পাবলো পিকাসো : সাফল্যের রহস্য!

আসলে আমাদের সমস্যা হয় যে আমরা নিজেদেরকে কোনো জবাবদিহিতার মধ্যে নিতে চাই না। আমরা একটা আরাম বলয়ে থাকতে চাই। খেয়াল খুশিমতো চলতে চাই।

আসলে খেয়াল-খুশি মতো চললেই যে কোথাও পৌঁছানো যায় না এটা আমরা বুঝি না। খেয়াল খুশি অনুসারে চললে কেউ কোথাও পৌঁছাতে পারে না।

পিকাসো এবং লেলিনের বিখ্যাত হবার কারণ- পিওর ভাবনা!

পিকাসো এত বড় শিল্পী কেন হতে পেরেছেন? লেলিন একটা দেশের, একটা বিপ্লবের নায়ক হয়ে গেলেন কীভাবে? তারা ভাবনাতে কোনো ভেজাল ঢোকান নাই। ভাবনাকে ভেজাল করেন নাই। তাদের ভাবনাটা খুব পিওর ছিল।

এবং ভাবতে ভাবতে তারা ডিকোহেরেন্স লেভেলে চলে গেছেন। ভাবনাটা তাদের বিশ্বাস এবং অস্তিত্বের অংশ হয়ে গেছে। অর্থাৎ ঐ ভাবনা ছাড়া তাকে আর কল্পনা করা যায় না। যে কারণে পিকাসোর উক্তিটা ছিল যে, মুসলমানরা যেভাবে মসজিদে দরজার বাইরে জুতা রেখে মসজিদে ঢোকে, আমি আমার দেহটাকে স্টুডিওর বাইরে রেখে মনটা নিয়ে শুধু ঢুকি। অর্থাৎ আমার হার্ট, আমার মন, আমার হৃদয় সবকিছু হচ্ছে আমার ক্যানভাস এবং যে কারণে উনি বিখ্যাত হয়েছেন।

‘কুচ কার দেখানা হ্যায়’ ভাবনাটাই আপনাকে শেষ করার জন্যে যথেষ্ট!

আমরা সবাই বিখ্যাত হতে চাই। চাই যে সবাই আমাকে চিনুক, আমাকে জানুক কিন্তু আমাদের অবস্থা ঐ বিজ্ঞাপনের মতো। কুচ কার দেখানা হ্যায়, দেখানা হ্যায় না কুচ কারনা হ্যায়। যখনই আপনি দেখানোর জন্যে যাবেন যে কুচ কার দেখানা হ্যায়। ইউ আর এ গন কেস। হাঁ কুচ কারনা হ্যায়। কিছু করার আছে। করার জন্যে জীবন উৎসর্গ করেন মানুষ এমনি দেখবে।

তো অতএব মাইন্ডটা কীভাবে সেট করবেন এটা হচ্ছে ইম্পর্টেন্ট। জীবিকা কখনো জীবনের লক্ষ্য হতে পারে না। জীবিকাকে জীবনের লক্ষ্য করবেন আপনার জীবন কেরানির জীবন হবে এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।

লক্ষ্য হচ্ছে কাজ, যে আপনি কোন কাজটা পারেন? সেই কাজটাকে সবচেয়ে ভালোভাবে করা। এবং লক্ষ্য হচ্ছে যে আমি অন্যের প্রয়োজন কতটুকু পূরণ করতে পারি? আপনি যদি অন্যের প্রয়োজন পূরণ করতে না পারেন, অন্যের কাছে আপনি ইউজলেস।

মানুষ কার কাছে যায়? যাকে মনে করে যে এই লোকটা আমার জন্যে কিছু করতে পারবে। এই করাটা যে সবসময় আর্থিক তা না। আচ্ছা ঐখানে যাই লোকটা আমাকে একটু সান্ত্বনা দিতে পারবে। ওখানে যাই লোকটা আমাকে একটা বুদ্ধি দিতে পারবে, আমাকে একটা পরামর্শ দিতে পারবে। ওখানে কিছুক্ষণ বসে থাকলে এট লিস্ট আমার ভালো লাগবে, সেখানে আপনি যাবেন।

যেখানে গেলে আপনার খারাপ লাগবে সেখানে কি আপনি যাবেন? কখনো যাবেন না। ভালো লাগবে কখন? যখন আপনার ভেতরে ভালো থাকবে তখন আপনাকে দেখলে ভালো লাগবে, আপনার কাছে এলে ভালো লাগবে।

ভাবনাটাকে সেট করতে পারি না কেন?

তো আসলে জীবনের এই যে মাইন্ডসেট, এই মাইন্ডসেটটা হচ্ছে খুব ইম্পর্টেন্ট এবং মাইন্ডসেট আমরা করতে পারি না কেন? ভাবতে পারি কিন্তু ভাবনাটাকে সেট করতে পারি না।

১. লক্ষ্যের ভাবনা থেকে দূরে সরে যাওয়া

কেন পারি না? দুটো কারণ।

এক হচ্ছে যে, ভাবনা, যে লক্ষ্য যেটাকে আমি স্থির করলাম এটার বিপরীত কাজে আমি প্রতিনিয়ত জড়িয়ে পড়ি। আমি ভাবনা থেকে দূরে সরে যাই।

২. শর্টকাটে পাওয়ার মানসিকতা

দুই হচ্ছে ঐ যে ইনস্ট্যান্ট পাওয়ার মানসিকতা, শর্টকাট। আসলে বড় পাওয়ার জন্যে শর্টকাট বলে কিছু নাই। যারাই বড় কিছু পেয়েছেন, জীবনের ক্ষেত্র-শিল্প বলেন, সংগীত বলেন, সাহিত্য বলেন, অর্থ বলেন, বিত্ত বলেন, রাজনীতি বলেন, ক্ষমতা বলেন সহজে কিছু পাওয়া যায় না। নাথিং।

যে পাওয়ার পেছনে শ্রম, মেহনত ও কষ্ট থাকে সেটাই অর্জন হয়!

সহজে যা পাওয়া যায় সহজে তা হারিয়ে যায় আরকি। যে পাওয়ার পেছনে শ্রম থাকে, মেহনত থাকে, কষ্ট থাকে সেটা হারায় না। সেটা হারাতে পারে না কখনো এবং সেটাই অর্জন হয়।

মনোরাজ্যে আমি জয়ী হয়েছি, আমি অর্জন করেছি, বাস্তবে অর্জন এখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। আজ কাল পরশু, পাঁচ বছর, দশ বছর, ১৫ বছর, ২০ বছর, ২৫ বছর, ৩০ বছর কোনো বিষয় না। আমি প্রাজ্ঞ আমি দক্ষ, নিজের কাজ সবচেয়ে ভালোভাবে করি। এখন থেকে নিজের কাজ সবচেয়ে ভালোভাবে করি এটা হচ্ছে আপনার অঙ্গীকার। এটা আপনার প্রমিজ।

একজন যখন বলে যে, আমি আমার কাজ সবচেয়ে ভালোভাবে করি। তখন এটা একটা প্রমিজ, এটা একটা অঙ্গীকার এবং এই অঙ্গীকারে অটল থাকবেন। মানুষ আপনাকে স্যালুট করবে।

[প্রজ্ঞা জালালি, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩]