলজয়ী স্কটিশ প্রাণরসায়নবিদ এবং শারীরতত্ত্ববিদ।
১৮৯২ : এডওয়ার্ড ভিক্টর অ্যাপলটন, নোবেলজয়ী ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী।
১৯০৬ : লুইস ফেদেরিকো লেলইর, আর্জেন্টিনীয় চিকিৎসক ও জৈবরসায়নবিদ, নোবেলজয়ী।
১৯১৭ : বাসন্তী দুলাল নাগচৌধুরী, ভারতীয় বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী, ভারত সরকারের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ও পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম পথিকৃৎ।
১৯২০ : শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বাঙালি কবি, কথা-সাহিত্যিক ও নাট্যকার৷
১৯৯৫ : মুস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশি ক্রিকেটার।
১৯০৭ : ফরাসি সাহিত্যিক সুলি প্রুদোম।
১৯৭২ : প্রখ্যাত বাঙালি সেতার ও সানাই বাদক হিসেবে পরিচিত সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ।
১৯৮২ : খ্যাতনামা গণিতের অধ্যাপক। নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী আবদুস সালামের শিক্ষক অনিলেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়।
১৯৮৯ : বাংলাদেশি চিকিৎসক এবং বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম।
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ছিলেন একজন বাঙালি সঙ্গীতজ্ঞ। বাবা আলাউদ্দিন খান নামেও তিনি পরিচিত ছিলেন। সেতার ও সানাই এবং রাগ সঙ্গীতে বিখ্যাত ঘরানার গুরু হিসাবে সারা বিশ্বে তিনি প্রখ্যাত। মূলত সরোদই তার শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বাহন হলেও সাক্সোফোন, বেহালা, ট্রাম্পেটসহ আরো অনেক বাদ্যযন্ত্রে তার যোগ্যতা ছিল অপরিসীম।
জন্মগ্রহণ করেন ৮ অক্টোবর ১৮৬২ তৎকালীন ত্রিপুরা প্রদেশের শিবপুর গ্রামে যা বর্তমানে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত। তার সন্তান ওস্তাদ আলী আকবর খান ও অন্নপূর্ণা দেবী নিজস্ব ক্ষেত্রে উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
আলাউদ্দিন খাঁয়ের বাল্যকালে অগ্রজ ফকির আফতাবউদ্দিন খাঁর নিকট সঙ্গীতে হাতেখড়ি। সুরের সন্ধানে তিনি দশ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে এক যাত্রাদলের সঙ্গে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ান। ওই সময় তিনি জারি, সারি, বাউল, ভাটিয়ালি, কীর্তন, পাঁচালি প্রভৃতি গানের সঙ্গে পরিচিত হন। পরে কলকাতা গিয়ে তিনি সঙ্গীতসাধক গোপালকৃষ্ণ ভট্টাচার্য ওরফে নুলো গোপালের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
নুলো গোপালের মৃত্যুর পর আলাউদ্দিন কণ্ঠসঙ্গীতের সাধনা ছেড়ে যন্ত্রসঙ্গীত সাধনায় নিযুক্ত হন। স্টার থিয়েটারের সঙ্গীতপরিচালক অমৃতলাল দত্ত ওরফে হাবু দত্তের কাছেতিনি বাঁশি, পিকলু, সেতার, ম্যান্ডোলিন, ব্যাঞ্জো ইত্যাদি দেশি-বিদেশি বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখেন।
সেই সঙ্গে তিনি লবো সাহেব নামে এক গোয়ানিজ ব্যান্ড মাস্টারের কাছে পাশ্চাত্য রীতিতে এবং বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ অমর দাসের কাছে দেশীয় পদ্ধতিতে বেহালা শেখেন; একই সময়ে তিনি মিসেস লবোর কাছে স্টাফ নোটেশনও শেখেন। এ ছাড়া হাজারী ওস্তাদের কাছে সানাই, নাকারা, টিকারা, জগঝম্প এবং নন্দবাবুর কাছে মৃদঙ্গ ও তবলা শেখেন। এভাবে তিনি সর্ববাদ্যে একজন বিশারদ হয়ে ওঠেন।
আলাউদ্দিন খাঁর পরামর্শ ও নির্দেশে কয়েকটি নতুন বাদ্যযন্ত্র উদ্ভাবিত হয়। সেগুলোর মধ্যে ‘চন্দ্রসারং’ ও ‘সুরশৃঙ্গার’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি অনেক রাগ-রাগিণীও সৃষ্টি করেন, যেমন: হেমন্ত, দুর্গেশ্বরী, মেঘবাহার, প্রভাতকেলী, হেম-বেহাগ, মদন-মঞ্জরী, মোহাম্মদ (আরাধনা), মান্ঝ খাম্বাজ, ধবলশ্রী, সরস্বতী, ধনকোশ, শোভাবতী, রাজেশ্রী, চন্ডিকা, দীপিকা, মলয়া, কেদার মান্ঝ, ভুবনেশ্বরী ইত্যাদি। তিনি স্বরলিপিতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। তার বহু গানের স্বরলিপি সঙ্গীতবিজ্ঞান প্রবেশিকা গ্রন্থে নিয়মিত প্রকাশ হতো।
বহুসংখ্যক যোগ্য শিষ্য তৈরি আলাউদ্দিন খাঁর অনন্য কীর্তি। তার সফল শিষ্যদের মধ্যে তিমিরবরণ, পুত্র আলী আকবর খান, জামাতা পন্ডিত রবিশঙ্কর, ভ্রাতুষ্পুত্র বাহাদুর হোসেন খান, কন্যা রওশন আরা বেগম (অন্নপূর্ণা), ফুলঝুরি খান, খাদেম হোসেন খান, মীর কাশেম খান, পন্ডিত যতীন ভট্টাচার্য, পান্নালাল ঘোষ, নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়, পৌত্র আশীষ খান ও ধ্যানেশ খান, খুরশীদ খান, শরণরাণী, ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য, দ্যুতিকিশোর আচার্য চৌধুরী, যামিনীকুমার চক্রবর্তী, রণেন দত্ত রাজা রায়, শচীন্দ্রনাথ দত্ত, শ্যামকুমার গাঙ্গুলী, শ্রীপদ বন্দ্যোপাধ্যায়, সন্তোষ প্রামাণিক এবং রাজা ব্রিজনারায়ণ প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। তিনি দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের সমন্বয়ে অর্কেস্ট্রার স্টাইলে একটি যন্ত্রীদল গঠন করে নাম দেন ‘রামপুর স্ট্রিং ব্যান্ড’।
শুধু সঙ্গীতই নয়, সমাজসেবামূলক কাজও সম্পাদন করেছেন তিনি। শিবপুর গ্রামে মসজিদ নির্মাণ এবং পানি পানের জন্যে একটি পুকুরও খনন করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
ব্রিটিশ সরকার তাকে ‘খাঁ সাহেব’ উপাধিতে ভূষিত করে। ভারত সরকার তাকে একে একে ‘সঙ্গীত নাটক আকাদেমী সম্মান’ (১৯৫২), ‘পদ্মভূষণ’ (১৯৫৮) ও ‘পদ্মবিভূষণ’ (১৯৭১); বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ‘দেশিকোত্তম’ (১৯৬১) এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ‘ডক্টর অব ল’ উপাধিতে ভূষিত করে।
১৯৫৪ সালে তিনি ভারত সরকার কর্তৃক প্রথম সঙ্গীত নাটক আকাদেমীর ফেলো নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ্ মুসলিম হল তাকে আজীবন সদস্যপদ দান করে। তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমন্ত্রণে শান্তি নিকেতনের বিশ্বভারতীতে আমন্ত্রিত অধ্যাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
অসংখ্য সম্মান ও খেতাবে ভূষিত আলাউদ্দিন খাঁর অসাধারণ কীর্তি ও সাফল্যকেই সূচিত করে। তিনি কিছুদিন শান্তিনিকেতনে ছিলেন। তখন তিনি আলাপ-আলোচনা-আড্ডায় নিজের জীবন সম্পর্কে অনেক কিছু বলেছিলেন, সেসব কথাই শুভময় ঘোষ ‘আমার কথা’ বইতে লিপিবদ্ধ করেছেন।
এটি মূলত আলাউদ্দিন খাঁর জীবনকাহিনী। বইটি প্রথমে ‘রত্মসাগর গ্রন্থমেলা’ থেকে, পরে ‘আনন্দ প্রকাশনী’ থেকে প্রকাশিত হয়।
এ বইতে আলাউদ্দিন খাঁ কোনো রাখঢাক বা লোকাছুপা করেননি। তিনি তার জীবনের নানা দিক নিয়ে বলে গেছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। ডাকাতের বংশধর ছিলেন সেটাও গোপন করেননি।
বাড়ি পালিয়েছেন সঙ্গীত ভালোবেসে, লঙ্গরখানায় খেয়েছেন, সঙ্গীত শিখতে না পেরে আফিম খেয়ে আত্মহত্যার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, মাইহারের রাজসভায় অন্তর্ভুক্তি, নিজের সঙ্গে দুটো দৈত্য রাখার মজার কাহিনী, বিলেত ভ্রমণ এমন নানা দিক উঠে এসেছে তার কথায়।
সঙ্গীতপ্রিয় এই মানুষটি ১৯৭২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র : সংগৃহীত