বাংলাদেশ প্রতিদিনের খবরে বলা হয়, এ তো গেল মাত্র একটি ঘটনা। এমন অসংখ্য ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মজেছেন ক্যাসিনোর আদলে বিদেশ থেকে অ্যাপসের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসা এই অনলাইন জুয়ায়।
তবে দেশবিদেশে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন ফুটবল-ক্রিকেট লীগ চলাকালে অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে যায় জুয়ার থাবা।
চলমান কোপা আমেরিকা এবং ইউরো কাপ টুর্নামেন্ট ঘিরে এর মধ্যেই মাঠে সক্রিয় জুয়ার নিয়ন্ত্রক-এজেন্ট এবং অংশগ্রহণকারীরা।
ভয়ংকর কর্মকান্ডের লাগাম টেনে ধরতে পারছেন না আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে বিপুল অঙ্কের অর্থ।
তবে অবাক করা তথ্য হলো, দেশের কয়েকটি প্রধান অনলাইন লেনদেন মাধ্যমকে কাজে লাগিয়েই জুয়ায় মজেছেন জুয়াড়িরা।
জুয়াড়ি চক্রগুলো অনুমোদনহীন বিভিন্ন ই-ট্রানজেকশন সাইটে আইডি খুলে অবৈধভাবে আর্থিক লেনদেন করে।
তারা অনলাইন জুয়ার সাইটে এজেন্ট আইডি নিয়ে সাধারণ তরুণ যুবকদের আইডি খুলে দিয়ে অনলাইনে বাজির মাধ্যমে জুয়াখেলায় প্রলুব্ধ করে।
তরুণরা তাদের আইডি দিয়ে ক্রিকেট বাজিতে অংশগ্রহণ করে হেরে গেলে এই এজেন্টরা ১৫ শতাংশ হারে অর্থ কমিশন লাভ করে।
অনুসন্ধান বলছে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনলাইন জুয়াড়িদের আটক করা হলেও বরাবরের মতো পার পেয়ে যাচ্ছে এর পরিচালনাকারীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও এর শেকড়ে কেন পৌঁছাতে পারছেন না এ বিষয় নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে।
যদিও ১৭৬টি সাইট বন্ধ করতে বিভিন্ন পর্যায়ের ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের নির্দেশনা দিয়েছিল বিটিআরসি। এরপরও সক্রিয় রয়েছে জুয়াড়িরা। কোনো কোনো আন্তর্জাতিক সাইটের কান্ট্রি এজেন্ট রয়েছে ঢাকায়।
জুয়াখেলায় টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে তারা নিজেরা সহযোগিতা করে। এ ক্ষেত্রে অনলাইন ব্যাংকিং এজেন্সির মাধ্যমে টাকা লেনদেন করা হয়। এরকম দুটি সাইট থেকে গত তিন মাসে প্রায় ১০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে বলে তথ্য রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে।
খবরে বলা হয় যেভাবে চলছে জুয়া-
জানা গেছে, খেলা চলাকালে বাংলাদেশে অবস্থানরত জুয়াড়িরা প্রথমে বিকাশের মাধ্যমে নিজেদের নামে ডিপোজিট করে। ডিপোজিটের অর্থ দিয়ে জুয়াড়িরা জুয়া ধরে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে টাকাগুলো ডলারে রূপান্তরিত হয়।
অন্যদিকে অনলাইনে দেশীয় বিভিন্ন ক্লাব রয়েছে। যারা খেলেন তাদের অনেকেই ক্লাবের বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠিয়ে খেলায় অংশ নেন। বিকাশে টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে মূলত ম্যাচ নিয়ে জুয়া হয়। বিকাশে লেনদেনের মাধ্যমে জুয়া খেলার ক্ষেত্রে কোনো সাইটে মধ্যস্বত্বভোগী থাকেন।
একটি সাইটের জুয়া খেলা সম্পর্কে জুয়াড়িরা জানান, এতে নাম, ঠিকানা, বয়স ইত্যাদির সঠিক তথ্য দিয়েই অ্যাকাউন্ট করতে হয়। এমনকি অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করার জন্যে পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং ব্যাংক স্টেটমেন্টের ছবি তুলে সাবমিট করতে হয়।
তারপর অ্যাকাউন্ট অনলাইন করে কেউ তার পছন্দমতো খেলাটি বেছে নেন। তারপর কোনো কোনো দলের পক্ষে, কিসের ওপর বেট করবেন তা সিলেক্ট করতে হয়।
সেই সঙ্গে ডলার বা সেন্টের পরিমাণও সিলেক্ট করে ক্লিক করতে হয়। অতঃপর হারলে টাকা কেটে নেবে আর জিতলে অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হবে।
শখে এবং পরিশ্রম ছাড়া বসে বসে অর্থ আয় করতে গিয়ে এতে নেশাগ্রস্ত হচ্ছে তরুণরা। এবং জুয়া খেলে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকেই। এদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী, খুদে ব্যবসায়ী।
আসলে অনলাইন জুয়া শুধু জুয়াড়িকেই নিঃশেষ করছে না। যে পরিবার থেকে জুয়াড়ি এসছে সে পরিবারকেও নিঃশেষ করে দিচ্ছে। অতএব আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাব, শিক্ষার্থীদের ও খুদে ব্যবসায়ীদের রক্ষা করার জন্যে।
এবং জুয়ায় নেশাগ্রস্ত বা আসক্তদের সাথে জড়িত পরিবারগুলোকে রক্ষা করার জন্যে কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
যাতে দেশ থেকে অনলাইন জুয়া বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং কোনো বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান জুয়ায় আসক্ত হয়ে যেন কারাগারে ঠাঁই না পায়। এবং তার শোকে যেন কোনো বাবা-মাকে শয্যাশায়ী হতে না হয়।