নোবেল পুরস্কার দাবি করলেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘর্ষে তার ‘চমৎকার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা’ যুদ্ধ এড়াতে বড় ভূমিকা রেখেছে বলেই তার মত।
গত শুক্রবার (২০ জুন) এক সাংবাদিক বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনারা আমাকে শান্তির নোবেল দিতে পারেন..
সবচেয়ে বড় উদাহরণ ভারত ও পাকিস্তান। আমি ওদের জন্য দারুণ কাজ করেছি। কিন্তু শান্তির পুরস্কার শুধু উদারপন্থীদেরই দেওয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিও করব। দেখার মতো দারুণ সব বিষয় সামনে আসছে।’
ট্রাম্পের এমন মন্তব্য আসে এমন এক সময়ে, যখন পাকিস্তান সরকার ২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে তার নাম প্রস্তাব করেছে। পাকিস্তান সরকারের মতে, ২০২৫ সালের ভারত-পাকিস্তান সংকটের সময় ট্রাম্পের ‘ব্যাক-চ্যানেল কূটনীতি ও কৌশলগত দূরদর্শিতা’ পরিস্থিতি শান্ত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পাকিস্তান দাবি করেছে, ১০ মে যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, তা ট্রাম্পের মধ্যস্থতার ফল। ইসলামাবাদ বলছে, এটি দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত, যেখানে ট্রাম্প প্রকৃত অর্থে শান্তির দূত হিসেবে উঠে এসেছেন।
ভারতের পক্ষ থেকে স্পষ্ট অস্বীকৃতি
ভারত ট্রাম্পের এই দাবি ও পাকিস্তানের অবস্থানকে ঘোরতরভাবে অস্বীকার করেছে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৭ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ফোন করে সাফ জানিয়ে দেন—এই যুদ্ধবিরতি সম্পূর্ণভাবে ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে, কোনও তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা এখানে ছিল না।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘ভারত কখনও তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ মেনে নেয়নি এবং ভবিষ্যতেও নেবে না।’
অন্যান্য শান্তি উদ্যোগের কথাও স্মরণ
ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এক পোস্টে আরও দাবি করেন, তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে মিলেই রুয়ান্ডা ও কঙ্গোর মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি সম্পন্ন করেছেন। ‘এই যুদ্ধ ছিল অত্যন্ত রক্তক্ষয়ী এবং দীর্ঘমেয়াদি, কিন্তু আমরা একে থামাতে পেরেছি’, বলেন ট্রাম্প।
তিনি আফসোস করে বলেন, ‘আমি ভারত-পাকিস্তান, সার্বিয়া-কসোভো, মিসর-ইথিওপিয়া, রাশিয়া-ইউক্রেন কিংবা ইসরায়েল-ইরান—কোনো ক্ষেত্রেই শান্তির জন্য নোবেল পাব না। তবে মানুষ জানে আমি কী করেছি, সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
‘শান্তির বার্তাবাহক’ হিসেবে প্রচারণা
ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজেকে একজন ‘শান্তির দূত’ হিসেবে উপস্থাপন করছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ইউক্রেন ও গাজা যুদ্ধ দ্রুত শেষ করবেন। তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর পাঁচ মাস পার হলেও উভয় সংঘাত এখনো অব্যাহত।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই কূটনৈতিক দাবিগুলো মূলত নির্বাচনী রাজনীতির অংশ হলেও, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার নাম নোবেল পুরস্কারের জন্য প্রস্তাব দেওয়াকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। এখন দেখার বিষয়, নোবেল কমিটি এই দাবিকে কীভাবে বিবেচনা করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *