1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
  2. [email protected] : adminbackup :
বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০২:২২ পূর্বাহ্ন

নিয়মিত রাত্রি জাগরণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে

  • সময় শনিবার, ১০ মে, ২০২৫
  • ৬১ বার দেখা হয়েছে

নিয়মিত রাত্রি জাগরণ বা অনিদ্রা (Sleep Deprivation) স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘমেয়াদী ঘুমের অভাব শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কারণ হয়।

ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসি মোদের বাড়ি এসো/খাট নেই পালঙ্ক নেই খোকার চোখে বসো। যুগ পাল্টে গেছে। স্মার্টফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ এমন নানা প্রযুক্তিপণ্যের সহজলভ্যতা, শ-খানেক টিভি চ্যানেল আর ফেসবুক-বিপ্লবের ঝড়ে ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসিরা বহু আগেই প্রাণ নিয়ে পালিয়েছে। না পালিয়ে উপায় কী? ঘুমতাড়ানি ডিজিটাল দৈত্যদের আগ্রাসনে ওদেরই যে চিরতরে ঘুম হারানোর দশা!

শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যা:
আপনি হয়তো রাতের পর রাত জেগে টিভিতে টক শো কিংবা মুভি-সিরিয়াল দেখছেন, নয়তো একটু পর পর দেখে চলেছেন আপনার ফেসবুক স্ট্যাটাসে কয়টা লাইক পড়ল। নিশ্চিত জেনে রাখুন, প্রতিরাতে আপনি নীরবে ক্রমশ বাড়িয়ে চলেছেন মনোদৈহিক স্বাস্থ্যদুর্ভোগের ঝুঁকি।

মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা:
– ডিপ্রেশন ও অ্যাংজাইটি: অনিদ্রা উদ্বেগ, হতাশা এবং মুড সুইং-এর ঝুঁকি বাড়ায়।
– স্মৃতিশক্তি ও একাগ্রতা হ্রাস: ঘুম মস্তিষ্কের কোষগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করে, তাই ঘুম কম হলে স্মৃতি, শেখার ক্ষমতা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার
দক্ষতা কমে যায়।
– সাইকোসিস (Psychosis) রিস্ক: দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রা হ্যালুসিনেশন বা প্যারানয়েড ভাবনার কারণ হতে পারে।

– হৃদরোগ ও রক্তচাপ বৃদ্ধি: অনিদ্রা হৃদপিণ্ডের উপর চাপ বাড়ায়, যা উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।
– ডায়াবেটিসের ঝুঁকি: ঘুমের অভাব ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ায়, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।
– ওজন বৃদ্ধি: ঘুম কম হলে ঘ্রেলিন (Ghrelin) (ক্ষুধা বাড়ায়) হরমোন বেড়ে যায় এবং লেপটিন (Leptin) (পূর্ণতা বোঝায়) হরমোন কমে
যায়, ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।
– ইমিউন সিস্টেম দুর্বলতা: ঘুমের অভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, ফলে সংক্রমণ ও অসুস্থতা সহজেই আক্রমণ করে।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, হঠাৎ দু-একদিন জরুরি প্রয়োজনে রাত জাগতে হতেই পারে। কিন্তু ক্রমাগত রাতজাগার ফলে একজন মানুষের দেহঘড়িতে দেখা দিতে পারে মারাত্মক গোলযোগ। যার পরিণতিতে তিনি আক্রান্ত হন স্লিপ ডিজঅর্ডার, অপরিণত বয়সে হৃদরোগ, বিষণ্নতা এমনকি পারিবারিক অশান্তিতে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মধারাকেও শ্লথ করে তোলে টানা রাত্রি জাগরণ। সৃজনশীলতা, প্রাণবন্ততা, কর্মতৎপরতা কমে যায় এতে। অন্যদিকে স্বাভাবিক জৈব-ছন্দ অনুসারে প্রতিদিন পরিমিত ঘুম ও বিশ্রাম হলে স্মৃতিশক্তি হয়ে ওঠে সংহত এবং তা প্রয়োজনের সময় কাজও করে ভালোভাবে।

দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব:
– দুর্ঘটনার ঝুঁকি: ঘুমের অভাবে সতর্কতা কমে যায়, ফলে গাড়ি চালানো বা যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সময় বিপদের সম্ভাবনা বাড়ে।
– কর্মক্ষমতা হ্রাস: কাজে বা পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে সমস্যা হয়, উৎপাদনশীলতা কমে যায়।

প্রাকৃতিক জৈব-ছন্দ : দিনে কাজ, রাতে ঘুম
প্রত্যেক মানুষের শরীরেই আছে একটি প্রাকৃতিক জৈবঘড়ি, যা নিয়ন্ত্রণ করে হরমোন প্রবাহসহ আমাদের যাবতীয় শারীরবৃত্তীয় কর্মকাণ্ড। তার কথা হলো, দিনে কাজ করো, আর রাতটা রেখো তৃপ্তিময় সুনিদ্রার জন্যে। কিন্তু আপনি যখন দিনের পর দিন এই স্বাভাবিক জৈব-ছন্দকে প্রভাবিত করেন, দেহঘড়িতে বাধে গোলমাল। ফলে জ্বর জ্বর ভাব, ঠান্ডা লাগা, এসিডিটি-র পাশাপাশি দুর্বল হতে থাকে আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা।

মানবদেহের বিভিন্ন হরমোন ও এনজাইমগুলোর মাত্রা সকাল-সন্ধ্যা ভেদে তারতম্য ঘটে। যেমন : কর্টিসোল। মানবদেহের শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রমে অত্যন্ত প্রভাব বিস্তারকারী এ হরমোনটির নিঃসরণ-মাত্রা দিনের প্রথমার্ধে থাকে সর্বোচ্চ পরিমাণে এবং এরপর থেকে কমতে থাকে। কিন্তু টানা রাত্রি জাগরণের ফলে এই প্রাকৃতিক নিয়ম পাল্টে যায়। বিঘ্নিত হয় স্বাভাবিক হরমোন প্রবাহ।

গবেষকরা বলছেন, কেউ হয়তো ভাবতে পারেন, ক্রমাগত রাত জেগে তার কোনো সমস্যাই হচ্ছে না, ভালোই সয়ে গেছে। এ-ক্ষেত্রে গবেষকদের ভাষ্য হলো, যারা অ্যালকোহলিক তারাও এই যুক্তিই দেন ‘আমার তো কোনো সমস্যা হয় না, বরং কিছুটা পান করলেই আমি বেশ চনমনে থাকি আর আমি মাতালও হই না।’ কিন্তু ক্ষতি যেদিকে যা হওয়ার ঠিকই হয়, যা-ই তারা বলুক।

রাতে নিয়মিত ঘুম পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে, দেহের ওজন থাকে নিয়ন্ত্রণে
যোগশাস্ত্র অনুসারে, সূর্যের গতিবিধি পরিপাকতন্ত্রের কর্মপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। মানব পরিপাকতন্ত্র সবচেয়ে ভালো কাজ করে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মধ্যবর্তী সময়ে। রাত বাড়ার সাথে সাথে ক্রমশ কমতে থাকে খাবার হজমে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন এনজাইম নিঃসরণের পরিমাণ।

ফলে আমরা যখন রাত জাগি ও রাতের খাবারটা খাই দেরি করে, ওটা ভালো হজম হয় না। এজন্যে প্রায়শই রাত জাগেন যারা, হজমযন্ত্রের গোলমাল তাদের একটি সাধারণ সমস্যা। অন্যদিকে রাতে শীঘ্র খাবার গ্রহণ ও পরিমিত ঘুম পরিপাকতন্ত্রকে রাখে সুস্থ এবং ওজনও থাকে নিয়ন্ত্রণে।

এসব তথ্য বিবেচনায় স্বাস্থ্যগবেষকরা বলছেন, ছন্দময় মনোদৈহিক সুস্বাস্থ্য এবং গতিময় কর্মব্যস্ত জীবনের জন্যে প্রতিরাতে পরিমিত ঘুমান। তাতে আপনি সারাদিনই থাকবেন কর্মতৎপর চটপটে সৃজনশীল ও তীক্ষ্ন স্মৃতিশক্তির অধিকারী।

সমাধান:
– নিয়মিত ঘুমের রুটিন মেনে চলুন (প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ঘুমান)।
– রাত জাগার অভ্যাস এড়িয়ে চলুন, বিশেষ করে মোবাইল/ল্যাপটপের নীল আলো (Blue Light) ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
– ক্যাফেইন ও ভারী খাবার রাতে এড়িয়ে চলুন।
– ইয়োগা, মেডিটেশন বা হালকা ব্যায়াম করুন ঘুমের মান উন্নত করতে।

ঘুম শরীরের জন্য একটি অপরিহার্য প্রক্রিয়া, তাই রাত্রি জাগরণের অভ্যাস পরিবর্তন করে সুস্থ থাকুন!

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com