আমরা যদি কোরআনের বিধান দেখি, তাহলে দেখব, নারীকে কিছু ব্যাপারে অধিকার দেয়া হয়েছে, পুরুষকে কিছু ব্যাপারে অধিকার দেয়া হয়েছে। নারীকে অনেক ব্যাপারে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, আবার পুরুষকেও অনেক ব্যাপারে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
নারীর প্রতি এখানে কোনো বৈষম্য করা হয় নি। একজন পুরুষ যখন একজন নারীকে বিয়ে করে তখন ইসলামী রীতি অনুযায়ী পুরুষকে দেনমোহর আদায় করতে হয়। কিন্তু নারীর জন্যে এ ধরনের কোনো নিয়ম নেই। আর দেনমোহরের ব্যাপারে নির্দেশ খুব সুস্পষ্ট-দেনমোহর আপনি যা ধার্য করবেন তা আদায় করতে হবে। এটা মুখে মুখে হলে হবে না, অনাদায়ী হলে হবে না, এটা আদায় করতে হবে।
আবার স্ত্রীর যদি নিজস্ব উপার্জন থাকে, সম্পদ থাকে সেখানে স্বামীর কোনো অধিকার নেই। এটা একান্তই স্ত্রীর সম্পদ। অর্থাৎ স্ত্রীর যত কিছুই থাকুক, তবু তাকে সসম্মানে ভরণপোষণের দায়িত্ব কিন্তু স্বামীর।
এই ভরণপোষণ হলো সবরকম ভরণপোষণ। অন্যদিকে, স্ত্রীর যা-কিছু উপার্জন বা সম্পদ রয়েছে, তার কানাকড়িও স্বামী চাইতে পারবেন না আইনগতভাবে। স্ত্রী নিজের আনন্দে দিলে সেটা আলাদা কথা। না দিলে স্বামীর কোনো অধিকার নেই তা চাওয়ার।
বরং স্ত্রী যদি রান্না করতে না পারে, ভরণপোষণের দায়িত্ব যেহেতু আপনি নিয়েছেন, হয় আপনি লোক রাখবেন, লোক রাখতে না পারলে আপনি রান্না করে খাওয়াবেন। ধরুন, বাচ্চা কান্নাকাটি করছে, বাচ্চা লালনপালন করার দায়িত্বও স্ত্রীর নয়। স্ত্রী বলতে পারেন, একে নিয়ে তুমি হাঁটো, আমি ঘুমাই। আপনাকে তখন হাঁটতে হবে আর তিনি ঘুমাবেন। কারণ তার ভরণপোষণ ও তার যত্ন নেয়ার সব দায়িত্ব আপনি নিয়েছেন।
বাবার সম্পত্তিতে ছেলের এবং মেয়ের অধিকার এরকম কেন? মা-বাবাকে দেখার দায়িত্ব ছেলের, এ দায়িত্ব মেয়েকে দেয়া হয় নি। এখন দায়িত্ব দিলে দায়িত্ব পালনের জন্যে কিছু অতিরিক্ত সুবিধা আর অধিকারও তো তাকে দিতে হবে। অর্থাৎ এ-ক্ষেত্রে একেকদিকে একেকজনকে অধিকার বেশি দেয়া হয়েছে, একেকদিকে অধিকার কম দেয়া হয়েছে। ভারসাম্য রক্ষার জন্যেই এটা করা হয়েছে।
তারপরও মা-বাবা যদি ইচ্ছা করেন, তাহলে তাদের জীবদ্দশায় মেয়েকে সম্পত্তির যে-কোনো অংশ দিতে পারেন। এখানে ছেলের কিছু বলার নেই। তিনি যাকে খুশি, যেভাবে ইচ্ছা দিতে পারেন। আর যদি কাউকে তিনি কিছু না দিয়ে মারা যান, তখন মিরাসি আইন অনুসারে এ সম্পত্তি বহু ভাগে ভাগ হয়ে যায়। বাবার সম্পত্তিতে মেয়ের অধিকার ইসলাম সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠা করে।