‘স্বাস্থ্য একটু ভালো হওয়ায় ছেলেটা সবার কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখত। কোচিংয়ে যেতে আপত্তি করত না। কিন্তু ক্লাস এইটে উঠে হঠাৎ স্কুলে যেতে চাইত না।
পরে জানতে পারি, শিক্ষকদের কাছে অপমানিত হওয়ার পর সহপাঠীরাও তাকে পেছন থেকে এসে মারত। স্বাস্থ্য ভালো ছিল বলে মেরে আরাম পেত। স্কুলের বাথরুমে একবার আটকে রেখে সহপাঠীরা মারধর করেছিল।
এই অপমান আর উপহাস সহ্য করতে না পেরেই ছেলেটি কিটো ডায়েট করে না খেয়ে ওজন কমাতে শুরু করে।’
শিক্ষক শিক্ষার্থীর প্রতি বা শিক্ষার্থীরা পরস্পরের প্রতি সমমর্মিতা, সম্মানবোধ থাকলে এবং শুদ্ধাচার থাকলে এই বেদনাদায়ক ঘটনাটি ঘটত না।
ইন্টারনেট এখন অনেক তথ্যপ্রাপ্তির স্বাচ্ছন্দ্যকে যেরকম নিশ্চিত করেছে, তেমনি অপতথ্যের সহজলভ্যতাকেও বাড়িয়েছে আশঙ্কাজনকভাবে!
যে কেউ যে-কোনো কিছু লিখে বা ভিডিও করে ছেড়ে দিলেই এখন তা ডায়েট। আর তা দেখে একজন সাধারণ কিশোর বা কিশোরী বা তরুণ বা তরুণী ভাবছে চিকন হওয়ার এই বুঝি সহজ তরিকা!
এদেরকে আরো বিপথগামী করার জন্যে তৈরি হচ্ছে বিভ্রান্তিকর সব তথ্য প্রচারক ইন্টারনেট ক্লাব। এরা বলে, বিয়িং থিন ইজ মোর ইম্পর্টেন্ট দ্যান বিয়িং হেলথি।
অ্যানেরেক্সিয়াকে কোনো অসুখ নয়, এরা চিত্রিত করে একটা লাইফস্টাইল হিসেবে। থাকে অ্যানারেক্সিক সব অস্থি-চর্মসার মডেলদের ছবি।
মা-বাবার আড়ালে কিশোর-কিশোরীরা এসব গ্রুপের কথাবার্তায় প্রভাবিত হয়।
মাসের পর মাস একটি কিশোর খাবার নিয়ে বিভ্রান্তিকর ডায়েট প্ল্যান চর্চা করছে। মা-বাবা যদি যথার্থ অর্থে মনোযোগী হতেন, তাহলে এটা কি তাদের চোখ এড়াত? নিশ্চয়ই না।
অল্প বয়সী সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সাথে না নেয়ার প্রবণতা অধিকাংশ মা-বাবার মধ্যেই দেখা যায়। যা হয়তো একসময় সন্তানকে করুণ পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়।
আসলে সবার উচিৎ নিজের সন্তানের বন্ধু হওয়া যাতে করে সন্তান সবথেকে কম্ফোর্ট জোনটা পায় আপনার কাছ থেকে। তাই সন্তানকে যে-কোনো কিছু শেয়ার করার সুযোগ দিন। সন্তানের জীবনে একটি সুন্দর লক্ষ্য দিন। প্রত্যেক শিশুকেই সমান মনোযোগ দিন।
সন্তান ইন্টারনেট দেখে কী অনুসরণ করছে সেদিকেও খেয়াল রাখুন। ইন্টারনেট আসক্তি থেকে নিজে বেরিয়ে আসুন তাহলে সন্তানও আপনাকে অনুসরণ করবে।