বাঙালি লেখক অশোক বড়ুয়া এর মৃত্যুদিন
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ২৫২তম (অধিবর্ষে ২৫৩তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৭৯১ : প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের নামানুসারে আমেরিকার রাজধানীর নামকরণ হয় ওয়াশিংটন ডিসি।
১৮৫০ : ৩১তম রাজ্য হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়া যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়।
১৯২০ : আলিগড়ের অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়।
১৯৬৯ : কানাডাতে অফিসিয়াল ল্যাংগুয়েজ অ্যাক্ট বাস্তবায়িত হয়। যার মাধ্যমে ফরাসি ভাষা ইংরেজি ভাষার সমান মর্যাদা পায়।
১৯৯১ : তাজিকিস্তান সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।
১৮৫০ : ‘ভারতেন্দু’ হরিশ্চন্দ্র, তিনি ছিলেন আধুনিক হিন্দি সাহিত্যের জনক কবি ও নাট্যকার।
১৮৭২ : সরলা দেবী চৌধুরানী, বিশিষ্ট বাঙালি বুদ্ধিজীবী ও ভারতের এলাহাবাদে প্রথম মহিলা সংগঠন ‘ভারত স্ত্রী মহামণ্ডল’-এর প্রতিষ্ঠাতা।
১৮৭৮ : দ্বিজেন্দ্রনাথ মৈত্র, প্রখ্যাত শল্যচিকিৎসক ও সমাজসেবী।
১৮৮২ : অনুরূপা দেবী, বাঙালি ঔপন্যাসিক।
১৯২০ : সন্তোষকুমার ঘোষ, প্রখ্যাত বাঙালি সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক।
১৯২৩ : ড্যানিয়েল কার্লটন গ্যাজডুসেক, নোবেলজয়ী হাঙ্গেরিয়ান বংশোদ্ভূত মার্কিন চিকিৎসক।
১৯৪১ : ডেনিস রিচি, মার্কিন প্রোগ্রামার ও কম্পিটার বিজ্ঞানী, সি প্রোগ্রামিং ভাষার জনক।
১৯৬৩ : ভারতীয় বাঙালি ইতিহাসবিদ, জাতীয়তাবাদী ব্যক্তিত্ব রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায়।
১৯৬৮ : বাঙালি লেখক অশোক বড়ুয়া।
১৯৭৬ : চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মাও সে তুং।
১৯৮৪ : চেক সঙ্গীত রচয়িতা আকাশবাণীর সিগনচার টিউন স্রষ্টা ওয়াল্টার কফম্যান।
১৯৮৯ : বাঙালি মহিলা কবি রাধারাণী দেবী।
২০১২ : ভারতে দুগ্ধ উৎপাদনে শ্বেত বিপ্লবের জনক ভার্গিজ কুরিয়েন।
২০১৪ : প্রথিতযশা নজরুলসঙ্গীত শিল্পী ও সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে নজরুল সঙ্গীতের জন্যে বিখ্যাত ফিরোজা বেগম।
অশোক বড়ুয়া ছিলেন বাঙালি সাহিত্যিক। তিনি একাধারে কবি, গল্পকার, নাট্যকার, অনুবাদক ও গীতিকার। প্রবন্ধ ও গান রচনা করেও সুনাম অর্জন করেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে মানস কবি, চন্দ্রগোমী ইত্যাদি।
জন্মগ্রহণ করেন ১৯২১ সালের ১৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ির হাইদচকিয়া গ্রামে। বাল্যকাল কাটে গ্রামের বাড়িতেই। এরপর বাবার কর্মস্থল কলকাতায় ভর্তি করানো হয় তাকে। সেখানেই তার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত হয়। আবার সপরিবারে ফিরে আসেন তার বাবা গ্রামের বাড়িতে। কিশোর অশোককে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হলো ফটিকছড়ি এম.ই স্কুলে। সেখানে কিছুদিন অধ্যয়নের পর ভর্তি হন ফটিকছড়ি করোনেশন হাই স্কুলে।
স্কুলের পরীক্ষায় বরাবরই প্রথম অশোক বড়ুয়া সহজে সব শিক্ষকের মন জয় করে নেন। ১৯৩৯ সালে তিনটি বিষয়ে লেটার মার্কসসহ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ওই অঞ্চলে তখন কোনো কলেজ ছিল না। লেখাপড়ার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় কানুনগোপাড়ার স্যার আশুতোষ কলেজ। কলেজটি চালু হলে তখন তিনি ভর্তি হয়ে যান প্রথম ব্যাচে। ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। শিক্ষা জীবনে মেধাবী ছাত্র হওয়া সত্বেও ইন্টারমিডিয়েট শেষ করা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি।
তিনি যোগ দিলেন বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। যুদ্ধ শেষে তিনি বিমান বাহিনীর চাকরি ছেড়ে কলকাতায় ফিরে যান। যোগ দেন ওষুধ কোম্পানিতে। চাকরির সুবাদে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন স্থানে, আয়ত্ত করেছেন ভিন্ন ভিন্ন ভাষা। প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চ শিক্ষা না থাকলেও অশোক বড়ুয়া বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক অধ্যয়নের ফলে পান্ডিত্য অর্জনে সমর্থ হয়েছিলেন। প্রকৃত অর্থেই তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত এবং সুশিক্ষিত।
সাহিত্যমোদী এই মানুষটির মনেপ্রাণে স্বপ্ন ছিল একটি সাহিত্য প্রকাশনা গড়ে তোলা। তারই ফলে চট্টগ্রাম লালদীঘির দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল পাবলিক লাইব্রেরি বিল্ডিংটির ঠিক সামনে একটি বইয়ের দোকান দিয়েছিলেন। কাঠের মাচার উপর নির্মিত ছোট আকারের দোকানটিতে বই রাখা ছিল থরে থরে। এক সময় অস্থায়ী দোকানটিও অদৃশ্য হয়ে যায়।
আবার নতুন চাকরি খুঁজে নেন। তার হস্তাক্ষর ছিল মুক্তার মতো সুন্দর। ১৯৫৩ সাল সাহিত্যিক অশোক বড়ুয়া তখন টগবগে যুবক। বাড়ির চাপাচাপির কারণে পরিবারের পছন্দে সুন্দরী নীলিমা চৌধুরীর সাথে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন।
বিয়ের পরেও অশোক বড়ুয়া থাকতেন চট্টগ্রাম শহরের নালাপাড়ার একটি মেসবাড়িতে আর তার স্ত্রী নীলিমা চৌধুরী থাকতেন গ্রামের বাড়ি হাইদচকিয়ায়। পারিবারিক জীবনে তাদের সংসারে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে।
বহু গান, কবিতা, নাটক, গল্প, প্রবন্ধ রচনা করেছেন তিনি। অভিনয় করেছেন, নাট্য নির্দেশনা দিয়েছেন তার রচিত নাটকে। তিনি দুটি সাময়িকী সম্পাদনা করতেন একটি ‘পারমিতা’ অন্যটি ‘বিশ্বমৈত্রী’।
সাহিত্যিক অশোক বড়ুয়া একজন সমাজ সংস্কারকও ছিলেন। বৌদ্ধ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছিল তার আনাগোনা। অশোক বড়ুয়া ১৯৬৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত