আমি বেশিরভাগ সময়ই ঘনিষ্ঠ আপনজনদের নিকট থেকে অন্যায় আচরণ বা বৈষম্যমূলক আচরণ পাওয়ার পর তাদেরকে ক্ষমা করতে পারি না। একাধিকবার ক্ষমা করে দেখেছি, কিন্তু তারা যখন ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে তখন ক্ষমা করতে পারি না। আমি ক্ষমা নামক এই মহৎ গুণ অর্জন করতে চাই।
আসলে ক্ষমা নিজের কল্যাণের জন্যেই করতে হয়। কারণ ক্ষমা না করা মানে হচ্ছে নিজের ভেতরে রাগ ক্ষোভ ঘৃণাটা থেকে যাওয়া, কষ্ট থেকে যাওয়া। এবং কষ্টটা যদি থেকে যায় আপনি সাফার করছেন।
যে কারণে আমি সবসময় ক্ষমা করে দেই। কেন? কারণ আমি দেখেছি যে, আমার শান্তি বেশি হয়, আমি ঘুমুতে পারি আরামে। আমার ঘুমুনোর জন্যে কোনো সিস্টেমের দরকার হয় না। বিছানায় গিয়ে চোখ বন্ধ করলেই ঘুম চলে আসে।
তো এখন ক্ষমাটা হচ্ছে নিজের জন্যে। আপনি যত ক্ষমা করতে পারবেন তত অন্তরটা পরিষ্কার হবে ভেতরটা পরিষ্কার হবে। কারণ রাগ ক্ষোভ বিদ্বেষ ঘৃণা কষ্ট দুঃখ জ্বালা যন্ত্রণা এগুলো হচ্ছে আবর্জনা। এই আবর্জনা বহন করে বেড়ানোটা ইউজলেস। নিজের কল্যাণের জন্যেই আবর্জনাগুলো বের করে দেন।
আর এখন থেকে যেটা বলবেন যে আল্লাহর রসুল ক্ষমা করেছেন এবং তিনি ক্ষমাটাকে পছন্দ করেন, আমি ক্ষমা করব।
এবং আপনি রসুলুল্লাহ (স)-এর জীবন দেখেন- কত কষ্ট দিয়েছে তাকে! তারপরও সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। এবং ক্ষমা করে দিয়েছেন বলেই তিনি এখন চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে আছেন।
তো ক্ষমা করতে পারাটা খুব ইম্পর্টেন্ট। এবং অন্তর থেকে ক্ষমা করে দেবেন।
প্রথম প্রথম অন্তর থেকে ক্ষমা আসবে না। ক্ষমার ভান করবেন- যে ক্ষমা করে দিলাম, যাও মাফ করে দিলাম মাফ করে দিলাম।
তারপরে একটা সময় দেখবেন যে, ভেতর থেকে আপনি মাফ করতে পারছেন! আপনার রাগ ক্ষোভ আসছে না।
আর ক্ষমার ব্যাপারে তো রসুলুল্লাহ (স)-এর কাছে একবার এক সাহাবী এলেন। তো রসুলুল্লাহ (স)-কে বলেছেন যে, আমাদের তো ক্ষমা করতে পারি না, সবচেয়ে বেশি রেগে যাই আমাদের অধীনস্থ কর্মচারীদের ওপরে। খেপে যাই রেগে যাই মারামারি করি।
তো রসুলুল্লাহ (স) বললেন যে, না।
বলে যে, সে যদি ভুল করে? বললেন যে, তারপরেও মাফ করে দেবে।
তো সাহাবীর এই উত্তরটা পছন্দ হয় নি, ভুল করলেও মাফ করে দেবো?
তারপরে বলল যে, কতবার মাফ করব? তো রসুলুল্লাহ (স) হেসে বললেন, দিনে ৭০ বার।
এবং আল্লাহর রসুল কিন্তু কখনো কারো সাথে এমনকি তাঁর অনেক অধীনস্থ ছিল যারা সেবা করত। কখনো রাগ করেন নাই।
তো অতএব আমরা সবসময় পারব না, অনেক সময় তো রাগের প্রকাশ ঘটে যাবে। কিন্তু প্রকাশ ঘটে গেলেও পরে ক্ষমা করে দেবেন।
[প্রজ্ঞা জালালি ০৭ আগস্ট, ২০১৯]