আলোচনার সারসংক্ষেপ : নিয়ত বা দৃষ্টিভঙ্গি যে নিয়তির মূল তা সফল বা ব্যর্থ মানুষদের জীবন দেখলেই বোঝা যায়। জাতীয় অধ্যাপক প্রয়াত ডা. নুরুল ইসলামের ছোটবেলা থেকে ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন ছিল। আইএসসি রেজাল্টের পর কলকাতায় এসে তিনি শোনেন মেডিকেল কলেজে ভর্তির ফর্ম নেয়ার তারিখ শেষ। তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। গুরুজনেরা পরামর্শ দিলেন বিএ পড়তে। তিনি মেনে নিতে পারলেন না। সেক্রেটারিয়েটে গিয়ে সচিবের সাথে দেখা করে সমস্যার কথা বললেন। কিন্তু বার বার গিয়েও কোনো সহানুভূতি পেলেন না। শেষমেষ মরিয়া হয়ে তিনি দেখা করলেন কলেজের ইংরেজ অধ্যক্ষের সাথে। তাকে সবকিছু খুলে বলতেই তিনি সচিবকে ডেকে ফর্ম দিতে বললেন। মেডিকেল কলেজে তিনি ভর্তি হলেন। পড়াশোনা শেষ করে ডাক্তার হয়ে জাতীয় ওষুধনীতিতে যুগান্তকারী অবদান রাখলেন। তার নিয়তই কিন্তু তাকে টেনে নিয়ে গেছে তার এই সাফল্যমণ্ডিত নিয়তির দিকে।
আসলে নিয়ত যদি থাকে বড় কিছু করার তাহলে বর্তমানের প্রতিবন্ধকতা কোনো প্রতিবন্ধকতা হতে পারে না। বোখারী শরীফের প্রথম হাদীস হচ্ছে-‘ইন্নামাল আমালু বিন নিয়াত’। অর্থাৎ ‘নিয়ত সকল কর্মের অঙ্কুর’। নিয়ত অনুসারেই কর্মফল পেতে হবে। নিয়তের কোয়ান্টাম পরিভাষা হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি। জীবনকে সুন্দর, সহজ, উপভোগ্য এবং সাফল্যমণ্ডিত করার জন্যে একটি জিনিসের প্রয়োজন—দৃষ্টিভঙ্গি।
পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারা-র ১৪৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, প্রত্যেকেরই একটি লক্ষ্য আছে, যা তার কর্মধারাকে পরিচালিত করে। মানুষ প্রথমে তার লক্ষ্য ঠিক করে এবং এরপরে লক্ষ্য তাকে টেনে নিয়ে যায়।
উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি রসুলুল্লাহ (স)-কে বলতে শুনেছি যে, কর্ম মাত্রই নিয়তের ওপর নির্ভরশীল এবং প্রত্যেকের প্রাপ্য ফল হবে তা-ই, যা সে নিয়ত করেছে।
ধম্মপদে বলা হয়েছে-চিন্তা বা অভিপ্রায়ের প্রতিফলন ঘটে স্বভাব বা প্রকৃতিতে। যদি কেউ মন্দ অভিপ্রায় নিয়ে কথা বলে বা কাজ করে দুঃখ তাকে অনুগমন করে। আর কেউ যদি সুচিন্তা নিয়ে কথা বলে বা কাজ করে সুখ তাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করে। [যমকবগ্গো : ১-২]।
নিয়ত কীভাবে নিয়তির দিকে পরিচালিত করে?
নিয়তি বদলানোর যে হাতিয়ার তারই নাম হলো নিয়ত। নিয়ত ঠিক থাকলে দীনহীন অবস্থা থেকে প্রাচুর্যময় জীবনের অধিকারী হতে পারি। যেমন হয়েছেন ধনকুবের এন্ড্রু কানের্গি। নিয়ত ঠিক করে প্রশান্তি সুস্বাস্থ্য এবং সাফল্যকে আমরাও জীবনের নিয়তি হিসেবে গ্রহণ করতে পারি। যেমন পেরেছিলেন মহীয়সী হেলেন কেলার। আসলে প্রতিটি মানুষকে স্রষ্টা সামর্থ্য, মেধা, যোগ্যতা, সম্ভাবনা দিয়ে দিয়েছেন। তা প্রয়োগের প্রধান চালিকাশক্তিই হচ্ছে নিয়ত বা দৃষ্টিভঙ্গি।
আমাদের করণীয় কী?
যদি আমরা আমাদের নিয়তিকে বদলাতে চাই তাহলে আমাদের নিয়তকে বা দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর এই মন্ত্র অনুসরণ করে আমাদের হাজার হাজার গ্রাজুয়েটদের জীবন বদলে গেছে।
মেডিটেশন তাদের ভেতরের শক্তির স্ফূরণ ঘটিয়ে, নিজের মেধা গুণ ও যোগ্যতাকে খুঁজে বের করতে সহায়তা করেছে, আত্মবিশ্বাসী ও আত্মপ্রত্যয়ী করে তুলেছে। আর বাস্তবতা হলো মানুষের অন্তর্গত ধারণারই প্রতিফলন। অন্তর্গত ধারণা বদলে গেলে বাস্তবতাও বদলে যায়।