অন্তর্দৃষ্টিটা কী? ধরেন, আপনি প্রতিনিয়ত প্রত্যেকদিন অনেক পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন, অনেক মানুষের সম্মুখীন হচ্ছেন, অনেক মানুষ অনেক কথা আপনাকে বলছে। তাদের এই কথাটাকে আপনি ‘তথ্য’ হিসেবে নিতে পারেন, যে সে কিছু ‘ইনফরমেশন’, কিছু ‘তথ্য’ আপনাকে দিচ্ছে।
তথ্যদাতা কী তথ্য দিচ্ছে, কেন দিচ্ছে, তার ইন্টারেস্টটা কী এই ইন্টারেস্টটাকে আমরা খেয়াল করি না। আমরা অধিকাংশ মানুষ এইখানে ভুল করি। এবং যিনি খেয়াল করবেন না যে তথ্যদাতার উদ্দেশ্যটা কী ছিল তিনি ভুল করবেন।
তার ইন্টারেস্টটা বোঝার জন্যে অন্তর্দৃষ্টি দরকার যে, এই কথার পেছনের অন্তর্নিহিত কথাটা কী? অর্থাৎ তার পারপাসটা কী?
এমন হতে পারে- তার কোনো পারপাস আছে, আবার না-ও থাকতে পারে।
আবার অনেকে অনেক কিছু জানলে না বলা পর্যন্ত সে স্বস্তি পায় না। এটা তাকে কাউকে না কাউকে বলতে হবে।
এমন হতে পারে সে কথা বলে বেড়ায়, কথা পেলেই আর পেটে রাখতে পারে না। অবশ্য আমি জানি না কথা পেটে রাখার এই বাক্যটা এলো কোত্থেকে। কথা তো পেটে থাকে না, পেটে খাবার থাকে। কিন্তু বলা হয় যে, এর পেটে কথা থাকে না। তো হতে পারে…
আবার হতে পারে সে কারো দ্বারা প্রেরিত হয়েছে এই তথ্যটা আপনাকে দেয়ার জন্যে। হতে পারে যিনি প্রেরণ করেছেন তিনি আপনার বন্ধু, আপনাকে সতর্ক করতে চাচ্ছেন।
হতে পারে তিনি আপনার প্রতিপক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী, আপনাকে কনফিউজড করতে চাচ্ছেন।
যে-রকম যুদ্ধক্ষেত্রে। যুদ্ধক্ষেত্রে যে শত্রুকে যত কনফিউজড করতে পারে সে তত সফলভাবে যুদ্ধ জয় করতে পারে।
শত্রু যদি বুঝেই যায় যে আপনি কোথায় আক্রমণ করতে যাচ্ছেন, সেখানে তো সে পুরো প্রস্তুতি নিয়ে বসে থাকবে।
কিন্তু যদি না বুঝতে পারে, যদি মনে করে যে ঐখানে আক্রমণ করতে যাচ্ছেন, ঐখানে পুরো প্রস্তুতি থাকবে, কিন্তু আপনি তো ওখানে যাচ্ছেন না। আপনি যাচ্ছেন সবচেয়ে দুর্বল জায়গাতে আক্রমণ করবেন।
জীবনযুদ্ধও তা-ই।
তো তার উদ্দেশ্যটা বুঝতে পারার নাম হচ্ছে অন্তর্দৃষ্টি যে, এটার পেছনের কথাটা কী; পেছনের কারণটা কী।
তারপরে দূরদৃষ্টি। দূরদৃষ্টি কী? আপনি যে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন এই সিদ্ধান্তের ফলাফল আজকে কী হবে, আগামীকাল কী হবে, পাঁচ বছর পরে কী হবে, ৫০ বছর পরে কী হবে? এটা হচ্ছে দূরদৃষ্টি।
জ্ঞানটা হচ্ছে তথ্য, অন্তর্দৃষ্টি হচ্ছে তথ্যের পেছনের তথ্য, আর দূরদৃষ্টি হচ্ছে এটার ফলাফল কী হবে। এটার রেজাল্ট আপনি কী ভোগ করবেন- আজকে, আগামীকাল, পাঁচ বছর, ৫০ বছর পরে।
এবং এটা বুঝতে হবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাথে সাথে। এটা অনেক হিসাব করে বুঝলে হবে না।
এটা তখনই হবে যখন জ্ঞান, অন্তর্দৃষ্টি, দূরদৃষ্টি আপনার মধ্যে এই তিনটা জিনিসের সমন্বয় হবে।
এবং এই তিনটা জিনিসকে সমন্বিত করার জন্যেই ১০ পর্বের প্রজ্ঞা।
[প্রজ্ঞা জালালি, ০৭ আগস্ট, ২০১৯]