শুদ্ধাচার বইটি যে-রকম সিম্পল, রঙটাও খুব সহজ। ভেতরের বিষয়গুলোও কিন্তু একইরকম সহজ।
এবং আমরা খুব অনায়াসে বলতে পারি যে, জীবনকে সুন্দর, আনন্দময়, প্রশান্তিময় এবং সুখী করার জন্যে সর্বস্তরের মানুষের জন্যে এটা একটা চমৎকার গাইড বই।
বলা যেতে পারে যে, ফাউন্ডেশনে যখন থেকে আমরা ইয়োগা মেডিটেশন সেন্টার করলাম ১৯৮৩ সাল থেকে (অলমোস্ট ৩৮ বছর) এবং তার আগের প্রস্তুতিকালসহ সব মিলিয়ে ৫০ বছরে শুধু আমার একার নয়, আমরা সবাই যারা সঙ্ঘে সমবেত হয়েছি তাদের সবার সম্মিলিত জ্ঞানের ফসল হচ্ছে এই বই।
আমাদের যে নৈতিক অবক্ষয়, এই নৈতিক অবক্ষয় থেকে উত্থানের, নৈতিক পুনর্জাগরণের আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করতে পারে এই বই। যদি আমরা নিজেরা এটা পড়ি, অনুশীলন করি এবং যদি আমাদের পরিচিত পরিমণ্ডলে সব জায়গায় এটা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করি।
আসলে শুধু নিজে পড়লে, নিজে অনুশীলন করলে, নিজের চর্চা করাটাই যথেষ্ট নয়! আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। কারণ আল্লাহর রসুলের প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, যে সত্যই আমরা জানলাম সে সত্যকে সবার সামনে তুলে ধরা। সবার সামনে উপস্থাপিত করা।
এই বইয়ের শুরুটাই হচ্ছে ‘আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক’। আসসালামু আলাইকুম।
তো ‘আসসালামু আলাইকুম। আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক’- এই বাক্য দিয়ে কোনো বইয়ের শুরু হয় নি!
এবং আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি বলতে পারি যে, বাংলা ভাষায় এই ধরনের পূর্ণাঙ্গ কোনো বই ইতিপূর্বে প্রকাশিত হয় নাই।
শুধু বাংলা ভাষা না। ধরুন, ইংরেজি ভাষা তো সবচেয়ে চালু ভাষা। ইংরেজি ভাষায়ও যদি এরকম কোনো বই বেরুত (ম্যানার-এটিকেটের বই আছে। সেটা হচ্ছে কীভাবে কাটা চামচ ধরতে হবে, কীভাবে খাবার টেবিল সাজাতে হবে, জীবনের কিছু কিছু জিনিস নিয়ে)।
কিন্তু পুরো জীবনকে কীভাবে সাজাতে হবে, সুখী সুন্দর করতে হবে, শুধু নিজের না পরিবারের সমাজের জাতির জন্যে এই গাইডলাইন এই বইয়ে যেভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, যত পরিপূর্ণ উপস্থাপিত হয়েছে, এর কোনো বিকল্প বা এর মতো কোনো বই এখন পর্যন্ত নাই।
এবং কোয়ান্টাম মেথড যে-রকম অনন্য একটি বই, গত ২৮ বছরে এর কোনো বিকল্প বা প্রতিস্থাপিত হতে পারে এমন কোনো বই যেভাবে আসে নাই, সেটা যে-রকম ইউনিক এই বইটাও তেমন।
কোয়ান্টাম মেথড সেটা ছিল সমস্ত জ্ঞানের একটা নির্যাস যা আমি আহরণ করতে পেরেছিলাম সেটার উপস্থাপনা।
এবং আলহামদুলিল্লাহ এই বইতে শুধু আমার না, মহামনীষীদের জ্ঞানের সাথে আমাদের সবার যে জ্ঞান, সে জ্ঞানের সংযোজন হচ্ছে এই বইটি। তো সেইদিক থেকে এটা অনন্য একটি বই।
তো আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে এই বইটি নিজে পড়া এবং চারপাশে বইটিকে ছড়িয়ে দেওয়া।
যেখানে যাচ্ছেন বইটি নিয়ে যান। ধরুন, আপনি বাসে যাচ্ছেন, খুলে রাখলেন। আচ্ছা একটু চোখ বোলাই না…
আর এটা যেহেতু লেমিনেট করা কভারসহ, কয়েকদিনে এটি নষ্ট হবে না। আর এটা খুলে যেখানেই ধরবেন, যে থাকুক, যত দূরে থাকুক এটা তার দৃষ্টি কাড়বে।
আর বলবেন যে, এটা লাল কেন? আমরা এই লালে লাল করতে চাই।
লাল হচ্ছে বাচ্চাদের জন্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় রং। লালের প্রতি বাচ্চারা খুব সহজে আকৃষ্ট হয়। আর আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে এই বাচ্চারা এখন।
আমরা তো আছি। কিন্তু আমরা আমাদের পরের প্রজন্ম, তৃতীয় প্রজন্ম, চতুর্থ প্রজন্মকে আকর্ষণ করতে চাই। হামাগুড়ি যে দেয় সেও যেন অন্যকিছু বাদ দিয়ে এটাকে ধরে যে, আচ্ছা এটা কী?
মানে ছোটবেলাই যেন এই ছবিটা তার কাছে কী হয়ে যায়? আচ্ছা। আচ্ছা একটু বড় হলে সে বলবে যে, আমি তো ছোটবেলায় এটা ধরেছিলাম। এবং ছোটবেলায় যে জিনিসের প্রতি মায়া হয়ে যায় সে জিনিস সে সহজে ছাড়তে পারে না।
আর এটার ভাষা এত সহজ যে এটা এসএমএস-র ভাষা, এটা একবিংশ শতাব্দীর ভাষায় লেখা। যার ফলে তিন লাইন, চার লাইনের বেশি তো খুব কম এবং অধিকাংশই দুই লাইন।
এবং এটা প্রত্যেক ঘরে ঘরে আমরা পৌঁছে দিতে চাই।
স্কুলে বাচ্চা আনতে গিয়েছেন সাথে নিয়ে যান। কী করেন? ব্যাগ থেকে বের করেন। বের করে একটু ওল্টাতে থাকেন। এক হচ্ছে, পড়াও হলো। দ্বিতীয় হচ্ছে, যে দেখবে তারও কৌতূহল হলো যে, আচ্ছা এটা কী! এবং দেখা যাবে যে, আচ্ছা দেখি তো আপা এটা কী জিনিস, ভাই কী জিনিস এটা।
আপনি বলেন যে, ঠিকাছে, আপনার যদি খুব পছন্দ হয় দেখেন। আপনি রেখে দিতে পারেন। আমি এত টাকা দিয়ে কিনেছি। আপনি টাকাটা দিয়ে দিলেই হয়, আমি আবার কিনে নেব। কোনো অসুবিধা নাই।
অর্থাৎ আমাদের কাজ হবে যে এটাকে ছড়িয়ে দেয়া।
আমার মনে হয় যে, এই ভাষার মাসেই আমরা যেন প্রত্যেকে ১০ কপি বিতরণ করি। এই বিতরণটাকে আমরা পরিপূর্ণ করতে চাই। এবং তাহলেই অনেক হাতে এটা চলে যাবে।
এরপরে এটা নিজের গতিতে নিজে চলবে। কাউকে বলতে হবে না। বললেও চলবে, না বললেও চলবে। কেন? যখন একটা কিছু গতি পেয়ে যায়, তখন সেটাকে আটকাতে কেউ পারে না। কিন্তু প্রথম গতিটা আনতে একটু ঠেলাধাক্কা দিতে হয়। তারপরে সেটা নিজের গতিতে তখন চলতে থাকে।
যেরকম আমরা যখন মর্মবাণী প্রকাশ করলাম ২০১৪ তে প্রথম, অনেকে বলেছেন যে–এটা কে কিনবে, কে পড়বে?
আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি। মানে এমন এমন মানুষ মর্মবাণী নিয়ে লিখিতভাবে আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন যারা আরবি ভাষায় এক্সপার্ট।
কেন? কারণ সময়ের প্রয়োজন ছিল। এবং সময়ের প্রয়োজন পূরণে বেরিয়েছে বলেই আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি পাঁচ বছরে মর্মবাণী ইটস মোর দেন ফোর লাখ!
তার মানেটা কী? যখন সময় হয় কিছুর, সেই সময়ে যখন কাজটা করা হয় সেটা এই গতি পায়, গতি লাভ করে।
এই সময়ের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হচ্ছে প্রাকটিকেল গাইডলাইন।
যে একজন মানুষ আসলে চায়। সে বুঝতে পারছে না। সুখী জীবনের প্রক্রিয়াটা কী হবে, তার সামনে একেবারে সহজসরল ভাষায় এটি তুলে ধরা।
এটি যেহেতু সময়ের প্রয়োজনে বের হয়েছে। ইনশাল্লাহ! এটিও গতি পাবে। কোয়ান্টাম মেথড যেরকম বাংলা ভাষায় সবচেয়ে বেশি বিক্রিত নন ফিকশন এবং এটা পড়া, চর্চা করা, অনুশীলন করা একটু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। বুঝতে হয়, পড়তে হয়, অনুশীলন করতে হয়। এটিও এরকম।
কোয়ান্টাম মেথডের ফলিত রূপ হচ্ছে শুদ্ধাচার। কোয়ান্টাম মেথড এপ্লাই করলে একজন মানুষের জীবন যে-রকম হতে পারে, যেরকম বিশুদ্ধ হতে পারে, যে-রকম সুন্দর হতে পারে, চমৎকার হতে পারে।
সেটার সহজ ফলিত রূপ মানে একেবারে পাবলিক রূপ সাধারণ রূপ হচ্ছে এই শুদ্ধাচার।
তো যার ফলে এখন কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। এবং প্রয়োজন মানুষ অনুভব করছে।
সেজন্যে ইনশাল্লাহ একটা সময় আসবে, ঘরে ঘরে এটা গাইড বই হয়ে যাবে যদি আমরা এই প্রাথমিক ধাক্কাটা ঠিকভাবে দেই।
[সজ্ঞা জালালি, ১৭ জুলাই, ২০১৯]