নাসরীন আক্তার আইভী বলেন, পাঁচ বছর গবেষণার পর পেঁপের এমন দেশীয় জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। পেঁপের জাত দুটি গাইনাডোইওসিয়াস ধরনের স্ত্রী ও উভয়লিঙ্গ বিশিষ্ট গাছ থাকবে। প্রতিটি গাছে ৫০ থেকে ৬০টি ফল ধরবে।
স্ত্রী গাছের ফলের আকার নাশপাতি আকারের এবং গায়ে লম্বালম্বি দাগ আছে। ফলন হয় হেক্টরপ্রতি ৬০ থেকে ৭০ টন। এ জাতের পেঁপেতে পেপেইন নিঃসরণ বেশি হয়। পাকা ফলের মিষ্টতা বেশি। পাকা ফলের ভেতরের রং একটিতে গাঢ় হলুদ থেকে গাঢ় কমলা, অপরটিতে লাল। পাকা পেঁপেতে যেমন প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ থাকে, তেমনি কাঁচা পেঁপেতে রয়েছে পেপেইন নামের এক প্রকার হজমকারী দ্রব্য, যা ডায়াবেটিস রোগীর জন্যে খুব উপকারী।
এ জাতের পেঁপের বীজ জানুয়ারিতে রোপণ করা হয় এবং মার্চে উৎপাদিত চারা রোপণের উত্তম সময়। চারা লাগানোর ৬০-৭০ দিনের মধ্যে ফল ধরে। এ জাতের পেঁপেতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। পেঁপের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি হওয়ায় মানবদেহের রোগ প্রতিরোধে এটি ভালো ভূমিকা রাখে।
পেঁপে পরপরাগায়িত ফল। পেঁপের ৩২ লিঙ্গের গাছ থাকলেও পুরুষ, স্ত্রী ও উভয় লিঙ্গের গাছই পাওয়া যায়। এদের মধ্যে শুধু স্ত্রী ও উভয় লিঙ্গের পেঁপের জাত উন্নয়নে কাজ করছেন এই গবেষক। স্ত্রী ও উভয় লিঙ্গের পেঁপে গাছে ফল ধরে। উভয় লিঙ্গ গাছের ফল লম্বাটে হয়। প্রতিটি গাছে ৫০-৬০টি ফল হয় এবং প্রতিটি পেঁপের ওজন দেড় কেজি থেকে সাড়ে ৩ কেজি হয়ে থাকে।
বাণিজ্যিকভাবে চাষের ক্ষেত্রে চাষিরা পরপরাগায়িত বীজ ব্যবহার করেন। পেঁপের বীজ থেকে উৎপাদিত চারার ৫০ ভাগ পুরুষ গাছ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এসব পুরুষ গাছ থেকে কোনো ফল পাওয়া যায় না। পেঁপে চাষিরা এ ক্ষেত্রে প্রতি ভিটেতে ৩-৪টি করে চারা একত্রে রোপণ করেন। ফুল আসার পর পুরুষ গাছ কেটে ফেলে জমিতে রাখে শুধু স্ত্রী ও উভয় লিঙ্গের গাছ।
পুরুষ গাছ মাটি থেকে পুষ্টি ও সার গ্রহণ করে। তাই অন্য গাছের সার ও পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে ফলন কমে যায় এবং উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়। চাষিরা যাতে প্রতি ভিটে একটি চারা রোপণ করে সব চারাতেই ফল পায় এবং ফলন ও পুষ্টিগুণ বেশি হয়-এ জন্যে ৫ বছর গবেষণা চালিয়ে সুস্বাদু পেঁপের এমন দেশীয় জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।
২০০৮ সালে পেঁপে গবেষণার কাজ হাতে নেন অধ্যাপক নাসরীন আক্তার আইভী। এরপর দেশীয় পেঁপের কৌলিসম্পদ ব্যবহার করে নতুন জাত উদ্ভাবনের কাজ শুরু করেন। দেশীয় পেঁপের পরপরাগায়িত বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা হয় প্রজনন ও জেনেটিক পিওরিফিকেশনের মাধ্যমে। গাইনোডোইওসিয়াস ধরনের কয়েকটি উন্নত লাইন বাছাই করা হয়। বাছাই করা লাইনগুলো থেকে শতভাগ ফলবান পেঁপে গাছ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। চীন, অস্ট্রেলিয়া ও তাইওয়ানে এ ধরনের গবেষণা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গিয়াস উদ্দীন মিয়া বলেন, পেঁপে ছাড়াও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এ পর্যন্ত বিভিন্ন শ্যস্যের ৬০টি জাত উদ্ভাবন করেছেন। গবেষণার ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার পাশপাশি লেখাপড়ার মান উন্নয়নের সার্বক্ষণিক তিনি তত্ত্বাবধান করছেন।
সূত্র : বাংলানিউজ২৪.কম (২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১)