1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:০১ অপরাহ্ন

এক নারীর পর্বতারোহী হয়ে ওঠার গল্প

  • সময় মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ৫০৭ বার দেখা হয়েছে
আমার নাম জয়নব বিনতে হোসেন। আমি গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত রয়েছি। শিক্ষকতার পাশাপাশি আমি পর্বতারোহণের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছি। ২০১৬ সাল থেকে আমার এই পর্বতারোহণ শুরু হয়েছে।

পাহাড় থেকে পাহাড়ে ছুটে বেড়াব- মনছবি তৈরি করেছিলাম!

আমি যখন ছোট ছিলাম আমার তখন রিউমেটিক ফিভার ধরা পড়ে, বাতজ্বর। এবং সেটার জন্য আমি খুব বেশি শারীরিক পরিশ্রম করতে পারতাম না। একটু হাঁটলেই আমার পায়ে ব্যথা হতো এবং নাক দিয়ে রক্ত পড়ত প্রায়শই।

যদি একটু খেলতাম বন্ধুদের সঙ্গে বা হাঁটাহাঁটি করতাম তাহলে আমার নাক দিয়ে সে রাতে রক্ত পড়ত। সে কারণে আমার কখনো হাঁটাচলা বা খেলাধুলা, স্পোর্টস এ ধরনের কোনোকিছুর সঙ্গে যুক্ত হওয়া হয়ে ওঠে নি।

এবং পরবর্তীতে যখন আমার রোগটা চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে সেরে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই অনভ্যস্ততার কারণে হাঁটতে অসুবিধা হতো।

এবং আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি মনে আছে যে, আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলাভবনে যেতে টিএসসি থেকে বা শাহবাগ থেকে আমাকে রিকশায় যেতে হতো বা নীলক্ষেত থেকে রিকশায় যেতে হতো।

কারণ হাঁটার অভ্যাস একেবারেই ছিল না। তারপর থেকে আমি নিজের সঙ্গে নিজে প্রতিজ্ঞা করেছি যে আমি আমার এই শারীরিক সীমাবদ্ধতাটুকু কাটিয়ে উঠবো এবং ফিট হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করব।

ফিটনেস এবং পর্বতারোহণ

আসলে ফিটনেস বলতে তো আমরা জানি যে, চারটা বিষয়ের সমন্বয় ফিজিক্যাল, মেন্টাল, সোশ্যাল এন্ড স্পিরিচুয়াল। এবং পর্বতারোহণটাকে আমার কাছে ফিটনেসের একটা ভালো জায়গা মনে হয়। কারণ এটি হচ্ছে পৃথিবীর সবচাইতে ঝুঁকিপূর্ণ স্পোর্টস। পৃথিবীতে অন্য যেসব স্পোর্টস আছে তাদের মধ্যে এটি সবচাইতে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে এটাকে বিবেচনা করা হয়। কারণ এখানে মৃত্যুর হার সবচাইতে বেশি।

শুরুটা হলো যেভাবে…

আমি ২০১৫ সালে যখন প্রথম বান্দরবানের লামায় আমাদের কোয়ান্টামমে যাই সেখানে আমার প্রথম আরোগ্যশালায় যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। এরপরে আমি বাচ্চাদের স্কুল ভ্যালিতে গিয়েছিলাম সেখানে ভলান্টিয়ার হিসাবে কিছু কাজ করতে।

তো আমার কাছে মনে হয়েছে যে, পাহাড়ে উঠতে খুবই কষ্ট হয়, শারীরিক পরিশ্রম হয় কিন্তু পৌঁছানোর জন্যে শারীরিক সক্ষমতাটা আসলে জরুরি। সেখান থেকে ফিরে আসার সময় আমি আরোগ্যশালায় একটি মেডিটেশন করেছিলাম।

তখন একটা মনছবি দেখেছিলাম যে, আজকে হয়তো আমি পাহাড়ে ঠিকভাবে উঠতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, অনেক কষ্ট করে উঠেছি কিন্তু একটা সময় আসবে যখন কোয়ান্টাম অনেক বড় হবে, অনেক রকম সুযোগ-সুবিধা থাকবে। কিন্তু আমি তখন পাহাড় থেকে পাহাড়ে ছুটে বেড়াব। এরকম একটা মনছবি তৈরি করেছিলাম তখন। সেটা ছিল ২০১৫ সালে।

অবসরে আমি পাহাড়ে যেতে শুরু করি…

তো ২০১৬ সালে যখন আমার মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হয়েছে, পড়াশোনা শেষ। তখন আমার কিছুটা অবসর সময় ছিল। সে সময়টা আমি পাহাড়ে যেতে শুরু করি।

প্রথমে বাংলাদেশের বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, পার্বত্য অঞ্চলের কয়েকটা পাহাড়ে যাই, ঝর্ণায় যাই। এরপরে ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে আমি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, সান্দাকফু-ফালুট এই জায়গাগুলোতে যাই।

এবং সান্দাকফু-ফালুট থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এভারেস্ট খুব ভালভাবে দেখা যায় সেখান থেকে। তো প্রথম হিমালয়ের কাছে পৌঁছানো। যদিও আমরা গাড়িতে করে গিয়েছিলাম কিন্তু ফিরে আসার সময় একদিন আমরা একটা ট্রেকিং করেছিলাম এবং সে ট্রেকিংটি করতে গিয়ে আমার খুব ভালো লেগেছে যে, হিমালয়ের আসলে যে একটা আলাদা স্পন্দন আছে, একটা আলাদা অনুরণন আছে সেটি আমি সেখানে অনুভব করতে পেরেছিলাম।

হিমালয়কে তো আসলে এভাবেই উপলব্ধি করতে হবে…

একেবারে মেঘের মধ্য দিয়ে হাঁটা, প্রকৃতির সঙ্গে একেবারে মিশে যাওয়া। আমার মনে হয়েছে যে হিমালয় তো আসলে এভাবেই দেখার বিষয়, হিমালয়কে এভাবেই উপলব্ধি করতে হবে।

তো তখন থেকে আমি ঠিক করেছিলাম যে, আমি হিমালয়ে আবার আসব, পর্বতারোহণের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করব।

তারপরে ২০১৭ সালে আমি ভারতের হিমাচলে হামতা পাস ট্রেকিং করি। ওটা চারদিনের একটা ট্রেক ছিল। একদম পূর্ণাঙ্গ ট্রেকিং, ক্যাম্পিং বলতে যা বোঝায় হিমালয়ের বুকে, তখন হিমালয়ের বিভিন্ন রকম সৌন্দর্য যতক্ষণ আমরা নিচে থাকি তখন চারপাশটা সবুজ, বিয়াস নদী।

সেই সৌন্দর্যটা আমাকে যেমন মুগ্ধ করছিল আবার যত ওপরের দিকে উঠতে থাকি গাছপালা কমতে থাকে। তখন প্রকৃতি রুক্ষ হতে থাকে। সেই রুক্ষ পাহাড়ের মধ্যে গ্লেসিয়ারের মধ্যে, বরফের মধ্যে হেঁটে যেতে সেই অনুভূতিগুলো আমাকে একদম আকৃষ্ট করছিল।

আমরা যখন বিকেলে ফিরতাম তাবুতে থাকতাম, নিজেদের খাবার নিজেরা তৈরি করতাম।

তো এই ঘটনাগুলো খুব ভালো লাগছিল। তারপর আমরা শেষ দিন চন্দ্রাতাল লেকে গিয়েছিলাম। তো পুরো অভিযানটি, পুরো ট্রেকিংটি আমাকে খুব আলোড়িত করেছিল।

একজন পর্বতারোহীর মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে উচ্চতা…

একজন পর্বতারোহীর মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে উচ্চতা। কারণ অতি উচ্চতায় সেখানে হচ্ছে হাই অ্যালটিটিউডে সেখানে অক্সিজেনের খুব অভাব থাকে। অক্সিজেনের স্বল্পতার কারণে নানা রকম শারীরিক সমস্যা হয়। যেমন হচ্ছে, অতি উচ্চতায় খাওয়ার রুচি থাকে না, ঘুমানো যায় না।

আবার যাদের একটু বেশি প্রবলেম হয়, তাদের মাথা ব্যথা হয়, বমি হয়। এর চাইতে বেশি সিভিয়ার প্রবলেম হলে হ্যাপো, হ্যাকো এই সমস্যাগুলো হতে পারে।

যেমন ফুসফুসে পানি জমে যেতে পারে, ব্রেইন স্ট্রোক হতে পারে। অনেক পর্বতারোহী এতে মারাও যান বা ঠান্ডায় আঙ্গুলগুলো অকেজো হয়ে যায়। তখন সেটাকে ফ্রস্টবাইট বলে। তখন আঙ্গুল কেটে ফেলতে হয়, হাত কেটে ফেলতে হয়। এগুলো হচ্ছে শারীরিক সমস্যা।

এছাড়া আরও যে ন্যাচারাল প্রবলেমগুলো আছে সেটি হচ্ছে রক ফল হয়। তারপর অ্যাভাল্যাঞ্চ হয়, তুষারপাত হয়। সেই তুষারপাত প্রচণ্ড তুষারপাতে অনেক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অ্যাভাল্যাঞ্চে যে তুষারের ঝড় হয় সেখানে তখন মানুষ মারা যেতে পারে। এরকম নানা রকম অসুবিধা আছে।

পর্বতারোহণের প্রশিক্ষণ

২০১৯ সালে আমি প্রথমে জানুয়ারি মাসে একটা রক ক্লাইম্বিং কোর্স করি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলায় শুশুনিয়া পাহাড়ে। সেখানে তিনদিনের একটা রক ক্লাইম্বিং কোর্স করি। এবং সেই বছরেই এপ্রিল মাসে আমি নেপালের লাং টেং-এ অভিযানে যাই, লাং টেং-এর ইয়ালা পিক অভিযানে যাই। এবং সেখানে একটা গ্লেসিয়ারে প্র্যাকটিস করি আমার ট্রেইনারের সঙ্গে।

এবং তারপরে সেখান থেকে ফিরে ২০১৯-এ মে-জুন মাসে আমি ভারতের উত্তরাখণ্ডের নেহরু ইন্সটিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং সেখান থেকে এক মাসের একটি বেসিক মাউন্টেনিয়ারিং কোর্স নেই।

হিমালয়ের ফার্চামো শৃঙ্গ

আমার আসলে মূল লক্ষ্য ছিল হিমালয়ের অন্য একটি শৃঙ্গ ফার্চামো পিকে যাওয়ার। সেটার উচ্চতা ৬১৮৩ মিটার। সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু কোভিডের জন্য দুবছর আমরা কোন অভিযানে যেতে পারিনি।

তো আমি ২০২১ সালে আমি সেই অভিযানটির ব্যাপারে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। অক্টোবরের ১১ তারিখে আমি ঢাকা থেকে কাঠমাণ্ডু রওনা করি ফ্লাইটে। প্রথম ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু যে ফ্লাইটটি চালু হয়ে ছিল সেই প্রথম ফ্লাইটেই আমি যাই।

পরদিন ১২ অক্টোবর কাঠমান্ডু থেকে লুকলায় যাই ফ্লাইটে এবং লুকলা থেকে আমি ট্রেকিংটা শুরু করি। প্রথমদিন ট্রেক করে মাংচুতে যাই। সেখানে রাতে থাকি। তার পরদিন নামচে বাজার, তারপর দিন থামো, থামে, থ্যাঙ্গবো এভাবে ধিরে ধিরে একেকটা জায়গায় যেতে থাকি, উচ্চতার সঙ্গে নিজেকে মানাতে থাকি, উচ্চতায় যেতে থাকি।

উচ্চতায় হাঁটার জন্যে ফিটনেস অবশ্যই দরকার!

একটা হচ্ছে শারীরিক ফিটনেসের প্রস্তুতি। উচ্চতায় যখন আমি হাঁটব, একটা দীর্ঘ পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে যাব, সেটার জন্য ফিটনেস অবশ্যই দরকার।

আর দু-নম্বর হচ্ছে যে, আমি একাই গিয়েছিলাম। সেটার জন্য আমাকে নেপালি গাইড শেরপাদের সহায়তা নিতে হয়েছিল। এবং তাদের সঙ্গে আমি ঢাকা থেকেই যোগাযোগ করেছিলাম। এবং তারা আমাকে কাঠমান্ডু থেকেই রিসিভ করেছিল। এবং আমার সঙ্গে পুরোটা ট্রেকিং এর সময়টাতেই তারা ছিল।

ফার্চামো অভিযানের জন্যে তিনজন ক্লাইম্বার ছিলেন, তিনজন গাইড ছিলেন এবং একজন পোর্টার ছিলেন যিনি মালপত্রগুলো বহন করেন। কারণ আমরা যে দীর্ঘসময় যাচ্ছি আমাদের ক্লাইম্বিং-এর অনেক ইকুইপমেন্টসের দরকার হয়।

যখন আমরা মাউন্টেনে ক্লাইম্ব করব তখন অনেক রকম ইকুইপমেন্টস সেগুলো অনেক ভারী থাকে। তারপর আমাদের যতদিন আমরা তাঁবুতে থাকব সেই তাঁবু বহন করা, তারপরে খাবারগুলো বহন করা, তো সেগুলোর অনেক ভার থাকে সেজন্যে আমাদের একজন পোর্টার নিতে হয়। আমরা সেভাবেই নিয়েছিলাম।

তারপর পারমিশনের ব্যাপার থাকে। নেপালের প্রায় ছয় হাজার মিটার উচ্চতার পর্বতগুলোর জন্যে একটা পিক ফিস গর্ভনমেন্টকে দিতে হয় এবং অনুমতি নিতে হয়। সেটা আমরা করেছিলাম।

অর্থের সংস্থান কীভাবে হয়?

পর্বতারোহণ আসলে অত্যন্ত ব্যয়বহুল একটা কাজ। ঝুঁকিও যেমন আছে, ব্যয়টা তার চেয়ে বেশি।

এবং সেজন্যে আসলে পর্বত আরোহী সাধারণত নিজের খরচ নিজে বহন করার সক্ষমতাটা অধিকাংশ সময়ই থাকে না। সেক্ষেত্রে তখন পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন হয়, স্পন্সরশীপের দরকার হয়। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি এগিয়ে আসেন তাহলে সেক্ষেত্রে তার জন্য খুব সহজ হয়ে যায়।

আবহাওয়ার বিরূপতা

যখন আমরা থ্যাঙ্গবোতো যাই তখন ওয়েদার খারাপ হতে শুরু করে কিন্তু আমরা ওয়েদার ফোরকাস্ট চেক করেছিলাম।২০-২১ তারিখে ভালো হবার কথা ছিল।

এরপরে আমরা থ্যাঙ্গবো থেকে আপার নোলে ক্যাম্পে যাই এবং সেখান থেকে আমরা তাঁবুতে থাকা শুরু করি।

কিন্তু ক্যাম্পে যাওয়ার পর থেকে প্রচন্ড স্নো-ফল শুরু হয়ে যায় এবং সেই স্নো-ফল টানা ৩৬ ঘণ্টা বিরামহীনভাবে চলছিল, এক মুহূর্তের জন্যেও থামে নি। ফলে আমাদের তাঁবু প্রায় দেবে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়।

৩৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর আমাদের খাবার, রসদ প্রায় শেষ…

এবং ফার্চামো অভিযানে আমরাই শুধু একটা গ্রুপ ছিলাম আর দূরে আরেকটা গ্রুপ ছিল তারাও ফার্চামো অভিযানের জন্যে এসেছিল। কিন্তু তারা আমাদের চাইতে দূরে অন্য একটা জায়গায় অবস্থান করছিল। ফলে একদমই মুভ করা সম্ভব ছিল না। আমরা অপেক্ষা করছিলাম।

এভাবে ৩৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর যখন আমাদের খাবার, রসদ প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা, ওখানে স্টে করাও আর পসিবল না। নিচে নেমে আবার থ্যাঙ্গবোতে কয়েক দিন থাকলাম। ওরা আরো নিচে নেমে গিয়ে নেটওয়ার্কে চলে গিয়েছিল। আমি থ্যাঙ্গবোতে একাই থাকছিলাম।

এরপরে যখন পাঁচদিন পর ওয়েদারটা কিছুটা ভালো হয়েছিল ওরা এসেছিল। আমরা আবার সেই একই জায়গায় আপার নোলে, আপার নোলে থেকে একদম তাসি পুকে গিয়েছিলাম যেটা হচ্ছে ফার্চামোর বেস ক্যাম্প।

থ্যাঙ্গবোতে একা পাঁচদিন

সে সময়টায় আমাকে সবচেয়ে প্রেরণা দিয়েছে মেডিটেশন। আমি তখন মেডিটেশন করতাম বিশেষ করে নিজেক যেন ঐ সময়টাতেও সক্ষম থাকতে পারি।

ফিটনেস এর জন্যে আমি নিজে চর্চা করে যাচ্ছিলাম ঐ জায়গাটাতেই। তারপর যখন আমরা তাসি পুকে যাই যেটি ছিল ফার্চামো পিকের বেস ক্যাম্প সেটির উচ্চতা ৫৮০০ মিটার আর চুড়া থেকে জাস্ট ৪০০ মিটারেরও কম উচ্চতা আমাদেরকে ক্লাইম্ব করতে হবে। মানে খুব কাছেই বলা যায়।

কিন্তু সেখানে পৌছানোর আবার প্রচন্ড উইন্ডি শুরু হলো, আবহাওয়া আবার প্রচন্ড খারাপ হলো এবং তুমুল বাতাস। সেই বাতাসে রাত তিনটা বাজে আমাদের তাবু একদম উড়িয়ে নিয়ে চলে গেল। তখন আর যাওয়ার মতো অবস্থাও নেই।

তারপরেও হচ্ছে আমরা আবার ট্রেক করলাম। আরো ১০০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় উঠলাম কিন্তু তারপরে যেখানে আমাদেরকে রোপ ফিক্সড করতে হবে, শেরপারা রোপ ফিক্সড করবে, তাহলে আমরা ক্লাইম্ব করতে আমাদের জন্যে সুবিধা হয়।

কিন্তু এত স্নো এবং যেহেতু ফার্চামো পিকটি একটু শ্যাডো জায়গার মধ্যে ছিল, সূর্যের আলোটা ডিরেক্ট পৌঁছাতে পারতো না।

ফলে একটানা স্নো ফল হয়েছিল চার পাঁচ দিন আর স্নোগুলো তখনও খুব সফট পাউডারের মতো ছিল। এবং সেই পাউডারের মতো স্নোগুলি খুবই বিপদজনক। যখন সেগুলোতে সূর্যের আলো লাগে বা তাপটা পৌঁছায় তখন সেগুলো উত্তপ্ত হয়ে যায় এবং সেখান থেকে তখন অ্যাভাল্যাঞ্চ ক্রিয়েট হয়।

ফলে আমাদের শেরপারা যখন এগুচ্ছিল তখন আসলে পাশ থেকে অ্যাভাল্যাঞ্চ হচ্ছিল এবং তারা যেই স্নোতেই পা দিচ্ছিল সেখানেই আসলে পা দেবে যাচ্ছিল। মানে কোনোভাবেই আর সামনের দিকে অ্যাংকর করার কোনো কিছুর সুযোগ ছিল না।

ওপরে ওঠা যেমন কঠিন নিচে নামাটা তার চাইতেও ঝুঁকিপূর্ণ!

তো ফিরে আসার সময় আমার একটু খারাপ লাগছিল। তখন শেরপাদের সঙ্গে কথা বলছিলাম। তো ওরা আমাকে বলল যে, ঠিক আছে তোমাকে অন্য একটা অপশন দেই। এখানে লবুচে পিকে তুমি যেতে পার যেটা আসলে ক্লাইম্বিং কিছুটা টেকনিক্যাল ক্লাইম্বিং আছে, যেখানে ওয়েদার আপাতত ভালো আছে। তো সেটিতে তুমি ট্রাই করে দেখতে পার।

তারপর আবার দ্বিতীয়বারের অভিযানের প্রস্তুতি নেয়া সম্পন্ন করে থামু থেকে আমরা শুরু করি আবার অভিযান। এবং পরদিন থামু থেকে প্যাংবোচে, প্যাংবোচে থেকে লবুচে বেস ক্যাম্প এবং বেস ক্যাম্প থেকে হাই ক্যাম্প হয়ে চূড়ান্ত সামিট পুশ দেই।

তখন ঘড়ির কাঁটায় রাত সাড়ে চারটা বাজে। মধ্যরাতে এই সময়টায় সামিটের জন্যে রওনা হয় কেননা যেন সামিটটা ভোর বেলায় শেষ করে আমরা দিনের আলোতে আবার ফিরে আসতে পারি তাবুতে। ওপরে উঠা যেমন কঠিন নিচে নামাটা তার চাইতেও ঝুঁকিপূর্ণ।

প্রথমে আমার যে ধাপটা ছিল সেটা হচ্ছে একদম রকের মধ্যে যখন রাত সাড়ে চারটা বাজে আমরা সামিট পুশের জন্য রওনা হয়েছি কিন্তু তখন একদম ঘোর অন্ধকার।

তো প্রথমে আমাদেরকে একটা রকি পার্ট ক্লাইম্ব করতে হয়েছিল জুমারিং করে এবং সবচেয়ে কঠিন পার্টটা ছিল যে তখন আমরা পায়ে ক্র্যাম্পুন পরেছিলাম। তারপর একটা সময় ভোর হলো। নব প্রভাতে শিখর চুড়ায় সেই সৌন্দর্যটুকু আবার আমাদের ওপর আছড়ে পড়ল সেই সাদা বরফের উপর। যখন সূর্যের প্রথম আলোটা আছড়ে পড়ল তার রক্তিম আভা, আসলে সৌন্দর্য নিয়ে এসেছিল। সেদিন আমরা একেবারে নেমে লবুচে বেস ক্যাম্পে চলে আসি এবং সেই রাতটা আমরা লবুচে বেস ক্যাম্পেই কাটাই।

পরদিন লবুচে বেস ক্যাম্প থেকে আমরা গোরাক শেপে যাই। কারণ হচ্ছে শেরপারা আমাদের জন্য ৫ দিন বরাদ্দ রেখেছিল যে, লবুচে সামিট করার জন্যে। কিন্তু আমাদের আসলে ৩ দিনেই সেটা সম্পন্ন হয়ে যায়। সে কারণে দুই দিন এক্সট্রা ছিল হাতে।

তো এভারেস্টের এত কাছে এসেছি সে কারণে এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে ঘুরতে গিয়েছিলাম। গোরাক শেপে আমরা গিয়ে সেদিন রাতে অবস্থান করি, পরদিন এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে যাই। সেটা ৫৩৬৪ মিটার এবং সেখান থেকে এভারেস্টকে খুব কাছ থেকে দেখা।

এবং তারও একটা পাশে হচ্ছে কালাপাত্থার নামে আরেকটা হিল। সেটার উচ্চতা ৫৫৫০ মিটার। সেখানেও ক্লাইম্ব করেছিলাম। এই দুটো ক্লাইম্ব শেষ করে সেদিন রাতে গোরাক শেপে অবস্থান করি।

ফেরত যাত্রা…

পরদিন আমরা ফেরত যাত্রা শুরু করি। এবং ফেরত যাত্রা সেদিন আমরা প্যাংবোচে, তারপর নামচে এবং এর পরদিন লুকলায় এসে পৌছাই। এবং পরদিন লুকলা থেকে ফ্লাইটে কাঠমাণ্ডু পৌঁছাই।

মেডিটেশনের সাথে পরিচয়

আমি ২০১৪ সালে জানুয়ারি মাসে ৩৭০ ব্যাচে কোয়ান্টাম মেথড কোর্স করি।

যখন কোর্স করি তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষ সবে শেষ করেছি। তখনকার আমি ছিলাম অনেক ভীতু, আত্মবিশ্বাস একেবারেই ছিল না, জীবনের লক্ষ্য ছিল না, কোনো কাজের একাগ্রতা ছিল না এবং অনেকটা রি-এক্টিভ ছিলাম।

কিন্তু কোর্স করার পরে আমার জীবনের লক্ষ্য আমি স্থির করতে পেরেছিলাম। তার আগ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সিজিপিএ হিসেবে বলতে গেলে প্রায় ১০০ জনেরও পরে রেজাল্ট ছিল।

কিন্তু কোয়ান্টাম মেথড কোর্স করার পরে আমার জীবনের একটা লক্ষ্য স্থির হয়। এবং ক্লাসে প্রথম হতে হবে জীবনেও প্রথম হতে হবে এই ধারণাটি আমি কোর্স থেকে অর্জন করি। এবং সেভাবেই আসলে পড়াশোনা শুরু করি।

কর্মজীবন…

নিয়মিত মেডিটেশন করার ফলে আমার রেজাল্টও খুব ভালো হলো চূড়ান্তভাবে।

আমি মনছবি দেখেছিলাম যে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে গোল্ড মেডেল নিচ্ছি বা ডিনস এ্যাওয়ার্ড নিচ্ছি। দেখা গেল যে, সেগুলোই বাস্তবে ঘটেছে। এরপরে আসলে জীবনে যত প্রতিকূল মুহূর্তই থাকুক না কেন নিজেকে সবসময় মেডিটেশনের সঙ্গে যুক্ত রাখার চেষ্টা করেছি। কেননা মেডিটেশন আমাদেরকে সবসময় যে-কোনো পরিস্থিতিতে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com