লেখক, (আরমানুল ইসলাম ইমন)
নারীকে স্নিগ্ধ, কোমল, শালীন, নম্র বলে বলে নারীর পায়ে শেকল পড়িয়ে রাখার প্রবণতা থেকে প্রতিটি পুরুষের সরে আসা উচিৎ।
নিজেরাই নারীকে ঘরের ভেতর পুতুলের মতন সাজিয়ে রেখে; বন্ধু আড্ডায়, সেমিনারে, তর্কে বিতর্কে নারীকে অদক্ষ প্রমান করবার যে চেষ্টাটা করা হয়, এইসব পুরুষতান্ত্রিক আচরন কি কোনদিনই হ্রাস পাবে?
নারীবাদীতা নয়; নারীকে তার নিজ ইচ্ছায়, আগ্রহে, কৌতুহলে, আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য, নিজের কর্মশক্তি প্রমানের জন্য পথে নামতে হবে।
নারীকে কেবল রান্নার রেসিপি জানলেই চলবেনা। তাকে ধ্যানে, জ্ঞ্যানে, বিজ্ঞানে, শিক্ষায়, আচরনে, সাহিত্যে, মাঠে ঘাটে, জলে স্থলে, অন্তরীক্ষে পুরুষের সমকক্ষ হয়ে চলবার মতন মনোবল তৈরী করতে হবে।
নারীকে জানতে হবে, ক্রিকেট খেলার পিচ কত ফিট হয়। প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপ কোন দেশ নিয়েছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শত্রু পক্ষ আর মিত্র পক্ষ দেশগুলোর তালিকা। নারীকে জানতে হবে মঙ্গল গ্রহের জলবায়ুতে হাইড্রোজেনের পরিমান কত শতাংশ। নারীকে জানতে হবে, ধর্ম সম্পর্কে। কর্ম সম্পর্কে। নারীকে জানতে হবে, বাংলাদেশের জনগনের মাথাপিছু আয় কত। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কত শতাংশ। ব্যাংকের ঋনের উপর সুদের হার কত। নারীকে জানতে হবে সাইক্লোন আর সুনামির পার্থক্য কি। নারীকে জানতে হবে- গনতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, রাজনীতি, উদারনীতি, অর্থনীতি, ব্যবসায়িক মতবাদ, মুদ্রাস্ফীতি, চাহিদার সোপান তত্ত্ব সম্পর্কে।
নারীকে সেই আগের দিনকার নারী হলে চলবেনা। যে ঐতিহ্যগত শেকল তাদের পায়ে পড়ানো আছে, সেই শেকল ভাংবার দায়িত্বটাও তাদেরই।
তরকারিতে লবন কম বা বেশি দেওয়ার মেজারমেন্ট ঠিক রাখাটাও একটা গুন। তবে এই সামান্য গুনে আটকে থেকে গর্ববোধ করাটা গুনের বিষয় নয়। এই সিমপ্যাথি মাখা গুন থেকে বের হয়ে স্ট্রাগল ও বিশ্লেষনের রাস্তায় হাটতে হবে।
নারীবাদী হয়ে শোয়ার স্বাধীনতা অর্জন করা, নগ্ন হয়ে পথে পথে ঘুরবার অধিকার আদায় করা, বহুগামিতাকে প্রমোট করার মতন নারী হইয়ো না। “পুরুষ করতে পারলে, আমরা কেন পারবোনা?” এটি একটি ছোটলোকি প্রবাদ৷ পুরুষ সিগারেট খায়, আমরাও খাবো; এটি পুরুষের সমান হওয়ার কোন বিষয় নয়। সিগারেট পুরুষের জন্য যেমন খারাপ, নারীর জন্যও খারাপ। একটা খারাপকে অন্য একটা খারাপ দিয়ে ঢেকে দেওয়াটা অপরাধ। এই অপরাধটা যাতে না হয়।
প্রতিটি নারী আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠুক, এটাই কাম্য।
পুরুষের সাথে তুলনা নয়; বরং তারা ধ্যানে এবং জ্ঞ্যানে পুরুষকেও অনেকখানি ছাড়িয়ে যাক। নারী এবং পুরুষ কেউ কারো শত্রুপক্ষ নয়। সবাইকেই সবার লাগে। শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক প্রতিটি প্রাঙ্গনেই প্রত্যেককে প্রত্যেকের প্রয়োজন আছে। তবে, নারীর এগিয়ে যাওয়ার পথটা কঠিন। ঐতিহ্যগত ভাবে নারী যে দেয়ালের ভেতর আটকে আছে, সেটা থেকে বের হওয়ার জন্য অনেক সংগ্রাম প্রয়োজন।
নারী এগিয়ে যাক। নারী দিবসে নারী অগ্রগতি, নারীর উন্নয়ন ও সামাজিক অবস্থান সৃষ্টির বাইরে আর কিছুই চাওয়ার নেই। পুরুষের সাথে তুলনা নয়; প্রতিটি নারী একেকটি আলাদা সত্ত্বা হয়ে উঠুক।