ভোটের রাতের টান টান উত্তেজনা। তীব্র উদ্বেগ আর উৎসাহ নিয়ে নির্ঘুম সমর্থকদের অপেক্ষা। রাত ভোর হওয়ার আগেই কারো বিজয়োৎসব আর কারো হৃদয়ভাঙা যন্ত্রণা—এই চেনা চিত্রে এবার আর নেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। বরং কয়েক ঘণ্টার ওই উত্তেজনা এবার কয়েক দিন জিইয়ে থাকবে বলেই মনে হচ্ছে। ভোট গণনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে উত্তেজনার পারদ। নির্বাচনের এক দিন পার করার পর ফলাফলের যে চিত্র হাতে এসেছে, তাতে এগিয়ে আছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। তবে ব্যবধানের সংখ্যায় অনিশ্চয়তা এতটাই বেশি, যেকোনো সময় পাল্টে যেতে পারে পাশার দান। সব কিছু টপকে সামনে চলে আসতে পারেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রে ভোটের হিসাব অঙ্গরাজ্যভিত্তিক। সেখানেও রয়েছে ইলেকটোরাল কলেজের জটিল গণিত। অঙ্কের জটিলতাকে সঙ্গে রেখেই এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা) জো বাইডেন পেয়েছেন ২৪৮টি ইলেকটোরাল ভোট। ডোনাল্ড ট্রাম্প ২১৪টি। ভোট হয়েছে ৫০ অঙ্গরাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসিতে। সব মিলিয়ে ইলেকটরের সংখ্যা ৫৩৮টি। আর জয়ের জাদুসংখ্যা ২৭০। আরো সাত রাজ্যের ফল ঘোষণা বাকি। এই সাত রাজ্যই নির্ধারণ করবে ট্রাম্প আর বাইডেনের ভবিষ্যৎ।
করোনাভাইরাস সংকটের কারণে এবার আগাম ভোটের সংখ্যা অস্বাভাবিক। গত ৩ নভেম্বর মঙ্গলবার প্রথম ভোটকেন্দ্রের দরজা খোলার আগেই পড়েছে ৬৮ শতাংশ ভোট। যার একটি বড় অংশ ডাকের ব্যালট। কোটি কোটি ব্যালট খোলা ও গোনার প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লাগছে বলেই ঝুলে গেছে এই সাত রাজ্যের ফল ঘোষণার প্রক্রিয়া। ধারণা করা হচ্ছে, আগামীকাল শুক্রবারের মধ্যেই এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। তবে এর মধ্যেই কারচুপির অভিযোগ করে উইসকনসিনে ভোট পুনর্গণনার দাবি করেছেন ট্রাম্প। ১০ ইলেকটোরের এ রাজ্যে এরই মধ্যে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে বাইডেনকে। এদিকে ট্রাম্প শিবির জানিয়েছে, দোদুল্যমান রাজ্য মিশিগানের ভোট গণনা বন্ধে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে তারা। এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের প্রচার ম্যানেজার জানান, ‘গণনা প্রক্রিয়ায় প্রচারদলের সদস্যদের সহযোগিতা করা হচ্ছে না।’ এই রাজ্যেও সামান্য ব্যাবধানে এগিয়ে আছেন বাইডেন।
তবে এতটা সময় কোনোভাবেই অপেক্ষায় থাকতে রাজি নন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। শুরু থেকেই আগাম ভোটের তীব্র বিরোধী এই প্রেসিডেন্ট গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় রাত ২টায় জয়ের ঘোষণা দিয়ে ফেলেছেন। শুধু জয়ের ঘোষণা দিয়েই থেমে থাকেননি ধনকুবের এই সাবেক আবাসন ব্যবসায়ী। হুমকি দিয়েছেন, ভোট গণনা থামাতে সুপ্রিম কোর্টের দারস্থ হবেন তিনি। আগে থেকেই এমন হিসাব কষে রেখেছিলেন ৭৪ বছর বয়সী ট্রাম্প। এ কারণে সুপ্রিম কোর্টকে নিজের পছন্দমতো ছকে ঢেলে রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সাজিয়ে রেখেছেন।
জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। বুধবারের শুরুতে ট্রাম্পের আগেই মঞ্চে ওঠেন তিনি। সমর্থকদের ধৈর্যের সঙ্গে আস্থা রাখতে বলে ৭৭ বছর বয়সী এই অভিজ্ঞ রাজনীতিক বলেন, ‘জয়ের পথেই রয়েছি আমরা। জয় আমাদেরই হবে। শেষ ব্যালটটি গোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই লড়াই চলবে।’