স্ত্রী যদি ক্ষমা না করে তাহলে স্বামী বেহেশতে যেতে পারবে না। আমি জানতে চাই, স্বামী না ক্ষমা করলে কি স্ত্রী বেহেশতে যেতে পারবে?
আচ্ছা! আপনার স্ত্রীকে বেহেশতে যাওয়া থেকে বন্ধ করছেন কেন! যা-কিছু হোক আপনার স্ত্রী তো।
একজন স্ত্রী আবেগপ্রবণ হয়ে যেতে পারেন। কিন্তু একজন স্বামীও যদি আবেগপ্রবণ হয়ে যান, তাহলে তো তিনি স্বামী হিসেবে ব্যর্থ। তো অতএব আপনি আবেগপ্রবণ হবেন না। এজন্যে তো আপনি স্বামী।
আপনি তাকে কী করেছেন? ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়ে বিয়ে করেছেন।
অতএব আপনার তার ওপরে বিরক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নাই। ওনার বিরক্ত হওয়ার সুযোগ আছে। কারণ উনি তো দায়িত্ব নেন নাই আপনার ভরণপোষণ করার।
উনি ভরণপোষণে আনস্যাটিসফাইডও থাকতে পারেন। উনি বিরক্ত হতে পারেন। কিন্তু আপনি কখনো বিরক্ত হবেন না।
আপনি খুব অনায়াসে হেসে বলতে পারেন যে, দেখ, তোমাকে ছাড়া তো আমি বেহেশতে যাব না। অতএব তুমি যতই রাগ করো, আমি তোমাকে বেহেশতের সার্টিফিকেট দিয়ে দিব যে না, তুমি খুব ভালো স্ত্রী ছিলে। এবং আমি তো খারাপ মানুষ, ঠিক আছে। এই সার্টিফিকেটের ওসিলায় যাতে আমি তোমার সাথে বেহেশতেও যেতে পারি।
অর্থাৎ জিনিসটাকে সবসময় সহজ করে নেবেন।
হাজবেন্ড ওয়াইফ রিলেশনশিপটা শুধু আইনগত বিষয় না। এটার সাথে মমতা জড়িত হওয়া উচিৎ। যত আপনি মমতাসম্পন্ন হবেন, তত আপনি ভালো করবেন।
আর সবসময় মনে রাখবেন যে, স্ত্রীর কিছু আবেগ থাকবে। সে আবেগের প্রকাশ তিনি আপনার ওপরই করবেন।
যদি আপনার ওপর করেন তাহলে আপনি বুঝবেন যে, আপনি ভাগ্যবান। আর যদি আপনার ওপর না করেন তাহলে আপনার বুঝতে হবে যে, উনি অন্য কারো ওপরে প্রকাশ করছেন। এবং সেটা আপনার জন্যে মোটেই সুখকর হবে না।
মানে তখন আপনার প্রতি তার টানটা কমতে থাকবে। অতএব সবসময় ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন সবকিছু।
রসুলুল্লাহর সময়ের এক ঘটনা। তখন মক্কা আর মদিনার সোসাইটি টোট্যালি ডিফারেন্ট ছিল। মক্কাতে মহিলাদের কোনো অধিকার ছিল না। কিন্তু মদিনাতে মহিলারা যথেষ্ট অধিকার ভোগ করত যখন রসুলুল্লাহ (স) নারীদের অধিকারকে সমুন্নত করলেন।
কিন্তু মক্কা থেকে যারা গিয়েছিলেন, ওনার সাহাবীরা এটাকে অপ্রয়োজনীয় মনে করতেন। তারা ওয়াইফকে পাত্তাই দিতেন না। এবং তার মধ্যে একজন ছিলেন হযরত ওমর (রা)।
ওমর (রা) একবার হলো যে, তার স্ত্রীর সাথে উনি কথা বলছেন। তার স্ত্রীও তার সাথে মানে খুব কথা বলছেন, পাল্টা।
তো উনি তো খেপে– হ্যাঁ, তুমি আমার স্ত্রী হয়ে আমার সাথে এইভাবে কথা বলছ!
বলে যে, আমি বলছি।
কিন্তু আপনার মেয়ে যে রসুলুল্লাহর (স) সাথে ঝগড়া করেন। আল্লাহর রসুলতো কিছু বলেন না।
কি? আমার মেয়ে রসুলুল্লাহর (স) সাথে ঝগড়া করে!
উনি ছুটলেন রসুলুল্লাহর (স) বাসায়।
ওখানে গিয়ে তো উনি বললেন যে, হে আল্লাহর রসুল! আমার মেয়ে নাকি আপনার সাথে বেয়াদবি করে?
তো বাবার ঐরকম উগ্রমূর্তি দেখে হাফসা (রা) নবীজীর পেছনে গিয়ে দাঁড়ালেন।
এবং রসুলুল্লাহ (স) হেসে বললেন যে, ওমর এটা তো আমাদের স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপার। এটার মধ্যে তুমি কেন নাক গলাতে যাচ্ছ?
হযরত ওমর আর কী করবেন? চলে আসলেন।
এখন আপনাকে কী করতে হবে? এরকম হতে হবে। দেন ইউ আর এ হাজবেন্ড।
হাজবেন্ড হিসেবে আল্লাহর রসুল হচ্ছেন আদর্শ যে একজন হাজবেন্ডের কতটা সহনশীল হওয়া উচিৎ।
সবক্ষেত্রেই আল্লাহর রসুল হচ্ছেন আমাদের আদর্শ। তিনি যে-রকম সবকিছুকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছেন সে-রকম হতে হবে।
স্ত্রী যদি বলে যে, না, তোমার বেহেশতের সার্টিফিকেট আমি আটকে রাখব।
বলবেন যে, ঠিক আছে, আমি তোমাকে ধরে থাকব। আমার সার্টিফিকেট যদি আটকা থাকে, তুমি যাবে কোথায়? আল্লাহ যদি জিজ্ঞেস করে বলবেন যে, আমাদের এটা স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপার!
আসলে জীবনটাকে কী করতে হয়? অনেক সময় হালকাভাবে নিতে হয়। সবকিছু সিরিয়াসলি নিলে হয় না।
যিনি বলছেন যে বেহেশতের সার্টিফিকেট আটকে রাখবেন, তিনিই দেখা যাবে যে আপনাকে সার্টিফিকেট দেয়ার জন্যে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করছেন।
এবং এই আবেগটুকু আছে বলেই নারীরা নারী এবং নারী-পুরুষের সংসার টিকে আছে। আসলে নারীও যদি পুরুষের মতন এরকম যুক্তিবাদী হতো, আমার মনে হয় যে নাইনটি পার্সেন্ট সংসারও টিকত না, নাইনটি পার্সেন্ট সংসারই থাকত না। সব লিভ টুগেদার হতো আমেরিকা ইউরোপের মতো।
সংসার যে টিকে আছে, সংসার যে থাকছে, পরিবার যে থাকছে এটার পেছনে এই আবেগের ভূমিকাটা সবচেয়ে বেশি। নারীর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।
এজন্যে আমরা নারীদেরকে আবারও অভিনন্দন জানাই যে, তারা রাগের মাথায় যা বলেন, কখনো তারা এটা মিন করেন না। এবং কোনো পুরুষের এটা মনে করা উচিৎ না যে, শি ইজ মিনিং ইট।
[সজ্ঞা জালালি, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০]