• প্রতিদিন তাকে জড়িয়ে ধরে বলুন, ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’।
• শিশুর উঁ অ্যাঁ শব্দ বা জড়িয়ে যাওয়া কথা মন দিয়ে শুনুন। বাধা দেবেন না।
• বাসার বাইরে থাকলে ফোন দিয়ে কথা বলুন।
• শিশুর সাথে ভালবাসা দিয়ে দিন শুরু করুন। এবং খুশিমনে রাতে ঘুমুতে যান।
• ছেলে-মেয়েতে বৈষম্য না করে সমান দৃষ্টিতে দেখুন। ছেলে আপনার হলে মেয়েও আপনার।
• জন্মের পরপরই শিশুর যত্নে মা-বাবা দুজনই অংশ নিন।
• শিশুর বয়স যখন দু’সপ্তাহ তখন থেকেই তাকে দিন ও রাতের পার্থক্য বোঝাতে শুরু করুন।
• শিশু জন্মের পর থেকে তিন বছর পর্যন্ত ৮৮-৯৮ শতাংশ শব্দ ব্যবহার করে যা শুনে শুনে শেখা। তাই শিশু বুঝুক বা না বুঝুক তার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন। যত বেশি কথা বলবেন তত বাড়বে তার শব্দভাণ্ডার এবং এই কথোপকথনে বাড়বে তার বুদ্ধিমত্তা ও বই পড়ার সামর্থ্য।
সৌলের হ্যানইয়াং ইউনিভার্সিটির ড. জিউন চোই এর নেতৃত্বে এক গবেষণায় দেখা গেছে, জন্মের পর প্রথম কয়েক মাসে শিশুরা যে ভাষা শোনে সেই ভাষাটা তাদের মস্তিষ্ক থেকে হারায় না।
• শিশুর সাথে হাসুন, ছড়া বলুন, গান গেয়ে শোনান। তাতে শিশু কণ্ঠস্বর শনাক্ত করতে শিখবে। পাশাপাশি শিশুর শ্রবণেন্দ্রিয়ের যোগাযোগ কৌশল উন্নত হবে।
২০০১ সালে এক পরীক্ষায় সাত থেকে নয় মাস বয়সী ৭৩টি শিশুকে টেলিফোনের ডায়াল বা টিভির শব্দের মতো হালকা শব্দ শোনানো হয়। পরে সেই শব্দের সঙ্গে কম্পিউটারনির্ভর আরো কয়েকটি শব্দ (এক হাজার হার্টজ পর্যন্ত) করা হয়।
গবেষকেরা দেখতে পান, শিশুরা ঐ হালকা শব্দ শুনতে পায় আবার পরে কয়েকটি শব্দের মধ্যে থেকে সেই শব্দ আলাদাভাবে টের পায়।
• শিশুকে তেল বা লোশন মালিশ করে দিন। হাত পায়ের ব্যায়াম করান। এতে তার স্পর্শের অনুভূতি সজাগ হবে।
• খেলনা দেয়া বা পছন্দের ড্রেস দেয়াই মা-বাবার দায়িত্ব নয়। তাকে গুণগত সময় দিন।
• যখন সে একটু বড় হবে তখন তার নিজের কাজগুলো করতে উৎসাহ দিন। যেমন, দাঁত মাজা, নিজের কাপড় নিজে পরা। অতিরিক্ত যত্ন নিতে গিয়ে তার সব কাজ নিজে করে দেয়া যাবে না। এতে করে সে পরনির্ভরশীল হয়ে উঠবে।
• শিশুকে কখনো ভয় দেখানো বা নিজেকে ভীতিকর চরিত্ররূপে উপস্থাপন করা উচিৎ নয়। অনেক সময় মায়েরা ‘ঐ যে বাবা আসছে তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও’ এমন কথা বলে খাওয়ান। বাবাকে নিয়ে এমন ইমেজ তৈরি করা থেকে বিরত থাকুন।
• বাইরে থেকে এসে নিজের রুমে না গিয়ে তার নাম ধরে ডাক দিন, কথা বলুন। এতে তার আত্মমর্যাদা বাড়বে, বন্ধন হবে দৃঢ়।
• শিশু কোথাও পড়ে গিয়ে আঘাত পেলে সে জায়গাকে পাল্টা আঘাত করতে বলবেন না। এতে সে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠবে।
• শারীরিক অবয়ব, খারাপ রেজাল্ট, দুষ্টুমিসহ কোনো ধরনের প্রসঙ্গ তুলে শিশুকে খোঁটা দেবেন না। তার সম্ভাবনার কথা বলে তাকে উৎসাহিত করে তুলুন। আপনার উৎসাহ তাকে সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।
• কোনোকিছু চাওয়ার সাথে সাথে তাকে তা দেয়ার অভ্যাস পরিহার করুন। অন্যায় আবদার পূরণ করা থেকে বিরত থাকুন।
• কাঁদলে কখনো ধমকাবেন না। মনে রাখুন, শিশু আপনার ভালবাসা যেমন বুঝতে পারে তেমনি বিরক্তিও বুঝতে পারে। এই বিরক্তি বুঝতে পারলে সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টি হতে পারে।
• প্রতিটি শিশুরই প্রতিভা আছে। আপনার সন্তানের প্রতিভা খুঁজে বের করুন এবং প্রতিভা বিকাশে ভূমিকা রাখুন।
• খেয়াল রাখুন, সন্তান যেন আপনার কাছে যে-কোনো কিছু বলতে সংকোচ না করে। সন্তান যদি কোনো গোপন কথা বলে সেটা যতই হাস্যকর বা অবান্তর হোক কাউকে শেয়ার করা থেকে বিরতথাকুন।
• কে বেশি ভালবাসে, বাবা নাকি মা?- এ ধরনের প্রশ্ন করে শিশুমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবেন না।
• আদর ও শাসনের সমন্বয়ে তাকে বিকশিত হবার সুযোগ দিন।
• শৈশব থেকেই সন্তানকে বলুন, তোমাকে ভালো মানুষ হতে হবে। মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে।
এই পৃথিবী নিয়ে একটি শিশুর কৌতূহল অসীম। তাদের কোমল হৃদয় যা দেখে তাই বিশ্বাস করে। যেভাবে শেখে সেভাবেই কল্পনা সাজায়। ছোটবেলার স্মৃতিগুলোই তার সমস্ত জীবনকে প্রভাবিত করে। আপনি তাকে শিশুকালে যা শেখাবেন তাই সে বয়ে বেড়াবে সারাজীবন।
তাই সন্তানকে ইতিবাচক আচরণ ও সঠিক জীবনদৃষ্টি শিক্ষা দিতে হবে। জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ ও তা অর্জনের জন্যে কাজ করতে উৎসাহিত করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, সন্তানকে একজন আত্মবিশ্বাসী ও সফল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব মা-বাবা/অভিভাবক হিসেবে আমাদেরকেই নিতে হবে। যাতে সে তার মেধা ও যোগ্যতাকে পরিপূর্ণরূপে বিকশিত করে একটি সভ্য সমাজ ও জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।