দুর্ভোগ তাদের সবার প্রতি যারা সামনাসামনি দুর্ব্যবহার করে আর পেছনে নিন্দা করে।
পেছনে নিন্দার দুটো জিনিস। একটা হচ্ছে, গীবত। দুই নম্বর আরেকটা হচ্ছে, গসিপ, গুজব এবং মিথ্যা অপবাদ, পরচর্চা, পরনিন্দা।
এবং এই পরচর্চা পরনিন্দা মিথ্যায় ফেনায়িত হয়। এই যে পরনিন্দা, পরচর্চা, গসিপ। অ্যা শুনেছ…! কানকথা-এটা হচ্ছে নিজের আত্মার জন্যে ক্ষতিকর সবচেয়ে বড় জিনিস। যারা মহান হয়েছেন, বড় হয়েছেন তারা আসলে ছোটবেলায় এই শিক্ষা অনেকের জীবনে তারা পেয়েছেন।
ধরুন মাদার তেরেসা, যখন তিনি কিশোরী অ্যাগনেস, অর্থাৎ সন্ন্যাসী হন নি, তার বাড়ি সে আলবেনিয়ায় একদিন কিছু বান্ধবী বেড়াতে এসেছে। স্বাভাবিকভাবে বান্ধবীরা খোশগল্পে মেতে উঠেছে।
গল্পের এক পর্যায়ে তাদের আরেক বান্ধবীর ব্যাপারে পরচর্চা শুরু হয়ে গেল। সে সেখানে উপস্থিত ছিল না। সাধারণত পরচর্চা উপস্থিত থাকলে হয় না, পরচর্চা অনুপস্থিতিতে হয়। তো খুব পরচর্চা হচ্ছে।
কিছুক্ষণ পরে মাদার তেরেসার মা এসে ঘরের বাতি নিভিয়ে দিলেন। তো কিশোরী অ্যাগনেস প্রশ্ন করলেন মাকে, মা! তুমি বাতি নিভিয়ে দিলে কেন? তখন তার মা বললেন, তোমরা যে বিষয় আলাপ করছ সেখানে কি কোনো আলোর প্রয়োজন আছে?
খেয়াল করবেন! অর্থাৎ গীবত করার জন্যে, পরচর্চা করার জন্যে আলোর কোনো দরকার নাই। এবং কিশোরী অ্যাগনেস কথাটির মর্ম বুঝলেন। এরপর থেকে তিনি কারো ব্যাপারে মন্দ কথা বলার ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক থাকতেন।
আসলে যারা বড় হয়েছেন অনেকেরই ছোটবেলাতেই তাদের দৃষ্টিভঙ্গিটা গড়ে ওঠে তাদের পরিবার থেকে।
খ্রিষ্টান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস সাত-আট বছর আগে আমাদের দেশে এসেছিলেন। তো চার্চে যাজকদের উদ্দেশ্যে বললেন, যে সমাজে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠার পথে যত বাধা আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হলো পরচর্চা, পরনিন্দা যা কারো অনুপস্থিতিতে তার সম্পর্কে খারাপ কথা বললে অবিশ্বাস তৈরি হয়।
এবং তিনি বলেন যে, এই গসিপিং, গুজব এবং পরচর্চা পরনিন্দা এটা হচ্ছে a kind of terrorism. অর্থাৎ পরনিন্দা হচ্ছে আসলে একধরনের সন্ত্রাস।
এবং তিনি বললেন যে, পরচর্চা করার ইচ্ছে যদি জাগে তাহলে কী করো? নিজের জিহ্বায় কামড় দাও এতে হয়তো তোমার জিহ্বায় ব্যথা লাগবে তবুও অন্তত তোমার কোনো ভাই বা বোনের ক্ষতি করা থেকে তুমি বিরত থাকতে পারলে। এটা হচ্ছে পোপ ফ্রান্সিসের প্রেসক্রিপশন।
আসলে এই যে গসিপ গুজব ও মিথ্যা অপবাদ এই দুটোর মিশ্রণ হচ্ছে পরনিন্দা। পরনিন্দা আসলে একধরনের সন্ত্রাস ভারবাল সন্ত্রাস, মৌখিক সন্ত্রাস। মানসিক সন্ত্রাস হিসেবে এটা আমরা যদি বিবেচনা করি তাহলে আমরা অন্তত সন্ত্রাসী কেউ হতে চাই না।
অতএব এটা থেকে বাঁচার একটা আকুতি আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হতে পারে।
[প্রজ্ঞা জালালি ০২ নভেম্বর ২০২৪]