যে ছেলেদের আপনি গর্ভে ধারণ করেছেন, তাদেরকে কেন ভয় পাবেন? কোয়ান্টাম মা তো বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের আত্মবিশ্বাসী মা হবেন। বি আম্মি বেগমের মতো মা, যিনি খেলাফত আন্দোলনের নেতা মওলানা মোহাম্মদ আলী ও মওলানা শওকত আলীর মা ছিলেন।
মওলানা মোহাম্মদ আলী ও মওলানা শওকত আলী—তাদের আলী ভ্রাতৃদ্বয় বলা হতো। যখন ইংরেজদের বিরুদ্ধে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছিল—একদিকে মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন, আরেক দিকে আলী ভ্রাতৃদ্বয়ের নেতৃত্বে খেলাফত আন্দোলন। ইংরেজরা প্রমাদ গুনল। একসাথে দুই আন্দোলন মানে হিন্দু-মুসলমান একত্র হয়ে গেলে তো তাদের জন্যে মহা মুশকিল। কারণ আজকে আমাদের এখানে সাম্প্রদায়িক অসম্প্রীতি, হিন্দু-মুসলমান বিদ্বেষ বলে যে কথাগুলো আছে, গত ১৫০০ বছরে এসব আমাদের এখানে কখনো ছিল না। ইংরেজরা এদেশে আসার পর হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগিয়েছে, মুসলমান-বৌদ্ধের মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগিয়েছে।
ইংরেজরা গান্ধীজীকে গ্রেফতার করল। মওলানা মোহাম্মদ আলী, মওলানা শওকত আলীকেও গ্রেফতার করল এবং রটিয়ে দিল যে, মোহাম্মদ আলী এবং শওকত আলী নাকি এই মুচলেকা দিয়ে জেলখানা থেকে বেরিয়ে আসবেন যে, মুক্তি পাওয়ার পর তারা আর এসব আন্দোলন করবেন না।
তো তাদের মা বি আম্মি বেগমের কানে যখন এসব কথা গেল, তিনি জেলখানায় গেলেন ছেলেদের সাথে দেখা করার জন্যে। এদিকে তারা ভাবলেন যে, মা বোধ হয় তাদেরকে বন্ড দিয়ে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্যে এসেছেন। তারা অস্থির হয়ে উঠলেন। মা বললে ‘না’ বলবেন কীভাবে? মাতৃ-আজ্ঞা বলে কথা!
কিন্তু তাদেরকে অবাক করে দিয়ে বি আম্মি বেগম বললেন, আমি শুনেছি তোমরা নাকি ইংরেজদের কাছে মুচলেকা দিয়ে জেলখানা থেকে বেরিয়ে আসার চিন্তা করছ। যদি এরকম চিন্তা করে থাকো তো আমি তোমাদের মা বলছি, তোমাদের দুজনকে গলা টিপে মারব। চিন্তা করুন, কীরকম মা! তো এরকম মা হবেন। কেন ছেলের সাথে কথা বলতে ভয় পান!
সবসময় মনে রাখবেন, দুনিয়া হচ্ছে শক্তের ভক্ত, নরমের যম। মা, মায়ের মতো থাকবেন। আদরের সময় আদর করবেন। যখন শক্ত হওয়ার শক্ত হবেন। ছেলে না থাকলে কী হবে?
ছেলে চলে যাবে, যাক না। ছেলে কি আপনার সাথে কবরে যাবে নাকি?
কিন্তু থাকলে ছেলের মতো থাকতে হবে। অর্থাৎ মাকে শ্রদ্ধা করে চলতে হবে। কারো প্রিয় হওয়ার চেষ্টা করবেন না। কখনো প্রিয় হওয়া যায় না। যত তেল দেবেন, তত তেল চাইবে। সবসময় ন্যায়ের পথে থাকবেন।