1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪১ পূর্বাহ্ন

পাঁচ কিশোরী এনেছে আন্তর্জাতিক পুরস্কার

  • সময় রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০২০
  • ৯৫৯ বার দেখা হয়েছে

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন ‘থাকব না কো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে।’ তবে বদ্ধ ঘরে থেকেও যে জগৎ দেখা যায়, প্রমাণ করেছে কলেজ পর্যায়ে পড়ুয়া পাঁচ কিশোরীর দল। মহামারির কারণে তাদের বেশির ভাগ সময় চার দেয়ালের মধ্যেই কাটছে। তাই বলে চিন্তা বা মননকে বেঁধে রাখা যায়নি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের স্বীকৃতি এনেছে তারা। টোয়েন্টিফোর আওয়ার রেস নামে হংকংভিত্তিক একটি যুব উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান আয়োজিত সিডিং ক্যাম্পেইন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী নির্বাচিত হয়েছে এই কিশোরীদের দল।

চূড়ান্ত পর্বে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারউইক, ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার মতো খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হারিয়ে বিজয়ী হিসেবে ২০ হাজার হংকং ডলার (দুই লাখ টাকার বেশি) পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা।

পাঁচ কিশোরীর এই দলের অন্যতম সদস্য সেবন্তী খন্দকার ও সেজাল রহমান পড়ছে ঢাকার সানবীমস স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণিতে। দ্য আগা খান স্কুলে একই বর্ষে পড়ছে রাঈদা সিদ্দিকী। অন্যদিকে সানিডেইল স্কুল থেকে সদ্য এ লেভেল সম্পন্ন করেছে রাইয়ান খান। আর রামিশা কাবির পড়াশোনা করছে হংকংয়ের এলপিসি ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড কলেজে।

রামিশা মূলত এই প্রতিযোগিতার ব্যাপারে তার বাংলাদেশের বন্ধুদের জানায়। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের ১৫ থেকে ২৩ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে। তাই তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে গত জুন মাসে প্রতিযোগিতার জন্য আবেদন করে। প্রতিযোগিতার প্রথম ধাপে তারা ‘রিলিফ’ নামে একটি সামাজিক ব্যবসা প্রকল্পের প্রস্তাব জমা দেয়। তাঁদের এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে শহুরে বাগান বা আরবান গার্ডেনিংকে জনপ্রিয় করে তোলা।

পুরো ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকার নার্সারিগুলোকে একটি অনলাইন সেবা মাধ্যমে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা তৈরি করেছে মেয়েরা। ক্রেতারা ঘরে বসেই পছন্দের গাছ অর্ডার করতে পারবেন, গাছ পৌঁছে যাবে দরজায়। গাছ ছাড়াও টব, সার, মাটিসহ গাছ লাগানোর বিভিন্ন উপকরণ মিলবে এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। এ ছাড়াও অনলাইনে মালির খোঁজ পাওয়া যাবে, যিনি বাসায় এসে গাছের সব ধরনের পরিচর্যা করবেন।

ভাবনাটা যে বিচারকদের পছন্দ হয়েছে, তা ফলাফলই বলে দিচ্ছে। প্রথম ধাপেই নির্বাচিত সেরা ১০ প্রকল্পের মধ্যে স্থান করে নেয় রিলিফ। পরে প্রতিযোগিতার নিয়মানুযায়ী ১০টি দল প্রায় ৬ থেকে ৮ সপ্তাহব্যাপী একটি ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে। এই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের ভাবনা আরও ঘষামাজা করতে আয়োজক সংস্থাটি প্রতিযোগীদের বিভিন্ন পরামর্শ দেয়। ধীরে ধীরে দাঁড়িয়ে যায় প্রকল্পের চূড়ান্ত কাঠামো। জোগাড়যন্ত্র, বিষয়বস্তু উন্নয়ন, উপস্থাপন—এসব নিয়ে কাজ করেন রাঈদা, সেজাল, সেবন্তী ও রামিশা। অন্যদিকে গ্রাফিকস ও ওয়েবসাইটের কাজের দায়িত্ব পড়ে রাইয়ানের কাঁধে। প্রকল্পের অংশ হিসেবে একটি ডেমো ওয়েবসাইট বানায় তারা। এরপর সব গুছিয়ে ভার্চ্যুয়াল প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বিচারকদের সামনে পুরো প্রকল্পটি তুলে ধরে বাংলাদেশের মেয়েরা।

বিজনেস মডেল বা মার্কেটিং—এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আমাদের তেমন অভিজ্ঞতা নেই। এই ধরনের বিষয়ে পরিবারের বড়দের কাছ থেকে আমরা সহায়তা নিয়েছি।

বিচারকদের রায়ের পাশাপাশি চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণের ক্ষেত্রে সাধারণের ভোটও আমলে নেওয়া হয়। ভোটাভুটির এই ধাপে উতরে যায় কিশোরী দল। ফলে বিচারকদের রায় আর পাবলিক ভোট মিলিয়ে ১৮ আগস্ট বিজয়ীর খেতাব পেয়ে যায় প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে উপস্থাপিত একমাত্র প্রকল্প—রিলিফ।

হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয় বিজয়ী দলটির সদস্যদের সঙ্গে। কেন এ ধরনের প্রকল্প নিয়ে কাজ করার কথা মাথায় এল—প্রশ্নের উত্তরে সেবন্তী বলল, ‘নগরায়ণের প্রভাবে দিন দিন শহর থেকে সবুজের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এমন বাস্তবতায় আমরা যদি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ঘরে ঘরে গাছ পৌঁছে দিতে পারি, তাহলে অনেকেই গাছ লাগানোয় আগ্রহী হয়ে উঠবেন।’

আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাটিতে তাঁদের প্রতিপক্ষ ছিল বিশ্বসেরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে প্রতিপক্ষ নিয়ে কখনই বাড়তি দুশ্চিন্তা করেনি তারা। প্রত্যেক সদস্য নিজেদের সেরাটা দেওয়ার মাধ্যমেই সাফল্য এসেছে বলে মনে করে রামিশা।

সেজালের মতে, এই অর্জনের পেছনে পরিবারের সদস্যদেরও বড় ভূমিকা রয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘বিজনেস মডেল বা মার্কেটিং—এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আমাদের তেমন অভিজ্ঞতা নেই। এই ধরনের বিষয়ে পরিবারের বড়দের কাছ থেকে আমরা সহায়তা নিয়েছি।’

রাইয়ান জানাল, একই প্রকল্প নিয়ে এর আগে গত মার্চে ‘প্রাইভেসি হ্যাকস ২০’ নামের একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল তারা। সে সময়ই মূলত কোডিং, ওয়েব ডিজাইন—এসব শেখা হয়েছিল। দেশীয় ওই হ্যাকাথনে প্রকল্পটির নমুনা বানিয়ে ‘বেস্ট কমিউনিটি অ্যান্ড বেস্ট ভিজ্যুয়াল ডিজাইন অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছিল দলটি।

দলের আরেক সদস্য রাঈদা জানাল, বর্তমানে পুরস্কারের অর্থ দিয়ে তারা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কাজ করছে। আগামী বছরের শুরুতে প্রকল্পের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে বলে তাদের প্রত্যাশা। সবার সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যতে রিলিফের কার্যক্রম দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব বলে মনে করে পাঁচ কিশোরী। নজরুলের কবিতার পঙ্‌ক্তি নিশ্চয়ই তাদের সাহস জোগাতে পারে—‘বিশ্বজগৎ দেখব আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে।’

 

সূত্র: প্রথম আলো

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com