1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন

খাটিয়া ছাড়াই লাশ বহন করতে হলো

  • সময় বুধবার, ৪ আগস্ট, ২০২১
  • ৯৫৪ বার দেখা হয়েছে
রাজধানীর একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন দেশের একজন পদস্থ পেশাজীবী। কর্মজীবনে বিভিন্ন সময়ে নানা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন তিনি। তার চার মেয়ের সবাই কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। মেয়েরা চাচ্ছিলেন ঢাকা থেকে নিয়ে তাদের বাবার মৃতদেহ যেন নিজ গ্রামে দাফন করা হয়।
ঢাকা থেকে অনেক দূরের একটি জেলায় অবস্থিত সেই গ্রাম। কিন্তু সমস্যা হলো, গ্রামবাসী রাজি হচ্ছে না ওখানে লাশ দাফনে। এমতাবস্থায় মেয়ের এক বন্ধু বিষয়টি দেখভাল করছিলেন। তিনি নিজেও একজন পদস্থ কর্মকর্তা।
সেই বন্ধু ফোন করেন সংশ্লিষ্ট জেলার কোয়ান্টাম স্বেচ্ছাসেবীদের। তিনি অনুরোধ করেন, কোয়ান্টাম যেন তার লাশ রাতের অন্ধকার থাকতেই দাফন করার উদ্যোগ নেন।
সংশ্লিষ্ট জেলা শহরের স্বেচ্ছাসেবীরা মধ্যরাতে যখন তৈরি হয়ে বের হচ্ছেন, তখন টহল পুলিশের একটা গাড়ি এসে থামল তাদের কার্যালয়ের সামনে। এত রাতে এখানে কী হচ্ছে কোথায় যাওয়া হচ্ছে, এসব জানতে চাইলেন তারা।
কোভিড লাশ দাফনের কথা শুনে তারা স্যালুট জানালেন। একইসাথে তারা স্বেচ্ছাসেবীদের গাড়ির সাথে সাথে জেলা শহরের শেষ সীমানা পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। রাতে যেতে স্বেচ্ছাসেবীদের যেন কোনো অসুবিধা না হয় সেজন্যেই হয়তো এমন অপ্রত্যাশিত সহযোগিতা করলেন তারা।
মৃতের গ্রামে যেতে দেড় ঘণ্টা সময় লাগল। সেখানে পৌঁছে জানলেন, লাশবাহী গাড়ি এসেছে রাত ১টায়। সাথে এসেছেন শুধু একজন কেয়ারটেকার এবং লাশবাহী গাড়িটির ড্রাইভার। স্বেচ্ছাসেবীরা সেখানে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এই দুই-তিন ঘণ্টা ধরে লাশ নিয়ে শুধু এই দুজন অনাত্মীয় বসে আছেন।
আপনজন বলতে কেউই নেই লাশের সাথে। অথচ জীবদ্দশায় কত বিশিষ্ট একজন ব্যক্তিই না ছিলেন তিনি!
গ্রামে সুনসান নীরবতা। ভোর হতে আরো কিছু সময় বাকী। এর মধ্যেই দাফন করতে পারলে ভালো হয়। কিন্তু মৃতের এক ভাই জানালেন, তিনি আসছেন। তার জন্যে যেন একটু অপেক্ষা করা হয়। তিনি এলেন ফজরের নামাজ পড়ার পর। ততক্ষণে ভোরের আলোয় চারপাশ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
আগের দিন বেশ বৃষ্টি ছিল। কাদাপানিতে রাস্তাঘাটের অবস্থা বেশ খারাপ। এর মধ্যেই গাড়ি এগোচ্ছে কবরের দিকে। স্বেচ্ছাসেবীরা দেখলেন, মসজিদের সামনে ফজর নামাজ আদায়কারী মানুষের একটি জটলা। লাশবাহী গাড়ি নিয়ে সেদিকে এগোতেই মুহূর্তের মধ্যে উধাও হয়ে গেল সেই জটলা। করোনাভাইরাস নিয়ে কী অস্বাভাবিক আতঙ্ক মানুষের মনে!
যা-হোক, একটু পর গাড়ি যাওয়ার রাস্তা নেই আর। কবরস্থানে যেতে হবে হেঁটে। সেটা প্রায় আধা কিলোমিটারের মতো হাঁটাপথ। গাড়ি থেকে লাশ কবরের কাছে নিতে হবে। এজন্যে প্রয়োজন খাটিয়া। কিন্তু মসজিদের ইমাম খাটিয়া দিতে রাজি হচ্ছেন না। তিনি বলছেন, এ বিষয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতির সাথে আলাপ করতে।
শেষ পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবীদের পক্ষে খাটিয়া জোগাড় করা সম্ভব হয় নি! এদিকে মৃতের সেই ভাই জানালেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে কয়েকজন আসার কথা জানাজা পড়ানোর জন্যে। তারাও প্রথমে এড়িয়ে যেতে চাইলেন। পরে অবশ্য সেখান থেকে তিন জন এলেন। তাদের জন্যেও বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো।
অন্যদিকে গ্রামের লোকজন জড়ো হচ্ছে। চারদিকে একটা চাপা উত্তেজনা। তাদের ফিসফাস আওয়াজ থেকে বোঝা যাচ্ছে, তারা পরিকল্পনা করছে যেন স্বেচ্ছাসেবীরা এখানে দাফন করতে না পারেন। এসব দেখে লাশবাহী গাড়ির ড্রাইভার বললেন, ’স্যার, অবস্থা সুবিধাজনক মনে হচ্ছে না।
এরকম পরিস্থিতি এর আগে আরো দেখেছি। আপনারা যত তাড়াতাড়ি পারেন লাশ দাফন করে দেন! কোনোকিছুর জন্যে অপেক্ষা না করাই ভালো হবে।‘
তখন আর খাটিয়ার অপেক্ষা করলেন না স্বেচ্ছাসেবীরা। তড়িঘড়ি করে গাড়ি থেকে লাশ নামানো হলো। স্বেচ্ছাসেবীরা ছয় জন মিলে লাশের বডিব্যাগের কোনা উঁচিয়ে এগোলেন কবরের দিকে।
খাটিয়া ছাড়া এভাবে কবরের কাছে যেতে সবার গলদঘর্ম অবস্থা। একে তো লাশের ওজন ছিল প্রায় ৭০-৭৫ কেজি। তাছাড়া গ্রাম্য সেই পথও কাদাপানিতে মাখামাখি অবস্থা। ওই অবস্থায় বার বার হাতবদল করে বডিব্যাগ ধরে অতি কষ্টে লাশ নেয়া হলো কবরে।
দাফনের কাজ শেষে সবার প্রয়োজন নিজেদের হাত পা ধোয়ার পানি। কিন্তু এলাকার লোকজন সেই পানিটুকুও দিল না। একটা নদী ছিল সামনেই। সেই নদী দেখিয়ে দিল একজন। অগত্যা নদীতে নেমে নিজেদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে স্বেচ্ছাসেবীরা ফিরে এলেন সেই গ্রাম থেকে।

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © RMGBDNEWS24.COM