দ্য ডেবট। ঋণ। দি ফার্স্ট ফাইভ থাউজেন্ড ইয়ার। ঋণের প্রথম পাঁচ হাজার বছর।
এই ডেভিড গ্রেইবার উনি হচ্ছেন এনথ্রোপলোজিস্ট। এনথ্রোপলোজিস্ট হচ্ছে নৃ-বিজ্ঞানী।
এবং আমি তার রিসার্চ দেখে মুগ্ধ হলাম!
পাঁচ হাজার বছরের ঋণের ইতিহাস। সেই সুমেরিয় সভ্যতা থেকে শুরু করে চীনা সভ্যতা, হিন্দু সভ্যতা, মুসলিম সভ্যতা সমস্ত জায়গার বিবরণ। এবং একদম লেটেস্ট পর্যন্ত ঋণের যে ঐতিহাসিক বিবর্তন এবং ঋণের যে ফল ঋণের যে প্রভাব।
মানে এরকম গবেষণামূলক বই অবশ্য এর আগে লেখাও হয় নি আর আমার পড়াও হয় নাই।
এবং তার দৃষ্টিভঙ্গির যে ক্ল্যারিটি। ঋণের যে যথার্থ ব্যাখ্যা এবং ঋণটা আমাদের সমাজ এবং সভ্যতার জন্যে কত বড় অভিশাপ এটা এই পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাস, ইতিহাসের বিবর্তন দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন। অর্থাৎ আমরা যে কথাগুলো বলি সে কথাগুলো।
মানে মহাজনী ব্যবসা আগের এবং এখনকার এ যে কোনো তফাত নাই- এটা তিনি প্রমাণ করেছেন। যে আগের যে মহাজনী ব্যবসা সেটাই নতুন রূপ নিয়েছে।
এই ঋণ যে আত্মহত্যা কীভাবে করাচ্ছে এবং কৃষকরা এবং সারা পৃথিবীর এবং আইএমএফ-এর ঋণ থেকে শুরু করে যতরকম ঋণ আছে, সমস্ত ঋণের মূল রহস্য এবং উদ্দেশ্য, এত চমৎকারভাবে এর আগে কেউ মানে আমরা যে কথাগুলো বলি এরকম দালিলিক উপস্থাপনা।
আমরা তো বলি আমাদের ক্বালবি জ্ঞান থেকে। সেই ক্বালবি জ্ঞানের দালিলিক উপস্থাপনা চমৎকার। এর আগে আমি দেখি নাই।
এবং একটা সময় কী হচ্ছে? ঋণ কীভাবে মানুষকে দাস বানিয়েছে।
এবং তার বক্তব্যের মূল জিনিস হচ্ছে হয় ঋণ আপনাকে দাস বানাবে না হয় দুর্বৃত্ত বানাবে। আপনি যদি ঋণগ্রস্ত হন, হয় আপনি দাস হবেন অথবা দুর্বৃত্ত হবেন।
এবং আমেরিকান একটা প্রবাদ দিয়ে উনি খুব চমৎকারভাবে বলেছেন যে ইফ ইউ ও দা ব্যাংক এ থাউজেন্ড ডলার্স ব্যাংক ওনস ইউ। যে তুমি যদি ব্যাংকের কাছ থেকে একহাজার ডলার ঋণ নাও তাহলে তোমার মালিক হয়ে যাচ্ছে ব্যাংক।
আর ইফ ইউ ও দা ব্যাংক এ হান্ড্রেড মিলিয়ন ডলার্স ইউ ওন দ্য ব্যাংক।
যদি ব্যাংক থেকে তুমি একশ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিতে পারো, তাহলে তুমি ব্যাংকের মালিক হয়ে যাবা।
তো হয় ঋণ আপনাকে দাস বানাবে। না হয় দুর্বৃত্ত বানাবে, প্রতারক বানাবে। এর মাঝামাঝি কোনো পথ নাই।
এবং ধনী দেশগুলো দরিদ্র্য দেশগুলোকে যে ঋণ দেয় এটা একটা কার্টুন দিয়ে ডেভিড গ্রেইবার খুব চমৎকারভাবে বলেছেন।
ঋণগ্রস্ত আফ্রিকা ফ্রান্সকে খাওয়াচ্ছে চামচ দিয়ে। ঋণগ্রস্ত দেখেন না! বৃদ্ধ কঙ্কালসার আফ্রিকা। নিজে খাচ্ছে না খাওয়াচ্ছে ফ্রান্সকে।
এখানে যেটা হচ্ছে যে ১৭৫৭ সালের পরে তখনকার কোম্পানির যে ঋণ ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।
১৭৫৭ সালে পলাশি যুদ্ধের পরে কয়েক বছরের মধ্যেই কোম্পানি দিল্লির সম্রাটের কাছ থেকে বাংলার দেওয়ানি লাভ করে। দেওয়ানি লাভ করার পরে খাজনা তো আদায় করছে।
তো ইংরেজরা যে যুদ্ধ করেছে ইস্ট ইন্ডিয়া ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মহিশুরের যে যুদ্ধ বাংলা দখল করার পরে যে যা লুটপাট করল তো করল।
তারপরে যে যুদ্ধ। যুদ্ধের খরচ বহন করছে এই বাংলা সরকার। তারা যুদ্ধ করে জায়গা দখল করছে, কিন্তু ঋণটা চাপছে এই বাংলার ওপরে।
১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের পরে যখন রানি ভারতের শাসনভার গ্রহণ করলেন তখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ঋণটা চলে গেল রানির কাছে।
এবং সে ঋণ শোধ এখনো ভারত করে যাচ্ছে এখনো পাকিস্তান করে যাচ্ছে। আমাদের বাংলাদেশও করছে কিনা আমি জানি না। সেই ১৭৫৭ সালে করা ঋণ!
এবং আফ্রিকান দেশগুলোরও একই অবস্থা। তারা এখনো স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু সেই কলোনিয়াল গভনর্মেন্ট যে ঋণ করেছে সেই ঋণ থেকে তারা বেরুতে পারে নাই।
এবং এই বইতেই একটা হাদিসের উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে-
সেটা হচ্ছে আবু সায়ীদ এটা নিসাই থেকে, আই হিয়ার দি মেসেঞ্জার অব আল্লাহ সেইড, আই সিক রিফিউজ উইথ আল্লাহ ফ্রম কুফর এন্ড ডেবট।
যে আমি আল্লাহর কাছে কুফর এবং ঋণ থেকে পানাহ চাচ্ছি।
এ ম্যান সেইড, “ও মেসেঞ্জার অব আল্লাহ! আর ইউ ইকুয়েটিং ডেবট ইউথ কুফর?
দি মেসেঞ্জার অব আল্লাহ সেইড, “ইয়েস।”
ঋণ এবং কুফরি দুটো হচ্ছে একই জিনিস যখন আপনি সুদে ঋণ নেন।
এবং এখানে বেদ থেকে বাইবেল থেকে এবং সুমেরিয় ভাষা- সে এখন থেকে পাঁচ হাজার বছর আগের সে ভাষা থেকে ঋণ সম্পর্কে যে দৃষ্টিভঙ্গি সে দৃষ্টিভঙ্গিটা তুলে ধরা হয়েছে খুব চমৎকারভাবে।
[সজ্ঞা জালালি, ১৭ জুলাই, ২০১৯]